আপনার জীবনধারা অন্য কারও সঙ্গে না মিলতেই পারে
আপনার জীবনধারা অন্য কারও সঙ্গে না মিলতেই পারে। মনের কথাটাই শুনুন। আপনাকে দেখাবে আলাদা।
যুগের সঙ্গে ফ্যাশনধারা বদলালেও সবাই কিন্তু নিজেকে বদলান না। আসলে অন্য কারও মতো হওয়ার বা অনুসরণ করার প্রয়োজনই পড়ে না, আপনার নিজের ভেতর যদি থাকে আত্মবিশ্বাস। আপনার মতো হয়েই আপনি অনন্য। ফ্যাশনধারায় যা জনপ্রিয়, তাতে আপনি স্বচ্ছন্দ না-ও হতে পারেন। বন্ধুরা সবাই চুল কাটাচ্ছেন বলে যে আপনাকেও নিজের চুল ছেঁটে ফেলতে হবে, তা নয়। হয়তো আপনার স্বপ্ন, মায়ের বিয়ের শাড়িতে বউ সাজবেন। অনেকে আবার পোশাক পরিপাটি না হলে আত্মবিশ্বাস বোধ করেন না। মাথা থেকে পা পর্যন্ত চলতি ধারায় সাজিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে পছন্দ করেন। এই চর্চা হয়তো তাঁর দৈনন্দিন জীবনেও বাড়তি ছন্দ যোগ করে। আপনার জীবনধারা অন্য কারও সঙ্গে না মিলতেই পারে। মনের কথাটাই শুনুন। আপনাকে দেখাবে আলাদা।
ব্যক্তিত্বের ছটা
অভিনেত্রী অপি করিম সাদামাটা থাকতেই ভালোবাসেন। উৎসব-আয়োজনেও আরামদায়ক, সুতি পোশাক বেছে নেন। কখনো চলতি ফ্যাশনধারায় গা ভাসাননি। মা, খালা, বোনেদের সাদামাটা পোশাকে দেখেছেন শৈশব থেকেই। কাজল বা টিপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাঁদের সাজসজ্জা। পরিবারের কাউকেই কখনো প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রসাধন ব্যবহার করতে দেখেননি তিনি। একই ধারায় থেকেছেন অপি। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। তাঁর বৈশিষ্ট্য এবং ব্যক্তিত্ব একটি অন্যটির পরিপূরক। শিক্ষাও ব্যক্তিজীবনে প্রভাব ফেলে। একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব, সাজপোশাক সব মিলিয়ে তাঁর একটা প্রতিচ্ছবি আমাদের মনে তৈরি হয়ে যায়।
গায়ের রং কিংবা চুলের ধরন–ধারণ বদলানোর প্রচেষ্টায় কখনোই সেই মানুষের সত্যিকার কোনো রূপান্তর ঘটে না।’ নাটকের চরিত্রের জন্য একবার তাঁকে চুলের রং বদল করাতে হয়েছিল। প্রয়োজন শেষে নিজের চুলের আসল রংই ফিরিয়ে এনেছিলেন। সবাই যখন চুল রঙিন করে তুলছেন, তখন কারও চুল কালো থাকলেই যে তিনি ফ্যাশনদুরস্ত নন, এমনটা তো নয়। বরং সবার রঙিন চুলের ভিড়ে তাঁর কালো চুলই অনন্য। মেকআপের বেলায়ও তাই। উঁচু জুতা পরে নিজেকে লম্বা হিসেবে উপস্থাপনও করতে চান না অপি। তিনি যেমন, তেমনভাবেই থাকতে পছন্দ করেন। তবে তিনি ফ্যাশনধারা অনুসরণের বিরোধীও নন। তিনি মনে করেন, ফ্যাশনধারা কারও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই হলে তিনি তা অনুসরণ করতে পারেন অনায়াসেই।
আত্মবিশ্বাসটাই বড়
