আমাদের দেশে ব্যথা উপশমে সেঁক দেওয়ার প্রচলন অনেক আগের। বাড়িতে বয়স্ক ব্যক্তি থাকলে হট ওয়াটার ব্যাগ, আইসব্যাগ ইত্যাদির সমাহারও দেখা যায়। তবে একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক তাঁর রোগীকে ব্যথা উপশমে কখন কীভাবে গরম সেঁক বা ঠান্ডা সেঁক নিতে হবে, তা নির্ধারণ করে থাকেন।
ফিজিওথেরাপিতে থার্মাল থেরাপি বা তাপের সাহায্যে চিকিৎসা একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
থার্মাল থেরাপির সাহায্য খুব সহজে ব্যথা কমিয়ে আনা যায়। জেনে নেওয়া যাক কোন সময় গরম সেঁক ব্যবহার করলে সবচেয়ে বেশি সুফল
পাওয়া যাবে।
গরম সেঁক
যখন একজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় ভুগে থাকেন, তবে সেই ব্যথার স্থানে গরম পানির সেঁক খুবই কার্যকর। তাপ প্রয়োগে যেকোনো বস্তুর প্রসারণ ঘটে। এ নীতি অনুসরণ করে যখন দেহের কোনো অংশে গরম সেঁক দেওয়া হয়, তখন সেখানকার রক্তনালির প্রসারণ ঘটে এবং সেখানে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়। রক্তপ্রবাহ বাড়ার কারণে সেখানকার পেইন মেডিয়েটরস বা ব্যথা সৃষ্টিকারী রাসায়নিক, যেমন প্রস্টাগ্লান্ডিন, লিউকোট্রায়েন্স ইত্যাদি দ্রুত সরে যেতে পারে। নতুন রক্তপ্রবাহ চলাচল বেড়ে গিয়ে আক্রান্ত স্থানটির সেরে ওঠার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
তা ছাড়া প্রদাহ বা ব্যথার কারণে আক্রান্ত এলাকার মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়, যাকে আমরা ‘মাসল স্পাজম’ বলে থাকি। এই খিঁচুনি কমাতেও গরম সেঁক খুব ভালো কাজ করে। যেমন হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসের কারণে হওয়া দীর্ঘদিনের ব্যথা কমাতে গরম পানির সেঁক খুবই উপকারী।
বাড়িতে গরম সেঁক দেওয়া ছাড়াও কখনো কখনো হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় থার্মাল থেরাপি হিসেবে ইনফ্রারেড রে (আইআরআর), শক ওয়েভ ডায়াথার্মি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথার্মি, প্যারাফিন ওয়াক্স বাথ ইত্যাদি ইলেকট্রো থেরাপিউটিক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।
সহজলভ্য হিসেবে একটি হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি ভরে একজন রোগী বাসায় গরম সেঁক নিয়ে ব্যথা কমাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিবার ১০ থেকে ১৫ মিনিট করে দিনে ৩ থেকে ৪ বেলা গরম পানির সেঁক নেওয়া যাবে। তবে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, নয় তো অসাবধানতায় ত্বক পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যাদের স্নায়ু সমস্যা আছে বা অনুভূতি কম, যেমন ডায়াবেটিসের রোগী, তাদের একটু বেশি সতর্কতা দরকার।
ঠান্ডা সেঁক কখন
নতুন আকস্মিক ব্যথা বা কোনো আঘাত বা ইনজুরির ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত ‘প্রাইস’ পদ্ধতিতে (ইংরেজি শব্দ প্রোটেকশন, রেস্ট, আইস বা বরফ, কম্প্রেশন এবং এলিভেশনের প্রথম অক্ষর নিয়ে প্রাইস) মাধ্যমে চিকিৎসা খুবই কার্যকর। অর্থাৎ দেহে যখন নতুন কোনো আঘাত বা ইনজুরি হয়, তখন সেখানকার প্রদাহ কমাতে ৫ থেকে ৭ মিনিট করে দুই ঘণ্টা পরপর বরফের সেঁক দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন অ্যাকিউট পেইন বা অ্যাকিউট পিএলআইডি, যার সময়কাল ০ থেকে ৭ দিন, তখন বরফ সেঁক খুবই ফলপ্রসূ।
কোনো স্থানে ফোলা থাকলেও বরফের সেঁক খুবই কার্যকর। বরফের সেঁক দিলে প্রথমে সেখানে রক্তনালি সংকুচিত হয়। এতে ইনফ্লামেটরি মেডিয়েটরস বা প্রদাহ সৃষ্টিকারী রাসায়নিক সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। ঠিক তার ১০ মিনিট পর রক্তনালিগুলো প্রসারিত হয়ে যাবে। একে ‘লুইস হান্টিং রিঅ্যাকশন’ বলা হয়। তখন আবার বর্ধিত রক্তনালি জমা হওয়া পেইন মেডিয়েটরগুলো সরিয়ে নিয়ে যাবে। এতে ব্যথা ও প্রদাহ দুটিই কমে আসবে।
স্পোর্টস ইনজুরি বা ট্রমার ক্ষেত্রে ক্রায়োথেরাপি বা বরফ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার অন্যতম একটি হাতিয়ার।
কখনো পুরোনো ব্যথার ক্ষেত্রেও মাংসপেশির খিঁচুনি কমাতে বরফের সেঁক খুব কাজ করে থাকে। এ জন্য দিনে ৪ থেকে ৫ বেলা প্রতিবার ৫ অথবা ১৫ মিনিট করে বরফের সেঁক নেওয়া যাবে। বরফের সেঁক দেওয়ার জন্য সার্কুলার (বৃত্তাকারে ঘুরিয়ে) গতি কিংবা স্ট্রোকিং (এক জায়গায় চেপে চেপে) নিয়মে দেওয়া যেতে পারে।