গরমে তরমুজ খাওয়ার সুফল

ছবি: প্রথম আলো

এই গরমে লাল টকটকে এক ফালি তরমুজ দেবে শীতল অনুভূতি। তাই তো সতেজ থাকতে বৈশাখের গরমে এই ফলের চাহিদা সব থেকে বেশি। কেবল প্রশান্তি পেতেই নয়, স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায়ও তরমুজ এগিয়ে। তরমুজে আছে লাইকোপেন, অ্যামাইনো অ্যাসিড, ভিটামিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও পানি। রূপচর্চায় ব্যবহার বা খাওয়া—দুভাবেই তরমুজের উপকারিতা পাওয়া সম্ভব।

ছবি: প্রথম আলো

গুণাগুণ

গরমের ফল তরমুজে আছে পটাশিয়াম, ভিটামিন এ, সি ও বি। এ ছাড়া এই ফলে রয়েছে লাইকোপেন ও প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। মজার ব্যাপার হলো, লাইকোপেনের উপস্থিতির কারণেই এমন লাল টকটকে হয়ে থাকে তরমুজ। আর এসব উপাদানের উপকারিতাও কিন্তু বিশাল। গবেষণায় দেখা গেছে, তরমুজে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট স্ট্রোকের মতো ঝুঁকি কমায় আর উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তরমুজে ফ্যাটের পরিমাণ একেবারেই কম আর রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি। গবেষণায় আরও পাওয়া গেছে, তরমুজে থাকা উপাদান লাইকোপেন মানবদেহের কয়েক ধরনের ক্যানসারের বিরুদ্ধে খুব ভালো কাজ করে।

গরমে পানির ঘাটতি কমাতে

তরমুজে পানির পরিমাণ ৯২ ভাগ পানি। তাই শরীরকে ঠান্ডা করতে ও পানিশূন্যতা কমাতে তরমুজ অতুলনীয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ক্যাফেইনের তুলনায় তরমুজ অনেক গুণ বেশি উপকারী। তাই ক্যাফেইন কমিয়ে বেশি বেশি তরমুজ খাওয়া উচিত।

ছবি: পেকজেলসডটকম

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে

করোনার এই সময়ে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা আমরা অনেকটাই বুঝতে পেরেছি। আর যেসব খাবার খেলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, তার মধ্যে একটি হলো সহজলভ্য রসাল ফল তরমুজ। তরমুজ সি ও বি৬-এ সমৃদ্ধ। আর এ দুটি উপাদান শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে। তাই গরমের এই সময়ে বেশি বেশি খেতে হবে তরমুজ।

রোদের তীব্রতার প্রভাব কমাতে

গরমের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। তাই গরমে হঠাৎ করেই হতে পারে হিট স্ট্রোক। তরমুজ মস্তিষ্ক ও শরীরকে রাখে ঠান্ডা আর শক্তি সঞ্চার করে; যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

ত্বক ও চুলের যত্নে

তরমুজের আরেকটি গুণ হলো এটি চুল ও ত্বকের জন্য উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন সি চুল ও ত্বকে শক্তি সঞ্চার করে। জার্মানির একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, লাইকোপেন ও বিটা ক্যারোটিন ত্বককে রোদে পোড়া থাকে রক্ষা করে। তাই বলা যায়, রোদে পোড়া ত্বকের একটি ভালো সমাধান তরমুজ । এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ভিটামিন এ; যা ত্বকের জন্য খুব উপকারী। ত্বকের ক্ষয় কমানো ও নতুন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে ভিটামিন এ। এক চামচ তরমুজের রস ও টক দই মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ও মলিন ত্বকে দারুণ কাজ করে এটি। বলাই যায়, খাওয়া ছাড়াও রূপচর্চায় এই ফল বিশেষ কার্যকর।

ছবি: পেকজেলসডটকম

স্বাস্থ্যকর হার্ট পেতে

তরমুজে থাকে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন। গবেষণায় দেখা গেছে, এই উপাদান হার্টকে সুস্থ রাখে ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমায়। এ ছাড়া এ ফলে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড ব্লাড প্রেশার কমাতে দারুণ কাজ করে।

তীক্ষ্ণ দৃষ্টির জন্য

আমরা সবাই জানি, চোখের সুস্থতার জন্য ভিটামিন এ–র বিকল্প নেই। আর এক ফালি তরমুজেই আপনি প্রতিদিনের প্রয়োজনের ৯-১১ ভাগ ভিটামিন এ পেয়ে যাচ্ছেন; যা আপনার চোখের স্বাস্থ্যকে সুরক্ষিত রাখবে; বাড়াবে দৃষ্টিশক্তি।

ব্যায়ামের সুফল পেতে

ব্যায়াম শারীরিক সুস্থতার জন্য দরকার। তবে আপনি কি জানেন, ব্যায়াম করার পর তরমুজ খেলে ব্যায়ামের সুফল পাওয়া যাবে আরও দ্রুত। তরমুজে থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, অ্যামাইনো অ্যাসিড, পটাশিয়াম, মিনারেল ব্যায়ামের পর পেশিতে শক্তি জোগায়।

ছবি: পেকজেলসডটকম

তরমুজের পুষ্টিগুণ

এক কাপ তরমুজের টুকরা খেলে আপনি প্রায় ৪৫ ক্যালরি শক্তি পাবেন। চিনি বা শর্করা, এক গ্রাম পরিমাণ আঁশ এবং শূন্য পরিমাণ চর্বি বা ফ্যাট পাবেন ১০ গ্রামের মতো। এই পরিমাণ তরমুজ খেয়ে আপনি প্রতিদিন ভিটামিন এ–র চাহিদার ৭ শতাংশ ও ভিটামিন সির ২১ শতাংশ পূরণ করতে পারবেন।

সূত্র: ওয়েবএমডি