‘সাজপোশাকের ক্ষেত্রে নিজের স্বাচ্ছন্দ্যকে সব সময় গুরুত্ব দিয়েছি। নিজের কাছে যা ভালো লাগে, সেটাই বেছে নিয়েছি। ফ্যাশনধারা অনুসরণ করিনি। আমার মনে হয়, আত্মবিশ্বাসই সবচেয়ে বড় ফ্যাশন,’ বলেন অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা। ফ্যাশনধারা অনুসরণ করতে গিয়ে অনেকে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করেন। সাজপোশাকের কারণে কারও কারও স্বাভাবিক গতিও মন্থর হয়ে পড়ে। এমন অনুকরণপ্রিয়তার চেয়ে নিজের পছন্দ এবং আরামটাই গুরুত্ব পায় নাবিলার কাছে।
একজন মা হিসেবে এখন সুতি, ঢিলেঢালা, স্বস্তিদায়ক পোশাকই ভালো লাগে নাবিলার। কুর্তা ও লেগিংস কিংবা ট্রাউজার আর টি-শার্টের মতো পোশাক বেছে নেন, যাতে ঝটপট পরিপাটি হয়ে ওঠা যায়। উৎসবের উপলক্ষ ছাড়া উঁচু জুতাও আর পরেন না এখন।
সাজের মানুষের সাজ
সাজপোশাক ও অনুষঙ্গের ক্ষেত্রে নিজের ভালো লাগাকেই গুরুত্ব দেন মিউনিস ব্রাইডালের রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন। পাথরের আংটি পরেন সব সময়। বাইরে গেলেই ঘড়ি পরেন। পোশাকের সঙ্গে মানানসই জুতা বেছে নেন। তিনি বলেন, ‘সব সাজে সবাইকে মানায় না। ফ্যাশনদুরস্ত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো ধারায় সবাইকেই চলতে হবে, এমন ভাবনাকে ঠিক মনে করি না। অভ্যস্ততার বিষয়টিও মাথায় রাখা প্রয়োজন।’
প্রত্যেকেই আলাদা
‘কেউ কারও মতো হতে পারে না। বরং নিজস্ব সৌন্দর্যে প্রত্যেকেই আলাদা হয়ে ওঠেন। তাই সাজপোশাক বেছে নেওয়ার আগে নিজের অস্তিত্বকে অনুভব করতে হবে। নিজেকে ভালোবাসতে হবে সব সময়। নিজের ভালো লাগাটাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নিজস্বতার মধ্যেই আছে সত্যিকার সৌন্দর্য,’ এমনটাই বলেন অনলাইন উদ্যোগ হেনাস ক্লসেট বাই রিফাত রেজার ডিজাইনার রিফাত রেজা। তা ছাড়া ফ্যাশনধারা অনুসরণ করতে গিয়ে স্থান, কাল, পাত্র ভুলে যাওয়াও উচিত নয় বলে মনে করেন এই ফ্যাশন ডিজাইনার। ব্যক্তিগতভাবে খাদি আর সুতি কাপড় তাঁর ভীষণ পছন্দ। উৎসবে মসলিনও পরেন।
চাই পরিমিতিবোধ
রাজধানীর কাকরাইলের ভ্যাট এবং আয়কর পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিসিবি অ্যাসোসিয়েটসের আয়কর পরামর্শক এবং পরিচালক চন্দ্র মল্লিকা জীবনধারায় পরিমিতিবোধটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। তাঁর মতে, ফ্যাশনধারায় নিজেকে প্রকাশ করা হয়। তবে এর প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দিতে যেমন বাড়তি সময় যায়, তেমনি এই অতিরিক্ত ভাবনা আমাদের ভাবনার জগতের একটা বড় অংশকে দখল করেও রাখে। ক্ষুদ্র মানবজীবনে প্রয়োজনীয় কাজের তালিকাটা তো ছোট নয়। পরিপাটি সাজেই তাই সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন এই নারী।