আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রভাত ভাবতে থাকে সারা দিন সবার জন্য অনেক কাজ করা হয় কিন্তু নিজের জন্য আলাদাভাবে কিছুই করা হয়ে ওঠে না। কাজের চাপে ঘুমটাও ঠিকমতো হয়ে ওঠে না। আর সময়ের অভাবে নিজের যত্ন না নেওয়ার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই প্রাণচঞ্চল ছেলেটি ধীরে ধীরে কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। প্রভাত আয়না দেখে আর ভাবে, কীভাবে পারবে নিজেকে আগের মতো প্রাণবন্ত করে তুলতে?
প্রভাতের মতো আমরা অনেকেই ব্যস্ততার অজুহাতে নিজের যত্ন নিই না। তাদের জন্য সহজ সমাধান হতে পারে যোগাব্যায়াম বা যোগাসন। যোগাসন শব্দের ইংরাজি নাম Yoga, যার অর্থ যোগ করা বা একত্র করা। ব্যক্তিসত্তার সঙ্গে বিশ্বসত্তা একত্র করে প্রশান্তি অর্জনের মাধ্যম হলো, যোগ বা যোগাসন।
যোগাসনের উপকারিতা
শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।
শরীরে জমে থাকা বিষ (টক্সিন) দূর করতে যোগাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যোগাসন আমাদের পেটের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ—যেমন পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্র, যকৃৎ কার্যকর করে। ফলে হজমশক্তি উন্নত হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
চাপ দূর করতে যোগাসনের বিকল্প নেই।
শরীরের রক্তসঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে যোগাসন, যার ফলে অভ্যন্তরীণ শক্তিপ্রবাহের মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে আমরা কর্ম–উদ্যমী হয়ে উঠি।
শরীর মন ও আত্মার একত্রকরণের মাধ্যমে যোগাসন কোনো একটি বিষয়ের প্রতি একাগ্রতা আনতে সহায়তা করে।
মনের চঞ্চলতা কমায়, ধৈর্যশক্তি বাড়ায়।
মেয়েদের পিরিয়ডের সময় ব্যথা নিরাময় করতে সাহায্য করে, নারীদের ডিম্বাশয় ভালো থাকে। ফলে প্রজননক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।
যোগাসন বিচলিত–বিক্ষিপ্ত মনকে শান্ত করতে সাহায্য করে। এতে চিন্তা করার দক্ষতা বাড়ে এবং আমরা সৃজনশীল হয়ে উঠতে পারি।
যোগাসন করার সময়
অনেকেই চিন্তা করেন এই ব্যস্ততাময় জীবনে সময় কোথায় যোগাসনের, তাঁদের জন্য বলছি। খাবার গ্রহণের দুই ঘণ্টার মধ্য ব্যতীত দিনের যেকোনো সময় যোগাসন করা যেতে পারে। যোগবিজ্ঞান অনুসারে বলা যায় যে সূর্যোদয়ের দুই ঘণ্টা আগে যখন প্রকৃতি থাকে শান্ত, পরিশুদ্ধ এবং আমাদের অন্ত্র, পাকস্থলী সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকে, তখন যোগাসনের জন্য উপযুক্ত সময়। প্রকৃতির এই অফুরান প্রাণশক্তি আমাদের অবচেতন মনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এ জন্য আমরা একটি সুন্দর দিন শুরু করতে পারি। সময়ের অভাবে যোগাসন থেকে বিরত না থেকে আমরা যদি আমাদের কাজের ফাঁকে ফাঁকে কিছু অনুশীলন করি, তবে সারা দিন প্রাণবন্ত থাকা যাবে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
যোগাসন অনুশীলনের জন্য কোনো বয়সসীমা নাই, যেকোনো বয়সের নারী–পুরুষ যোগাসন করতে পারেন। তবে একা একা অনুশীলন না করে কোনো দক্ষ প্রশিক্ষকের সহায়তা নেওয়া ভালো।
গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়াম অনুশীলন খুবই উপকারী। তবে অনুশীলনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শরীরের ওপর অতিরিক্ত জোর দিয়ে অথবা শরীরে ব্যথা নিয়ে যোগাসন চর্চা করা ঠিক না, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
যোগাসন অনুশীলনের জন্য জায়গাটি হবে এমন—যেখানে অবাধে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে। আবার ঘরের বাইরেও অনুশীলন করা যেতে পারে, তবে খেয়াল রাখতে হবে পরিবেশটি যেন কোলাহলমুক্ত মনোরম হয়। খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা জায়গায় যোগাসন অনুশীলন করা ঠিক না।
যোগাসনের জন্য ম্যাট ব্যবহার করা ভালো। ম্যাট না থাকলে মোটা কাপড়, কাঁথা বা কম্বল ব্যবহার করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, ম্যাট বা জায়গাটি যেন পিচ্ছিল না হয়।
যোগাসন চর্চার আগে ঠান্ডা পানিতে গোসল করা যেতে পারে। এতে শরীর ও মন সতেজ থাকবে।
যোগাসনের পোশাক হবে হালকা এবং আরামদায়ক। অনুশীলনের সময় চশমা, ঘড়ি খুলে রাখতে হবে।
যোগাসন অনুশীলন করার জন্য শুধু নিরামিষ খাবার খেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তবে পরিমিত ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া ভালো। সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা জরুরি।
যোগাসন অনুশীলনের সময় বিশ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি আসনের মধ্যে বিশ্রাম নিতে হবে।
যোগাসনের উপকারিতা এক দিনে পাওয়া যাবে না। নিয়মিত বুঝে ও জেনে প্রয়োজন অনুযায়ী আসনগুলো অনুশীলন করলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যাবে।
লেখক: যোগব্যায়াম প্রশিক্ষক এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলর ও প্রভাষক *