প্রতিদিনের জীবনযাপনে আমাদের খুব সাধারণ যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে হয়, এর মধ্যে একটি হাতের ব্যথা। ছোট–বড় যেকোনো আঘাতে হাতের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ব্যথা হতে পারে। আবার অনেক সময় আঘাত ছাড়াও ব্যথা হতে পারে।
হাত ও কবজির ব্যথার উপসর্গ, কারণ ও প্রতিকার নিয়ে প্রথম আলো আয়োজন করে এসকেএফ নিবেদিত স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘ইজোরাল মাপস স্বাস্থ্য আলাপন’। অনুষ্ঠানটির গত পর্বে আলোচনা করা হয় হাতের ব্যথা বিষয়ে। ডা. নাদিয়া নিতুলের সঞ্চালনায় অতিথি ছিলেন ডা. মো. নাহিদুজ্জামান সাজ্জাদ, মেডিসিন ও বাতব্যথা বিশেষজ্ঞ।
অনুষ্ঠানটি ১৮ জুন প্রথম আলোর ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এ ছাড়া সম্প্রচারিত হয় এসকেএফের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেও।
অনুষ্ঠানের শুরুতে হাতের ব্যথা কেন এবং কী কারণ হতে পারে, তা নিয়ে ডা. মো. নাহিদুজ্জামান সাজ্জাদ বলেন, সাধারণত কোনো আঘাত এবং বাতের কারণে এই ব্যথা হতে পারে। আবার দৈনন্দিন কাজের প্রভাবেও হাতের ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় কনুইয়ের ব্যথাও হাতের কবজিতে এসে পড়তে পারে। যেমন হঠাৎ কোনো আঘাতের কারণে হাতের ব্যথা শুরু হতে পারে। একে বলে অ্যাকিউট পেইন। আর যে ব্যথা দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আছে, তা ক্রনিক পেইন। কী কারণে হাতের ব্যথা হয়, তা বলতে গেলে বলতে হয়, প্রদাহ, আঘাত, স্নায়ু নষ্ট হয়ে যাওয়া, দীর্ঘকালীন স্বাস্থ্যের সমস্যা, হাতের যেকোনো হাড় বা লিগামেন্ট মচকানো বা ভাঙার ফলে হাতে ব্যথা হতে পারে।
আবার অনেক সময় কবজি মচকে যায়, কবজিতে টান পড়ে এবং কবজির হাড় ভেঙেও যায়। হাতের ওপর ভর দিয়ে পড়ে গেলে অনেক সময় ফ্র্যাকচার হয়। এ ক্ষেত্রে রেডিয়াসের নিচের অংশ ভেঙে যায়। কবজি ফুলে যায়। আবার খেলোয়াড় বা বিশেষ কোনো কাজে যদি হাতের একই জায়গায় চাপ পড়ে, তবে ব্যথা হতে পারে। যাঁরা নিয়মিত বাড়ির কাজ করেন, যেমন থালা–বাসন পরিষ্কার, ঘড় ঝাড়ু দেওয়া ইত্যাদি।
এসব কাজে হাতের কবজিতে একই জায়গায় নিয়মিত চাপ পড়ে, এর ফলেও হাতে ব্যথা হতে পারে। আবার হাতের কবজিতেও একধরনের বাত হয় এবং এই রোগগুলো দীর্ঘমেয়াদি রোগ। এগুলোর সঠিক চিকিৎসা করানো জরুরি। আবার অনেক সময় ছোট ছোট অঘাতকে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দিই না। কিন্তু অবহেলার কারণে সাময়িক এই ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় রূপ নিতে পারে। আবার বিভিন্ন ধরনের কাজ এবং আঘাতে কবজির সন্ধির চারপাশের টিস্যুতে প্রদাহ হতে পারে কিংবা হাড় ভেঙে যেতে পারে। বিশেষ করে কোনো বিরতি ছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা কবজির কাজ করলে।
বারবার একই জায়গায় চাপের ফলে হাতের কবজির ব্যথা হতে পারে। একে বলে ডি কোয়ার ভেইন’স ডিজিজ। এ ক্ষেত্রে কবজির বাইরের দিকে, অর্থাৎ রেডিয়াসের ওপর দিয়ে যে দুটি টেনডন বিন্যস্ত রয়েছে, তাদের আবরণীতে প্রদাহ হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে ব্যথার আরও কিছু বিশেষ কারণ রয়েছে। যেমন কারপাল টানেল সিনড্রোম।
অনুষ্ঠানের এ পর্যায়ে ডা. মো. নাহিদুজ্জামান সাজ্জাদ আলোচনা করেন হাতের ব্যথার প্রতিকার ও চিকিৎসা নিয়ে। তিনি বলেন, হাতের ব্যথার চিকিৎসা শুরুর আগে ব্যথার কারণ নির্ণয় করা বেশি জরুরি। আবার ব্যথা হওয়ার কারণ, ধরন, স্থান ও তীব্রতার ওপরও এর চিকিৎসা নির্ভর করে। ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি হলে রোগীর বয়স ও অন্য কোনো রোগ আছে কি না, তা–ও বিবেচনায় রাখতে হবে। হাতের ব্যথার কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা রয়েছে, যা করাতে আমরা অনেক সময়ই অবহেলা করি।
এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, ব্যথা পেলে প্রথমত যা করতে হবে, আক্রান্ত হাত বিশ্রামে রাখতে হবে। আবার যদি কোনো নির্দিষ্ট রোগের কারণে ব্যথা হয়, তবে সে রোগের উপযুক্ত চিকিৎসা করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করতে হবে। আবার যদি হাতে টান লাগে বা মচকে গিয়ে লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে এর সুরক্ষায় স্প্রিন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। আক্রান্ত স্থানের নড়াচড়া থেকে রক্ষা করার জন্য রিস্টব্যান্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে একটি সাধারণ ভুল ধারণা হলো, যেকোনো ধরনের ব্যথায় তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ সেবন করেন। এ ক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, সব ধরনের হাতের ব্যথায় কিন্তু ওষুধ প্রয়োজন হয় না। সামান্য আঘাত পেলে নিজেরাই আঘাতের স্থানে বরফ লাগালে উপকার পাওয়া সম্ভব।