শিশুর হ্যান্ড–ফুট–মাউথ রোগ

শিশুদের হ্যান্ড-ফুট-মাউথ রোগের অন্যতম কারণ আরএনএ ভাইরাস। এর মধ্যে ককসাকি-এ ১৬, এন্টারোভাইরাস-এ ৭১ ও কিছু ইকো ভাইরাস অন্যতম। রোগটি খুবই ছোঁয়াচে। তবে জটিলতা নেই বললেই চলে। ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। সংক্রমিত শিশুদের তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়। রোগটি একাধিকবার হতে পারে।

কীভাবে ছড়ায়

ক. রোগীর শরীরের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ; খ. আক্রান্তের পর ফোসকা থেকে নির্গত তরল পদার্থ; গ. হাঁচি ও কাশির ‘ড্রপলেট’ এবং ঘ. মলের মাধ্যমে। একটি শিশু অন্য আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শে এসে সংক্রমিত হয়। এর কোনো টিকাও নেই।

সাধারণত এই রোগ তিন থেকে ছয় দিন অথবা এক সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে অসুখটি সেরে যায়। সাধারণত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বর্ষার সময় এই রোগের প্রকোপ বাড়ে। এ ছাড়া শীতের শেষে ও বসন্তে এ রোগ দেখা যায়।

শিশু
প্রতীকী ছবি

লক্ষণ কী

প্রাথমিক উপসর্গ সাধারণ ভাইরাল জ্বরের মতোই। জ্বর শুরুর এক বা দুই দিন পরে মুখের ভেতরে, হাতে-পায়ে বা নিতম্বে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে—যন্ত্রণাদায়ক ফোসকা, তবে চুলকায় না। শিশুর ত্বকের রঙের ওপর নির্ভর করে ফুসকুড়ি লাল, সাদা, ধূসর বা ছোট ছোট দাগের মতো দেখা যেতে পারে। ফুসকুড়ি সাধারণত জ্বর হওয়ার তিন থেকে পাঁচ দিন পর দেখা যায়।

জলবসন্তের সঙ্গে পার্থক্য

অনেক অভিভাবকই উপসর্গ দেখে চিকেন পক্সের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। জলবসন্তে জ্বরের সঙ্গে শরীরে তীব্র ব্যথা হয়। মাথাব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, হালকা পেটব্যথা থাকে। র‌্যাশ শরীরের যেকোনো স্থানে হতে পারে। জলবসন্তের ফোসকায় তরল থাকে। সারা শরীরে একই ধরনের ফোসকা, যা ফুলে ওঠে ও একপর্যায়ে ফেটে যায়।

চিকিৎসা

এই রোগে শিশুকে স্যুপ, প্রচুর পানি ও নরম খাবার দিতে হবে। জ্বর ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল দেওয়া যায়। চুলকানির জন্য অ্যান্টি হিস্টামিন–জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়।

তবে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়লে, উচ্চ মাত্রার জ্বর হলে, জ্বরের সময় শীত লাগলে এবং ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ব্যথা ভালো না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রতিরোধ

সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি।

  • রোগীর দেখভালের সময় মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহার করা।

  • রোগীর ব্যবহৃত থালা, গ্লাস, বাটি, চামচ পরিষ্কার করার সময় গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে।

  • রোগীকে দেখাশোনার পর সাবান অথবা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ভালো করে হাত ধোয়া।

  • এ সময় শিশুদের স্কুলে না পাঠানো ভালো।

  • মুখের ব্যথা সারাতে মাউথওয়াশ, লোকাল অ্যানেসথেটিক জেলি লাগানো।

  • অধ্যাপক ডা. ইমনুল ইসলাম, বিভাগীয় প্রধান, শিশু বিভাগ, আলোক হেলথকেয়ার লিমিটেড মিরপুর, ঢাকা