শিশুর জলমাথা ও মেরুদণ্ডের সমস্যা

অন্তঃসত্ত্বা নারীর ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার গ্রহণ স্পাইনা বিফিডাসহ অন্যান্য জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। 

শিশুপ্রতীকী ছবি

ছয় মাসের একটি শিশু। জন্মের পর থেকে মাথাটা ক্রমেই বড় হয়ে বিরাট আকার ধারণ করেছে। শিশুটিকে মা–বাবা সব সময় লুকিয়ে রাখেন, মাথা ঢেকে রাখেন। শিশুটির রোগের নাম হাইড্রোকেফালাস বা জলমাথা। মানে মস্তিষ্কের গহ্বর বা ভেনট্রিকলগুলোতে অতিরিক্ত পানি জমা রোগ। 

আরেকটি শিশুর পিঠে বিরাট টিউমার, মলমূত্রের নিয়ন্ত্রণ নেই। অস্বাভাবিক শিশুটিকে মা–বাবা কাছে রাখতে রাজি হননি। তাই দিয়ে দেন একটি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে। শিশুটির মেরুদণ্ড বা স্পাইন ত্রুটিযুক্ত। এর নাম স্পাইনা বিফিডা। 

দেশে এ দুই ধরনের ত্রুটিযুক্ত নবজাতকের সংখ্যা অনেক। বেশির ভাগ শিশুরই পরিণতি ওই রকম। কিন্তু একটু সচেতন হলে এমন সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়।

চিকিৎসা

শিশুর জলমাথা ও মেরুদণ্ডের রোগের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। জলমাথার একমাত্র চিকিৎসা অস্ত্রোপচার। সান্ট অপারেশন বা ইটিভি, যে অস্ত্রোপচারই করা হোক, জীবনের যেকোনো পর্যায়ে তা অকার্যকর হয়ে পড়তে পারে। শিশুটির জীবনে একাধিকবার অস্ত্রোপচার করা লাগতে পারে। আবার যথাসময়ে চিকিৎসা না করা হলে শিশুটি শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধিতার সম্মুখীন হবে।

স্পাইনা বিফিডা আরও ভয়াবহ জন্মরোগ। চিকিৎসার পরও অনেকে আজীবন হুইলচেয়ারে জীবন কাটাতে বাধ্য হন। কারও কারও সঙ্গে জলমাথা, মুগুর পা, ছিদ্রযুক্ত হার্টের সমস্যা থাকে। 

প্রতিরোধ

● যেহেতু এসব রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল ও জটিল, তাই প্রতিরোধই উত্তম। উন্নত দেশগুলো, এমনকি আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের মতো দেশ খাদ্যে ফলিক অ্যাসিড যোগ করে এ রোগের হার ৭০–এ কমিয়ে এনেছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীর ফলিক অ্যাসিডযুক্ত খাবার গ্রহণ স্পাইনা বিফিডাসহ অন্যান্য জন্মগত ত্রুটি, যেমন তালুকাটা, ঠোঁটকাটা,মুগুর পা, হার্টে ছিদ্রও প্রতিরোধ করা সম্ভব। 

● গর্ভধারণের আগে থেকেই মাকে ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট দিতে হবে ও দৈনন্দিন খাবারে ফলিক অ্যাসিড যুক্ত করতে হবে বা ফর্টিফায়েড করতে হবে।

● প্রতিরোধের উপায়টি বেশ সহজ। তেমন খরচ নেই, কিন্তু অভাব সদিচ্ছা ও সচেতনতার। এ বিষয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের এ জটিল রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতিবছর ২৫ অক্টোবর বিশ্ব জলমাথা ও স্পাইনা বিফিডা দিবস পালিত হয়। 

দেশে সব অঞ্চল ও সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের রোগের চিকিৎসা অপ্রতুল। তাই এমন রোগে আক্রান্ত শিশুদের সেবা দিতে ‘বাংলাদেশ হাইড্রোকেফালাস অ্যান্ড স্পাইনা বিফিডা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ কাজ করছে। তবে এ রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সরকার, জনগণসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

রেজিনা হামিদ, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা