পরিবারে আসবে নতুন সদস্য। যেকোনো মা-বাবার কাছে এটা বড় ঘটনা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ জন্য আমাদের দেশে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির ঘাটতিই বেশি দেখা যায়। সন্তান জন্মের প্রায় পুরোটা ধকল ও দায়িত্ব মাকেই নিতে হয়। সন্তানের জন্ম কখন, কীভাবে, কোথায় হবে—সবকিছু মিলিয়েই পারিবারিক পর্যায়ে চাই একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা।
দেশে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই এখনো অনেক মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। এরা সন্তান জন্মদানের জন্য প্রস্তুত নয় মোটেও। তাই অল্পবয়সী মেয়েদের অন্তত সন্তান যেন একটু দেরিতে হয়, সে জন্য নিরাপদ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির পরামর্শ নেওয়া উচিত। এ ছাড়া শহুরে শিক্ষিত পরিবারেও কখনো কখনো লেখাপড়া শেষ হওয়ার আগেই মেয়েদের বিয়ে হয়। তাতে সমস্যা নেই। তবে পরীক্ষা, ক্লাসের চাপ ইত্যাদির সময় ও গুরুত্ব ভুলে গিয়ে হঠাৎ অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে মেয়েটার ওপরই শারীরিক-মানসিক সব চাপ এসে পড়ে। কর্মজীবী মায়েদের ক্ষেত্রেও তা-ই। অনেক সময় অফিস থেকে ছুটি বা কোনো সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। বাবার প্রস্তুতিটাও দেখা চাই। কেউ হয়তো বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, কেউ বদলি হয়ে যাচ্ছেন দূরে কোথাও। কারও হয়তো চাকরিটা এখনো স্থায়ী হয়নি। অথচ কিছু না ভেবেই সন্তান নিয়ে ফেললেন, তারপর স্ত্রীকে একা রেখে গেলেন চলে। তাই বাবারও উচিত সঠিক সময়টা বের করা। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হলে কোথায় থাকবেন, শহরে না গ্রামে, বাবার বাড়ি না নিজের বাড়ি, কোথায় তাঁর সঠিক যত্নআত্তি হবে, কোথায় ডাক্তার ও হাসপাতালের সুবিধা হবে—এই সবকিছুও ভেবে নেওয়া জরুরি।
আজকাল সবাই নির্ঝঞ্ঝাট প্রসব চান। তাই আগে থেকেই চেকআপ করিয়ে নিতে হবে হবু মায়ের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের সমস্যা আছে কি না। রক্তের গ্রুপটা কী? যদি নেগেটিভ হয়, তবে স্বামীরটাও দেখে নিন। কেননা পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে জটিলতা হতে পারে। অনেক পরিবারে অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন ট্রেইট থাকে, যা আগে থেকে বোঝা যায় না। রক্তে হিমোগ্লোবিন কম থাকলে তা-ও একটু দেখে নেওয়া যায়। কারণ, স্বামীর পরিবারেও এ সমস্যা থাকলে অনাগত সন্তান বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। হেপাটাইটিস বি স্ক্রিনিং করে প্রয়োজনে টিকা দিয়ে নেওয়া উচিত মায়ের। গর্ভবতী হয়ে পড়লে তখন আর নেওয়া যাবে না। সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনার সময় থেকেই ফলিক অ্যাসিড ও জিঙ্ক খাওয়া শুরু করে দিতে পারেন। এতে জটিলতা অনেক কমে। অতিরিক্ত ওজন থাকলে তা আগেই ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করুন। রক্তশূন্যতা থাকলে তা ঠিক করে নিন।
একটি পরিকল্পিত সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে গর্ভধারণের অন্তত তিন মাস আগে থেকেই শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তুতি নেওয়া চাই বাবা-মায়ের। একটু একটু করে সঞ্চয় করুন। প্রসব ও প্রসব-পরবর্তী খরচের প্রস্তুতি নিন। রক্তদাতার নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর, হাসপাতালে যাতায়াত-ব্যবস্থা, অফিস থেকে ছুটি, স্বজনদের সহায়তা—সবই মাথায় রাখুন।
অধ্যাপক রওশন আরা বেগম
বিভাগীয় প্রধান, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল