বর্তমানে বাদাম খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে সমাজে। বেশির ভাগ মা মনে করেন যে বাদাম বাচ্চাদের জন্য একটি উৎকৃষ্ট খাবার। অনেকে আবার চার-পাঁচ ধরনের বাদাম একসঙ্গে গুঁড়া করে খাওয়ান। এ ছাড়া আমরা সাধারণত সুজির হালুয়া, সাগু বা সিরিয়ালের মধ্যেও বাদাম মিশিয়ে দিই।
এটা ঠিক যে বাদাম আমিষের বেশ ভালো উৎস। তবে এ–ও ঠিক, বাদাম বেশ দামি খাবার। যা হয়তো সবার পক্ষে কেনা সম্ভব না। দামি খাবার মানেই যে সেটা সবচেয়ে ভালো, তা কিন্তু নয়। আবার সব খাবার সব শিশুর জন্য ভালো না–ও হতে পারে।
বাদাম মূলত প্রোটিনজাতীয় খাবার। বাদাম থেকে আমরা প্রোটিনের পাশাপাশি অনেক ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলও পেয়ে থাকি। কিন্তু বাদামের প্রোটিন হচ্ছে দ্বিতীয় শ্রেণির প্রোটিন। এতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে না। বাদামের প্রোটিনের চেয়ে ডিম বা মাছ-মাংসের প্রোটিন অনেক উন্নত মানের, যা প্রথম শ্রেণির প্রোটিন।
বাদামে যে ভিটামিন ও মিনারেল আছে, সেগুলোও আমরা প্রায় সব ধরনের শাকসবজি ও ফলমূল থেকে পেতে পারি। আবার বাদাম ক্যালসিয়ামের খুব ভালো উৎস। অন্যদিকে দুধও ক্যালসিয়ামের খুব ভালো উৎস। আমরা বাদামের ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য ভিটামিন, মিনারেলগুলো দুধ থেকেই পেতে পারি। আর বাচ্চাদের বাদামের চেয়ে দুধ খাওয়ানো সহজ।
তবে বাদামে কিছু গুড ফ্যাট থাকে, যেটা অনেক উপকারী। এই গুড ফ্যাট আমরা মাছ থেকেও পেতে পারি। বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ বা যেকোনো তৈলাক্ত মাছ থেকে। সে ক্ষেত্রে বাচ্চা ফার্স্ট ক্লাস প্রোটিনের (প্রথম শ্রেণির আমিষ) পাশাপাশি গুড ফ্যাট (ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড) ও অন্যান্য ভিটামিন, মিনারেল পাবে।
ছয় মাস বয়সের পরই বাচ্চার খাবারে বাদাম দিলে কিছু বিপত্তি ঘটতে পারে। বাদাম গুঁড়া করে দিলেও কিছু দানা থাকতে পারে, যা বাচ্চার খাদ্যনালিতে আটকে যেতে পারে বা দুর্ঘটনাবশত ফুসফুসনালিতে প্রবেশ করতে পারে। তাই বাচ্চা যখন খাবার ভালোমতো চিবিয়ে খাওয়া শিখবে, তখন আপনি স্ন্যাক্স হিসেবে দিনে একবার বাদাম খাওয়াতে পারেন। বাদাম চিবিয়ে খেলে বাচ্চা বাদাম থেকে পরিপূর্ণ পুষ্টি পাবে।
কোনো কোনো শিশু অ্যাটপিক বা অ্যালার্জিপ্রবণ থাকে। বাদাম তাদের অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। তাই অ্যালার্জি থাকলে বাদাম খাওয়ানোর বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।
মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল