নাক ডাকা উপশমের ঘরোয়া উপায়
‘দাদুর নাকি ছিল না মা অমন বাদুড় নাক।
ঘুম দিলে ওই সাধের নাকে বাজত সাতটা শাঁখ।
দিদিমা তাই থ্যাবড়া মেরে ধ্যাবড়া করেছেন!’
বেশ করেছেন দিদিমা। খাঁদু দাদুর অমন সাত শাঁখের নাক ডাকার শব্দ কাঁহাতক আর সওয়া যায়! কাজী নজরুলের ‘খাঁদু দাদু’ ছড়ায় নাক ডাকার এমনই বিষম বিড়ম্বনার কথা উঠে এসেছে। সত্যিই এ বড় যন্ত্রণার। নিজের ঘুমের বারোটা তো বাজেই, আশপাশে যাঁরা থাকেন, তাঁদেরও ঘুম-ব্যাঘাতে মেজাজ উঠে যায় সপ্তমে। প্রাকৃতিক কিছু ঘরোয়া চিকিৎসায় এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। ‘রিডার্স ডাইজেস্ট’ সাময়িকীর স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘দি হেলদি ডটকম’ তেমনই কিছু উপায় বাতলে দিয়েছে।
টেনিস বল নিয়ে ঘুমান
টেনিস বল সঙ্গে নিয়ে ঘুম! না, অবাক হওয়ার কিছু নেই। যাঁদের নাক ডাকার সমস্যা আছে, তাদের কাত হয়ে শোয়া ভালো। চিত হয়ে শুলে নাক ডাকা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। চিত হয়ে শোয়া এড়াতে এই ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ঘুমানোর সময় পায়জামার কোমরের কাছে কিংবা শার্ট বা টি–শার্টের ভেতর পিঠের নিচে একটি টেনিস বল গুঁজে রাখুন। এভাবে চিত হওয়া থেকে মুক্তি পাবেন। মুক্তি পেতে পারেন নাক ডাকার যন্ত্রণা থেকেও।
চাই আরামদায়ক বিছানা-বালিশ
নাক ডাকা থেকে মুক্তি পেতে ঘুমের সরঞ্জাম গুরুত্বপূর্ণ। বিছানা-বালিশ একই সঙ্গে পরিচ্ছন্ন, আরামদায়ক ও নিদ্রাসহায়ক হওয়া জরুরি। ময়লাযুক্ত পরিবেশ নাকের পেশিতে সংক্রমণ ঘটায়। আগেই বলা হয়েছে, নাক ডাকার সমস্যা আছে যাঁদের, তাঁদের কাত হয়ে শোয়া ভালো। বিছানা এমনভাবে সাজান, যাতে ঘুমানোর সময় শরীর কাত হয়ে থাকে। বিছানার সমতল থেকে মাথা অন্তত চার ইঞ্চি ওপরে রাখবেন। এ ক্ষেত্রে ওয়েজ পিলো (একটু হেলান দেওয়া যায়, এমন বালিশ) ব্যবহার করতে পারেন।
ব্যবহার করতে পারেন মাউথপিস
বাধাহীন শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য শ্বাসনালি খোলা থাকা জরুরি। এ ক্ষেত্রে চোয়ালের পেশির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য ঘুমের সময় মাউথপিস (একধরনের যন্ত্র) ব্যবহার করতে পারেন। এটি চোয়ালকে সামনের দিকে রাখে। ফলে চোয়াল থাকে খোলা। এটি কিনতে পাওয়া যায়। আবার কোনো দন্তরোগ বিশেষজ্ঞকে দিয়ে এটি বানিয়েও নিতে পারেন।
সমাধান হতে পারে ন্যাসাল স্ট্রিপে
ন্যাসাল স্ট্রিপ নাকের বন্ধভাবকে শিথিল করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এটি নাক ডাকা সমস্যা দূর করায় বেশ কার্যকর।
ঘুমের সময় বাজুক হালকা সুর
আমেরিকান স্লিপ অ্যান্ড ব্রেদিং একাডেমির প্রেসিডেন্ট কেন্ট স্মিথের মতে, ঘুমের সময় হালকা সংগীত যেমন সুনিদ্রা নিশ্চিত করে, তেমনি নাক ডাকার সমস্যাও দূর করতে পারে। তিনি বলেন, সাধারণত গলার পেছনের নরম মাংসপেশির কারণে নাক ডাকার সমস্যা হয়। শান্ত সংগীত বা যন্ত্রের সুর মনকে উদ্দীপ্ত করে। সেই উদ্দীপনা নরম মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে।
সাধারণ কিছু নির্দেশনা
নাক ডাকা থেকে মুক্তি পেতে সাধারণ কিছু নির্দেশনা আছে, যা মেনে চলতে হবে।
• দেহের অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।
• বদলাতে হবে শোয়ার ভঙ্গি।
• বদলে নিন খাদ্যাভ্যাস। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাবেন না।
• মদ্য পান ও ধূমপান এড়িয়ে চলুন।
• রাতে ঘুমানোর আগে চা বা কফি পান করবেন না।
• পর্যাপ্ত পানি পান করবেন।
• ধুলাবালু এড়িয়ে চলবেন।
দি হেলদি ডটকম অবলম্বনে
কবীর হোসাইন