জ্বরঠোসা হলে কী করবেন
ঠান্ডা–গরম এই আবহাওয়ায় এখন ঘরে ঘরে জ্বর। জ্বরের সঙ্গে বা জ্বর ছেড়ে গেলে কখনো কখনো ঠোঁটের কোণে যন্ত্রণাদায়ক ফুসকুড়ি দেখা দেয়, যাকে আমরা বলি জ্বরঠোসা বা জ্বর ঠুঁটো। চিকিৎসাবিজ্ঞানে একে বলা হয় কোল্ড সোর বা ফিভার ব্লিস্টার।
জ্বরঠোসার লক্ষণ
ঠোঁটের চারপাশে টনটনে ব্যথা অথবা ঝিমঝিম ভাব।
ফোসকা বা ঠোসা ওঠা। এগুলোর ভেতরে পানির মতো তরল থাকে। ফোসকাগুলো ফেটে গিয়ে ওপরে আস্তে আস্তে চলটা পড়ে।
কখনো কখনো বমি ভাব কিংবা বমি হওয়া; সঙ্গে থাকতে পারে মাথাব্যথা।
কিছু খেতে বা গিলতে অসুবিধা।
জ্বরঠোসা ওঠার কারণ
জ্বরঠোসা মূলত হারপিস সিপ্লেক্স (এইচএসভি১) ভাইরাসের সংক্রমণে হয়ে থাকে। হারপিস ভাইরাস আমাদের শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কোনো কারণে শরীর দুর্বল হয়ে গেলে বা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে পুনরায় এ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়।
শারীরিক অসুস্থতা, অত্যধিক মানসিক বা শারীরিক স্ট্রেস, ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতি (ভিটামিন বি, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড) থেকেও দেখা দিতে পারে জ্বরঠোসা।
জ্বরঠোসার ঘরোয়া চিকিৎসা
আক্রান্ত স্থানে কোল্ড কম্প্রেসন ও বরফ লাগালে ফোলা কমে যেতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আক্রান্ত স্থানে অ্যান্টিভাইরাস ক্রিম লাগানো যেতে পারে।
লবণ ও কুসুমগরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে প্রদাহ কমে যায়। ঘায়ের চারপাশ পরিষ্কার করতেও এটা সাহায্য করে।
বেকিং সোডা ও পানি দিয়ে পেস্ট তৈরি করে সরাসরি মুখের ঘাগুলোতে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
নারকেল তেল অথবা শর্ষের তেল আক্রান্ত স্থানে লাগালে ব্যথা কমে।
মধুতে প্রাকৃতিক অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দিনে কয়েকবার মুখের ঘাগুলোতে অল্প পরিমাণে প্রয়োগ নিরাময়ে সাহায্য করে।
মুখের ঘাগুলোতে অ্যালোভেরা জেল প্রয়োগ করলে ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত মসলাযুক্ত, ঝাল, অ্যাসিডিটি আছে, এমন খাবার (যেমন জাম্বুরা, টমেটো, কমলা, মাল্টা) কয়েক দিনের জন্য পরিহার করতে হবে। ব্যথার কারণে অনেকে পানি খাওয়া কমিয়ে দেন, এটা করা যাবে না। পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে।
জ্বরঠোসার ওপর ও আশপাশের ত্বকে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে হবে। তাহলে ত্বক শুকিয়ে আর ফাটবে না।
রোদে বের হলে সানস্ক্রিন, বিশেষ করে ঠোঁটে সানব্লক লিপ বাম ব্যবহার করতে হবে।
বারবার যাঁরা জ্বরঠোসায় আক্রান্ত হন, তাঁদের অতিরিক্ত মানসিক চাপ পরিহার করতে হবে এবং সুষম খাবার গ্রহণের দিকে নজর দিতে হবে।
জ্বরঠোসার প্রতিরোধ
জ্বরঠোসা যেহেতু ছোঁয়াচে, তাই সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত পানির গ্লাস, চামচ, রেজার, লিপজেল, কসমেটিক সামগ্রী, তোয়ালে, টিস্যু শেয়ার করা যাবে না।
আক্রান্ত অবস্থায় ছোট বাচ্চাদের তো নয়ই, কাউকেই চুমু দেওয়া যাবে না।
ঠোসা স্পর্শ করলে সঙ্গে সঙ্গে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকলে, যেমন গর্ভবতী নারী, ক্যানসার আক্রান্ত রোগী, ডায়াবেটিসের রোগী, কেমোথেরাপি গ্রহণকারী অথবা শিশু।
চোখের কাছাকাছি স্থানে জ্বরঠোসা হলে।
জ্বরঠোসা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে।
১০ দিনের বেশি ধরে আক্রান্ত হলে।
বছরে ছয়বারের বেশি জ্বরঠোসায় আক্রান্ত হলে।
ডা. নওসাবাহ্ নূর, সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন, পপুলার মেডিকেল কলেজ