বাড়িতে ডেঙ্গু রোগীর সেবাযত্ন

দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গবেষণা বলছে, এ বছর অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘ডেন ৩’ ধরন দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই জটিলতাও বেশি। ডেঙ্গু জ্বর নানা রকম জটিলতা তৈরি করতে পারে। শুরু থেকেই সতর্ক ও সচেতন থাকলে মৃত্যুঝুঁকিসহ অন্যান্য জটিলতা কমে। তাই যেকোনো জ্বরকে আমলে এনে বাড়িতেই ডেঙ্গু রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।

জ্বর বাড়তে থাকলে তা কমাতে হবে
ছবি: প্র স্বাস্থ্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কীভাবে বুঝবেন

আমাদের দেশে ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত জুন-জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত হয়ে থাকে। বর্ষাকালে যেকোনো জ্বর হলেই আমাদের দেশে ডেঙ্গুর কথা মাথায় রাখতে হবে। সাধারণত এই জ্বর হয়ে থাকে অতিরিক্ত মাত্রার, ১০২ থেকে ১০৫ ফারেনহাইট। জ্বরের সঙ্গে আরও যেসব উপসর্গ থাকে, তা হলো তীব্র শরীরব্যথা, পিঠে এবং মাংসে ব্যথা, চোখের চারপাশে এবং পেছনে ব্যথা, বমি বমি ভাব অথবা বমি, পেটে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, কোষ্ঠকাঠিন্য, স্বাদের পরিবর্তন এবং গায়ে লালচে ভাব। এ সময় জ্বরে আক্রান্ত হলে কালক্ষেপণ না করে জ্বরের শুরুতেই প্রথম পাঁচ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু এনএসওয়ান টেস্ট করে নেওয়া প্রয়োজন। এর সঙ্গে প্রয়োজন সিবিসি, এসজিপিটি, এসজিওটি টেস্ট করা। কারণ, এবার একটু দ্রুতই কিছু বুঝে ওঠার আগেই জটিলতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

করণীয়

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাসায় প্রাথমিক পরিচর্যা ও চিকিৎসা শুরু করতে হবে। আরও যা মানতে হবে—

১. জ্বর কমানোর উপায়: ডেঙ্গুর উচ্চমাত্রার জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করুন। প্যারাসিটামল ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পরপর জ্বরের মাত্রা বুঝে ব্যবহার করা যাবে। দিনে ৮ থেকে ১০টি ট্যাবলেটের (সর্বোচ্চ ৪ গ্রাম) বেশি ব্যবহৃত হলে লিভারের ক্ষতিসহ নানা জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। জ্বর কমাতে কোনোভাবেই অ্যাসপিরিন অথবা ব্যথানাশক এনএসএইড গ্রুপের ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না। ওষুধ ছাড়াও জ্বর কমাতে মাথায় পানি ঢালা, শরীর মুছে দেওয়া অথবা রোগীকে গোসল করাতে পারেন।

২. পানি পান: ডেঙ্গু রোগীর প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে প্রধান চিকিৎসা হলো ফ্লুইড রিপ্লেসমেন্ট বা তরল ব্যবস্থাপনা। পানির সঙ্গে খেতে পারেন ওরস্যালাইন, স্যুপ, ডাবের পানি, ফলের শরবত, ভাতের মাড়, দুধ ইত্যাদি।

৩. বিশ্রাম: ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিশ্রাম খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোগীদের শারীরিক দুর্বলতাটাও থাকে অত্যধিক। উপসর্গের ৭ থেকে ১০ দিন ভারী কাজ, মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করা যাবে না। রোগী স্বাভাবিক হাঁটাচলা, দৈনন্দিন কাজ করতে পারবেন। তবে ছুটি নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করবেন আর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেবেন।

৪. অন্যান্য ওষুধ: জ্বরের পাশাপাশি অনেকের বমি ভাব, ডায়রিয়া থেকে থাকে। এসব উপসর্গ নিরাময়ে আরও কিছু ওষুধ চিকিৎসকেরা দিয়ে থাকেন। তবে ডেঙ্গু রোগীদের অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধের কোনো প্রয়োজন নেই।

৫. সতর্কসংকেত: রোগীর কিছু সতর্কসংকেত জেনে রাখতে হবে এবং এসব উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে অথবা হাসপাতালে চলে যেতে হবে। সেগুলো হলো অস্বাভাবিক দুর্বলতা, অসংলগ্ন কথা বলা, অনবরত বমি, তীব্র পেটে ব্যথা, গায়ে লাল ছোপ ছোপ দাগ, শ্বাসকষ্ট, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবে রক্ত, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে
যাওয়া অথবা রোগীর মুখ, নাক, দাঁতের মাড়ি, পায়ুপথে রক্তক্ষরণ, অতিরিক্ত মাসিকের রক্তক্ষরণ, রক্তবমি।

অতিরিক্ত ঝুঁকিতে কারা

অনূর্ধ্ব ১ বছর অথবা ৬৫ বছরের ওপরে, গর্ভবতী নারী, দৈহিক স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, ডায়ালাইসিসের রোগী। এসব রোগীকে শুরু থেকেই হাসপাতালে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।