শোকের বাড়িতে যা করবেন না
আজকাল নাকি কেবল জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে আর উৎসব ছাড়া পরিচিতদের সবার সঙ্গে দেখাই হয় না। এতটাই ব্যস্ত সবাই। আর এমন সব মুহূর্তে যখন চেনাজানা কিংবা আধা চেনা মানুষেরা একত্র হন, তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী অপরের জন্য শুভেচ্ছা কিংবা সান্ত্বনামূলক নানান কথাই বলেন তাঁরা। তবে বাস্তবতা হলো, সব কথা সব মুহূর্তে মানানসই নয়। যাঁকে বলা হচ্ছে, তাঁর খারাপ লাগার মতো কোনো আচরণ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখাই সমীচীন। তবে কোথায় কোন পরিস্থিতিতে কোন কথা বলা উচিত, অনেকেই তা অনেক সময় ভুলে যান কিংবা বুঝে উঠতে পারেন না।
মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়েও কেউ কেউ এমন কথা বলে বসেন, যাতে তাঁর আপনজনদের মনে আঘাত লাগে। এমনিতেই আপনজনকে হারিয়ে তাঁরা শোকে মুহ্যমান, তার ওপর অন্যের নেতিবাচক আচরণে সেই মুহূর্তে তাঁরা বিপন্ন বোধ করতে পারেন। দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে এমন আচরণ কাম্য নয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন বলছিলেন, ‘একজন ব্যক্তি নিজের ভেতরে যে মূল্যবোধকে লালন করেন, তাঁর আচরণে সেটিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তিনি যে পরিবেশ থেকে এসেছেন এবং যে ধরনের আচরণে নিজে অভ্যস্ত, তার প্রতিফলন ঘটে তাঁর কথাবার্তায়, আচরণে।’ তিনি আরও জানান, সংস্কৃতি ও সমাজের ধারার ভিন্নতার কারণে একই আচরণের অর্থ একেক সমাজে একেক রকম দাঁড়ায়। তাই অবশ্যই স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় রাখতে হবে।
ব্যক্তি ও পরিবার সম্পর্কে নেতিবাচকতা
মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলবেন না।
আমরা কেউই দোষত্রুটির ঊর্ধ্বে নই। মৃত ব্যক্তির দোষত্রুটি, বদভ্যাস নিয়ে কথা বলা উচিত নয়। ধূমপায়ী ব্যক্তি ফুসফুস ক্যানসারে মারা গেলে কিংবা স্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীন ব্যক্তি রোগে ভুগে মারা গেলে, সেখানে ধূমপান কিংবা উদাসীনতা প্রসঙ্গে কোনো কথা বলা উচিত নয়। উল্টোটাও খেয়াল রাখুন। কেউ হয়তো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে খুব সচেতন থাকতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি কোনো জীবাণুর সংক্রমণে মারা গেলেন। এ ক্ষেত্রে ‘এত সচেতন হয়ে লাভ কী হলো’ ধরনের কথা বলা যাবে না।
কথা বলার সময় মৃত ব্যক্তির পারিবারিক অশান্তি কিংবা পরিবারের কারও দোষত্রুটি উল্লেখ করবেন না। ‘অমুককে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগে ভুগে মানুষটা অকালে চলে গেল’—এমন বাক্য বলা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। মৃত ব্যক্তির নিজের কিংবা তাঁর পরিবারের কারও অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কিংবা চিকিৎসা বা অন্য কোনো বিষয়ে পারিবারিক সিদ্ধান্তটি ভুল হওয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে—এমনটাও বলবেন না।
মৃত ব্যক্তির পরিবারের কাউকে অযথা কথা বলে আটকে রাখবেন না। প্রয়োজনে তাঁকে সাহায্য করুন।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অবাঞ্ছিত আলাপ
‘উনি তো কিছুই গুছিয়ে যেতে পারলেন না’, ‘ছেলের এখনো পড়ালেখা শেষ হয়নি’, ‘মেয়ের এখনো বিয়ে হয়নি’, ‘কারও মাথা গোঁজার ঠাঁই রেখে যেতে পারলেন না’, ‘ওকে এখন কে দেখবে’, ‘তুমি তো একলা হয়ে গেলে’—এ ধরনের কথা বলবেন না। ‘তোমাদের বাড়ির কাজ কত দূর হলো?’, ‘অমুকের পড়ালেখা কত দিন বাকি?’, ‘সম্পত্তির বিষয়ে কী ভাবছ?’ এসব প্রশ্নও করবেন না। বাড়তি কথা না বলে কেবল জড়িয়ে ধরে কিংবা মাথায় হাত রেখেও সান্ত্বনা দেওয়া যায়।
পোশাক–পরিচ্ছদ: এমন পোশাক পরবেন না, যা দৃষ্টিকটু
খুব উজ্জ্বল রঙের কিংবা অত্যাধুনিক ধারার পোশাক পরবেন না, যা মৃত বাড়িতে মানায় না। খেয়াল রাখুন, পোশাকের মাধ্যমে যাতে অন্যের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি নেতিবাচকতা প্রকাশ না পায়। সাজের ক্ষেত্রেও একই বিষয়, কেউ যেন আপনাকে দেখে বিরক্তি প্রকাশ না করেন।