শিশুদের হাঁপানি বা অ্যাজমার চিকিৎসায় ইনহেলারের সঠিক ব্যবহারবিধি জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাজমা চিকিৎসার সাফল্য মূলত এসব প্রয়োগপদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণের ওপর নির্ভর করে। অনেক সময় বড়রাও ইনহেলার ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি জানেন না। ফলে শিশুকেও তারা শেখাতে পারেন না।
ইনহেলার একটি ওষুধ প্রয়োগের পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সুনির্দিষ্ট পরিমাণ ওষুধ অ্যারোসল হিসেবে নির্গত হয়। রোগী শ্বাসের মাধ্যমে ওষুধটুকু ফুসফুসের মধ্যে টেনে নেয়। ইনহেলারের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, সালবিউটামল, সালমেটেরল, ফ্লুটিকেসন ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
অনেক অভিভাবক ইনহেলারের কথা শুনলেই ভয় পেয়ে যান। মনে রাখবেন, মুখে খাবার ওষুধের চেয়ে ইনহেলার বেশি নিরাপদ। ইনহেলারের ওষুধ ফুসফুসেই বেশি যায়, রক্তে খুব একটা মেশে না বলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম।
পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য এমডিআই (মিটারড ডোজ ইনহেলার) ব্যবহার করা যায়।
সঠিক ইনহেলার প্রয়োগের পদ্ধতি
প্রথমে ভালোভাবে ইনহেলারটি ঝাঁকিয়ে নিতে হবে।
এরপর মুখের ঢাকনা খুলে ইনহেলারটি খাড়া করে মুখ থেকে ১-২ ইঞ্চি দূরে রাখতে হবে।
মাথাটা একটু পেছনে হেলিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে ফুসফুস থেকে সব বাতাস বের করে দিতে হবে।
এবার ইনহেলারটি চাপ দিয়ে ধীরে ধীরে লম্বা শ্বাসের সাহায্যে ওষুধ ফুসফুসে টেনে অন্তত ১০ সেকেন্ড দম বন্ধ করে রাখতে হবে। দ্রুত ও খুব জোরে টান দেওয়া চলবে। নাহলে বেশির ভাগ ওষুধ ফুসফুসে প্রবেশ না করে গলায় লেগে থাকবে।
মিনিটখানেক স্বাভাবিক শ্বাস–প্রশ্বাস নেওয়ার পর একইভাবে আরেকটি পাফ নিতে হবে।
ব্যবহারের পর ইনহেলারের মুখ পরিষ্কার করে ঢাকনা লাগিয়ে রাখতে হবে।
ইনহেলার ব্যবহারের পর ভালো করে কুলি করে মুখ, জিব পরিষ্কার করে নিতে হবে।
ইনহেলারের ধাতব ক্যানিস্টারটি খুলে নিয়ে পানিতে ছেড়ে দিলে যতটুকু খাড়াভাবে ডুববে, বুঝতে হবে ওষুধ ঠিক ততটুকুই আছে। যদি সম্পূর্ণ পানির ওপর ভাসতে থাকে, বুঝতে হবে ইনহেলারে আর কোনো ওষুধ অবশিষ্ট নেই। নতুন কিনতে হবে।
স্পেসার
যে রোগী ইনহেলারের মাধ্যমে ওষুধ নিতে পারে না (যেমন ৫ বছরের কম বয়সী শিশু) বা কেউ হঠাৎ মাঝারি বা তীব্র মাত্রার অ্যাজমায় আক্রান্ত হলে ইনহেলারের সঙ্গে স্পেসার ব্যবহার করা ভালো। এটি প্লাস্টিকের একটি ফাঁপা চোঙাবিশেষ, যার এক প্রান্তে ইনহেলার লাগিয়ে অপর প্রান্ত দিয়ে শ্বাসের সঙ্গে ওষুধ গ্রহণ করা যায়। স্পেসার ইনহেলারের ওষুধকে পর্যাপ্ত সময় পর্যন্ত ধরে রাখে ফলে রোগী ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে ওষুধটুকু সহজেই শ্বাসনালিতে নিতে সক্ষম হয়।
স্পেসারের সুবিধা
ইনহেলারের মাধ্যমে যথাযথভাবে প্রয়োগকৃত ওষুধের মাত্র ১০ শতাংশ শ্বাসনালিতে পৌঁছায়। স্পেসারের মাধ্যমে প্রয়োগ করলে এই পরিমাণ বেড়ে যায়।
স্পেসারের মাধ্যমে প্রয়োগকৃত ওষুধ খুব কম পরিমাণে মুখ, গলা ও খাদ্যনালিতে লাগতে পারে বলে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যেমন কাশি, গলায় ও মুখে ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ইত্যাদি কম হয়।
স্পেসার ব্যবহারের নিয়ম
১. প্রথমে ইনহেলারটি ঝাঁকিয়ে নিতে হবে।
২. ইনহেলারটির মুখ স্পেসারের নির্দিষ্ট স্থানে লাগাতে হবে।
৩. এবার ইনহেলারটি একবার চাপ দিয়ে ওষুধ স্পেসারের ভেতরের ফাঁকা অংশে প্রবেশ করিয়ে ঝাঁকাতে হবে।
৪. এরপর অপর প্রান্তে মুখ লাগিয়ে ধীরে ধীরে গভীর করে শ্বাস নিতে হবে। ওষুধ স্পেসারে প্রবেশ করানোর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে নিলেই চলবে বলে কোনো প্রকার তাড়াহুড়ার প্রয়োজন নেই।
৫. ৫-১০ সেকেন্ড শ্বাস বন্ধ রেখে ৪ নম্বর ধারা অনুসারে পুনরায় ২ বা ৩ বার শ্বাস নিতে হবে।
৬. ব্যবহারের পর স্পেসারটি সুতি কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে রাখতে হবে।