বয়সীরাও রোজা রাখবেন, তবে...

রোজায় বয়স্কদের সুস্থ থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে জিরোক্যাল নিবেদিত প্রথম আলো অনলাইনের আয়োজন ‘সুষম খাবার তালিকা নির্ধারণ: সুস্থ থাকুন রমজানেও’ অনুষ্ঠানে আলোচনা করেছেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হেড অব ভাস্কুলার সার্জারি, সহযোগী অধ্যাপক ও কনসালটেন্ট ডা. সাকলায়েন রাসেল।

মানতে হবে নিয়ম

ইসলামে বয়স্কদের রোজা রাখার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়মকানুন রয়েছে। তাঁরা যদি মনে করেন রোজা রাখার মতো সুস্থ ও সবল আছেন, কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না, তাহলে তিনি রোজা রাখতে পারেন। বাংলাদেশে বেশির ভাগ বয়স্ক মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাঁদের রোজা রাখার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হয়। ডায়াবেটিস-রোগীদের রমজান শুরুর তিন মাস আগেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সেই পরামর্শ মেনেই রোজা রাখতে হবে।

জিরোক্যাল নিবেদিত প্রথম আলো অনলাইনের আয়োজন ‘সুষম খাবার তালিকা নির্ধারণ: সুস্থ থাকুন রমজানেও’
ছবি: সংগৃহীত

পরিমিত খাবার গ্রহণ

যাঁদের ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো রোগ আছে, তাঁরা সাহ্‌রির সময় যে ওষুধ গ্রহণ করবেন, সেটা হতে হবে অন্য সময়ের ওষুধের অর্ধেক। কারণ আপনি সারা দিন না খেয়ে থাকবেন। সে ক্ষেত্রে যদি সাহ্‌রির সময় পূর্ণমাত্রার ওষুধ গ্রহণ করেন, তাহলে শরীরের সুগার লেভেল কমে যেতে পারে। সাহ্‌রিতে খুব কম পরিমাণ খাবার খাওয়া যেমন ক্ষতিকর, তেমনি একসঙ্গে বেশি খাওয়াও সমান ক্ষতিকর। তাই সাহ্‌রিতে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে হবে।

অবস্থা বুঝে রোজা রাখুন

রোজা রেখে যেমন ইনসুলিন নেওয়া যায়, তেমনি রক্ত পরীক্ষাও করা যায়। রোজার সময় বিকেলের দিকে অনেক ডায়াবেটিক রোগীর কিছু শারীরিক সমস্যা অনুভূত হয়। মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোজাদারের সুগার চেক করে নেওয়া উচিত। যদি দেখা যায় সুগার লেভেল খুব খারাপ অবস্থায় আছে, তাহলে রোজা ভেঙে কিছু খেয়ে নিতে হবে। পরে রোজাটা রেখে দেবেন।

ইফতারে করণীয়

ইফতারে অনেক বেশি খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। ডায়াবেটিস রোগীদের সাধারণ পানি দিয়ে ইফতার করা উচিত। এরপর একটা খেজুর খেতে পারেন। হালকা সোডা নিতে পারেন। ইফতারের ৩০ মিনিট পর রাতের খাবার খাওয়া উচিত। ডায়াবেটিস রোগীর পাশাপাশি সব বয়স্ক মানুষের জন্যই এটা প্রযোজ্য।

রাতে প্রচুর পানি খাবেন

যেহেতু প্রায় ১৪ ঘণ্টা রোজা রাখতে হচ্ছে, তার ওপর প্রচণ্ড গরমও পড়ছে,  এ কারণে শরীরে পানিশূন্যতার ভয় রয়েছে। তাই ইফতারের পর থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় পানি পান করুন। সাহ্‌রির শেষ সময়, ধরুন সাহ্‌রির শেষ সময় ৪টা ২০ মিনিট, তাহলে আপনি ৪টার মধ্যে সাহ্‌রি খাওয়া শেষ করে ফেলবেন। এবং ১৫ মিনিট পর যদি পানি গ্রহণ করেন, তাহলে সারা দিন অনেক ভালো থাকবেন।

যদি দেখা যায় সুগার লেভেল খুব খারাপ অবস্থায় আছে, তাহলে রোজা ভেঙে কিছু খেয়ে নিতে হবে
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

শারীরিক পরিশ্রম

সুস্থ মানুষের যেমন নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত, তেমনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরও ব্যায়াম বা হাঁটার প্রয়োজন আছে। রোজার সময় ব্যায়াম না করলে ডায়াবেটিস বেড়ে যাবে। বয়স্করা যদি নিয়মিত ২০ রাকাত তারাবির নামাজ পড়েন, তাহলে আলাদা করে ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই। অন্যথায় রাতের খাবারের পর একটু হাঁটাহাটি করা ভালো।

দরকার পর্যাপ্ত ঘুম

রমজানে বয়স্ক ব্যক্তির প্রাত্যহিক ঘুমের সময়ের হেরফের হয়। তাই সাহ্‌রি খাওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘুমিয়ে পড়তে হবে।

নিয়ন্ত্রণে রাখুন...

বয়স্ক ব্যক্তিদের রোজার সময় গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি অনেক বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে পরামর্শ হলো, ভাজাপোড়া যথাসম্ভব কম খাওয়া বা এড়িয়ে যাওয়া। অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে সাহ্‌রির আগে এবং ইফতারের পরে গ্যাসের ওষুধ খেয়ে নিতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, রোজা অ্যাসিডিটি বাড়ানোর জন্য দায়ী নয়। গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির জন্য দায়ী আপনার অভ্যাস। বয়স্ক অনেকেই আছেন, যাঁদের চা-কফি না হলে চলে না। চা বা কফির জন্য প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাই রমজানে বয়স্কদের চা-কফি না খাওয়াই উত্তম। সাহ্‌রির সময় তো অবশ্যই খাওয়া যাবে না। তবে ইফতারের পর চাইলে অল্প পরিমাণে খেতে পারেন।

রমজানে বয়স্কদের চা-কফি না খাওয়াই উত্তম
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

শারীরিক সুস্থতা

যাঁরা কিডনি রোগী, তাঁরা চাইলেও অনেক খাবার বা পানি গ্রহণ করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে তাঁদের উচিত কিডনি-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখা।
রোজা রাখার কারণে শরীরে যে পরিবর্তনগুলো আসে, সেটা খুবই উপকারী। রোজা রাখলে মন শান্ত থাকে। অনেক সময় ধরে না খেয়ে থাকার কারণে শরীরের টক্সিন জিনিসগুলোর পরিমাণ কমে যায়। অন্য অনেক রোগও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ইসলামে রোজা রাখা বা না-রাখার ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সেগুলো জেনে এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রোজা রাখবেন।