আত্মীয়দের কাছ থেকে রক্ত নেওয়া কি ভালো
রক্তশূন্যতা হলে বা বিভিন্ন প্রয়োজনে রক্ত বা রক্তের উপাদান সঞ্চালন করার প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে আরেকজনের শরীরের রক্ত নিজের শরীরে দিতে হয়। প্রয়োজনীয় সময়ে নিকটাত্মীয়রাই রক্তদান করতে আগ্রহী হন। অনেকে বাইরের মানুষের কাছ থেকে নেওয়ার চেয়ে আত্মীয়ের কাছ থেকে রক্ত নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাতে কি স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে? সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে কয়েকটি কারণে নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে রক্ত না নেওয়াই উত্তম। রক্ত প্রদানকারী যে–ই হোক, প্রথমত দেখে নিতে হবে যিনি রক্ত প্রদান করছেন, তিনি শারীরিকভাবে রক্ত প্রদান করতে সক্ষম কি না বা তাঁর কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কি না। প্রদেয় রক্তের রক্তের গ্রুপ ও ক্রস ম্যাচিং করে নিশ্চিত করতে হয়। রক্ত সঞ্চালনে যেসব সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, সেগুলো স্ক্রিনিং করে নিতে হবে।
নিকটাত্মীয় কারা?
নিকটাত্মীয় বলতে মেডিকেলের ভাষায় বলে ফার্স্ট ডিগ্রি রিলেটিভ। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত মা–বাবা, আপন ভাই–বোন ও নিজের ছেলে–মেয়ে। তাঁদের কাছ থেকে রক্ত নেওয়া উচিত নয়। এ ছাড়া আপন চাচা, মামা, ফুফু ও খালা তাঁদের কাছ থেকেও রক্ত না নেওয়াই ভালো।
নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে রক্ত সঞ্চালনে ঝুঁকি কোথায়?
যে ঝুঁকিটির কারণে এখন নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে রক্ত সঞ্চালন নিরুৎসাহিত করা হয়, সেটি হলো ট্রান্সফিউশন–অ্যাসোসিয়েটেড গ্রাফট–ভার্সাস–হোস্ট ডিজিজ। একে সংক্ষেপে বলা হয় টিএ–জিভিএইচডি। এটি রক্ত পরিসঞ্চালনের কারণে বিলম্বিত একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এটির হার অনেক কম (শূন্য দশমিক ১ থেকে ১ শতাংশ)। হার অনেক কম হলেও প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
এটি কেন হয়?
দাতার সঞ্চালিত রক্তের লিম্ফোসাইট গ্রহীতার শরীরের টিস্যু ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বাইরের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং আক্রমণ করে। দাতার জিনগত একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য এইচএলএ ও গ্রহীতার এইচএলএ যদি মিলে যায়, সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। নিকটাত্মীয়দের মধ্যে এই এইচএলএ মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, এ কারণে ট্রান্সফিউশন–অ্যাসোসিয়েটেড গ্রাফট–ভার্সাস–হোস্ট ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। যাকে রক্ত দেওয়া হচ্ছে, তাঁর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হলে জটিলতা বেশি হয়।
উপসর্গ ও লক্ষণ
রক্ত সঞ্চালনের ৪ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে উপসর্গ ও লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। শুরুতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জ্বর দেখা যায়। রক্তগ্রহীতার শরীরে প্রথমে লাল লাল চাকা ও দানা দেখা দেয়। এরপর পাতলা পায়খানা হয় অনেকের। এ ছাড়া রক্তমিশ্রিত মল যেতে পারে ও পেটে তীব্র ব্যথা হয়। বমির ভাব বা বমি হতে পারে। জন্ডিসও হতে পারে। রক্ত পরীক্ষা করলে রক্তকোষের পরিমাণ কম দেখা যায় অনেক সময়।
করণীয়
রক্ত সঞ্চালনের পর এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে ও নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে রক্ত প্রদানের ইতিহাস থাকলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিলম্ব করলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
স্ত্রীর বা স্বামীর কাছ থেকে রক্ত নেওয়া যাবে কি?
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে যেহেতু স্বামী বা স্ত্রী সাধারণত রক্তের সম্পর্কিত নন, সে ক্ষেত্রে তাঁরা পরস্পরকে রক্তদান করতে পারেন কি না। এ ক্ষেত্রে যেটি বলা আছে, এইচএলএ যদি মিলে যায়, তাহলে সমস্যা হতে পারে। যাকে রক্ত দেওয়া হচ্ছে, তাঁর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল হলেও সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সবকিছু ঠিক থাকলে জীবনসঙ্গী রক্তদান করতে পারবেন, তবে বিকল্প থাকলে না নেওয়া ভালো।
প্রতিরোধ
রক্ত একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার (গামা রেডিয়েশন) মাধ্যমে পরিশোধিত করে আক্রমণকারী লিম্ফোসাইট ধ্বংসের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন করলে এ ধরনের ঝুঁকি কমে যায়। তবে এ ধরনের প্রক্রিয়া করার সুবিধা সব জায়গায় এখনো গড়ে ওঠেনি।
ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা