চিট মিলের সর্বোচ্চ সুফল পেতে হলে

আমাদের যত ভয় আছে, তার ভেতর অন্যতম হলো ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয়। আপনার প্রিয় বিরিয়ানি, মিষ্টি, পাস্তা—এসবের সঙ্গে আড়ি নিয়ে তাই অনেকেই শুরু করেন কড়া ডায়েট। কিন্তু সেই কড়া ডায়েটের নিয়মের বেড়া ভেঙে মাঝেমধ্যে ‘যেমন খুশি তেমন খাওয়া’ চালিয়ে যাওয়াই চিট মিল। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস প্রিয় খাবারগুলোকে বিদায় জানিয়ে ক্যালরি মেপে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াটা কঠিন। তাই যাঁরা ডায়েট করেন, তাঁরা সাধারণত সপ্তাহে একবার ডায়েটের নিয়ম-কানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এক বেলা পছন্দের এক-দুটি খাবার পরিমিত পরিমাণে খেতে পারবেন। এই খাবারকেই বলে চিট মিল।
কড়া ডায়েটের নিয়মের বেড়া ভেঙে মাঝেমধ্যে ‘যেমন খুশি তেমন খাওয়া’ চালিয়ে যাওয়াই চিট মিল
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

কেন দরকার চিট মিল?

ডায়েট চলাকালে রুচি ও তৃপ্তি নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন লেপটিনের পরিমাণ কমতে থাকে। ফলে অন্যান্য হরমোনেও অসমতা দেখা দেয়। তাই সপ্তাহে একবার চিট মিল রাখলে শরীরে লেপটিনের পরিমাণ বাড়ে। ফলে বিপাকের সঙ্গে জড়িত সব হরমোনের মধ্যে সমতা তৈরি হয়, যা সামগ্রিক বিপাকের হার বাড়ায়। তাই ইনসুলিন নিঃসরণে ভারসাম্য রক্ষা হয়। শরীরে গ্লাইকোজেনের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত শক্তি তৈরি হয়। আর অন্য কারণটি হলো, মনের দাবি মেটানো। আপনি যদি নিজেকে ক্রমাগত ভালো না বেসে, আনন্দ না নিয়ে খাবার খেতে থাকেন, তাহলে তা আপনার বিষণ্নতা বাড়িয়ে দিতে পারে। কর্মদক্ষতাও কমে যেতে পারে। সপ্তাহে একদিন চিট মিল আপনাকে ওই দিন ওই বেলার খাবারের অপেক্ষায় সারা সপ্তাহ উদ্দীপ্ত রাখবে।  

সপ্তাহে একদিন চিট মিল আপনাকে ওই দিন ওই বেলার খাবারের অপেক্ষায় সারা সপ্তাহ উদ্দীপ্ত রাখবে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

চিট মিলের নিয়ম

তাই বলে চিট মিলে যা খুশি তা-ই খাবেন, যেভাবে খুশি সেভাবে খাবেন, তা কিন্তু হবে না। জেনে নেওয়া যাক কিছু মৌলিক নিয়ম।


১. যদি চিট মিল খেতে চান, তাহলে শরীরচর্চার আগে বা পরে খান। শরীরচর্চার আগে খেলে খাওয়া–পরবর্তী শারীরিক পরিশ্রম খাবারের গ্লাইকোজেনকে ফ্যাটে পরিণত হওয়া থেকে রুখে দেবে। পরে খেলে পেশির ক্ষয় মেটাতে সাহায্য করবে।

২. চিট মিল খাওয়ার ক্ষেত্রে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। চিট মিল যত ছোট হবে, যত কম সময় ধরে খাবেন, শরীরে মেদ জমার পরিমাণও ততই কম হবে। তবে আস্তেধীরে খেলেও আধা ঘণ্টার ভেতর খাওয়া শেষ করবেন।


৩. চিট মিল কতটা খেতে পারেন, আপনার শরীরকে প্রশ্ন করলেই উত্তর পেয়ে যাবেন। যদি আপনি রোগা হন, তাহলে সপ্তাহে একটা চিট মিল নিতেই পারেন। স্থূল হলে দুই সপ্তাহে একটি বা মাসে একটি চিট মিল খাবেন।  

৪. আপনি যদি সদ্যই ডায়েট শুরু করে থাকেন, তাহলে প্রথম এক মাস চিট মিল নেবেন না। পরবর্তী মাসে একবার চিট মিল নেবেন। তৃতীয় ও চতুর্থ মাসে দুই সপ্তাহে একবার। পঞ্চম মাস থেকে আপনার শরীর, মনের দাবি বুঝে সপ্তাহে একদিন চিট মিল নিতেই পারেন।


৫. চিট মিল নেওয়ার এক-দুই ঘণ্টা আগে উচ্চমাত্রার প্রোটিন, ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার ও সবুজ সালাদ খেয়ে নিতে হবে। কোথাও দাওয়াতে গেলে সেটাকে চিট মিল হিসেবেই ধরবেন। চিট মিলের পর আধঘণ্টা হাঁটতে পারলে ভালো। পরবর্তী আট ঘণ্টা কিছু না খাওয়াটাই সমীচীন হবে। পাস্তা, বার্গার, পিৎজা, বিরিয়ানি, কাবাব—এসব চিট মিলের সঙ্গে সালাদ, টক দই, ফাইবারসমৃদ্ধ ফল বা স্বাস্থ্যকর কিছু খেলে ভালো। চিট মিল শেষে পর্যাপ্ত কুসুমগরম পানি বা লেবুপানি পান করতে হবে।


৬. সুস্বাদু খাবারে থাকে প্রচুর লবণ, তেল আর চিনি। এই তিন উপাদান শরীর, স্বাস্থ্যের শত্রু। তাই এই খাবারগুলো ঝরাতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পানি। দিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করবেন। চিট মিলের দিন অন্তত ১০ গ্লাস বা আড়াই লিটার পানি খাবেন। তিন লিটার খেলে সবচেয়ে ভালো।