কেন একটা ময়লার ভাগাড় কেনার জন্য মরিয়া হয়েছেন এই ব্যক্তি

জেমস হাওয়েলসছবি: সংগৃহীত

জেমস হাওয়েলস। বয়স ৩৯ বছর। তিন সন্তানের জনক। অবাক করা ব্যাপার হলো, একটা ভাগাড় কেনার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। তাঁর এই পরিকল্পনায় চিন্তায় পড়ে গেছেন অর্থনীতিবিদ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাবিদেরা। সত্যিই তো, এত কিছু থাকতে এই লোক কেন ভাগাড় কিনতে চাইছেন?

ঘটনার সূত্রপাত ২০১৩ সালে। ওয়েলসের দক্ষিণ-পশ্চিম তীরের নিউপোর্ট শহরে। জেমস হাওয়েলসের ব্যবসায়িক অংশীদার এক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললেন। ময়লা-আবর্জনার সঙ্গে একটা অতিপ্রয়োজনীয় হার্ডড্রাইভ ফেলে দিলেন ভুল করে। সেই হার্ডড্রাইভ খুঁজে বের করার জন্যই মরিয়া হয়ে উঠেছেন জেমস। শুরু থেকেই ভাগাড় খননের অনুমতি পাওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন তিনি। কিন্তু তাতে বাদ সেধেছে কর্তৃপক্ষ। নিউপোর্ট সিটি কাউন্সিলের তরফ থেকে এই ঘাঁটাঘাঁটির অনুমতি মিলছে না। কাউন্সিলটি বলছে, ভাগাড়ের আবর্জনা খনন করতে গেলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। আদতে একজনের ব্যক্তিগত আগ্রহে এমন একটা কাজের অনুমতি দিতে যে তাঁরা রাজি নন, সেটিও বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট।

বিটকয়েন
ছবি: রয়টার্স

কী এমন ছিল সেই হার্ডডিস্কে? আট হাজার বিটকয়েন! বর্তমান পৃথিবীতে যা ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলারের (প্রায় ১২ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা) সমান! স্বাভাবিকভাবেই এই মহামূল্যবান সম্পদের খোঁজে মরিয়া হয়ে আছেন জেমস। কিন্তু গোটা একটা ভাগাড়ে জমা হওয়া রাজ্যের সব ময়লা-আবর্জনা ঘেঁটে, ভাগাড় খুঁড়ে একটা হার্ডড্রাইভ খুঁজে পাওয়াও তো চাট্টিখানি কথা নয়! তবে সেই অসম্ভব কাজটাই করতে চান তিনি।

বারবার আবেদন করেও অবশ্য অনুমতি মেলেনি। তাতে দমে যাওয়ার পাত্র নন জেমস হাওয়েলস। আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে বিষয়টা। যুক্তরাজ্যের হাইকোর্টও কিন্তু ‘খড়ের গাদায় সুঁই খোঁজা’র সমতুল্য উল্লেখ করে এই কাজের অনুমতি দেননি তাঁকে। অবশ্য এখানে ‘খড়ের গাদা’ হলো ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন আবর্জনা আর ‘সুঁই’টা এমনই এক মহামূল্যবান বস্তু, যার মূল্য অধিকাংশ ছোটখাটো দেশের জিডিপির চেয়ে বেশি! তবে ভাগাড় খননের এই বিশাল কর্মযজ্ঞকে সহজ করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তা নেবেন বলেও জানিয়েছেন জেমস।

দমে যাওয়ার পাত্র নন জেমস হাওয়েলস
ছবি: সংগৃহীত

আইনগত দিক থেকেও সুবিধা করতে না পেরে এবার নিজেই ভাগাড়ের মালিক হয়ে উঠতে চাইছেন তিনি। নিজের মালিকানাধীন ভাগাড় খোঁড়াখুঁড়ি করলে তো কারও কিছু বলার থাকবে না! ভাগাড় কেনার বিষয়েই এখন বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে বলে সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছেন জেমস হাওয়েলস।

তবে তাঁর জন্য বেশ দুশ্চিন্তার খবরও আছে একটা। ভাগাড়টির কিছু অংশ সৌরশক্তিকেন্দ্র করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি জেমসের কাঙ্ক্ষিত হার্ডড্রাইভটি ভাগাড়ের ওই অংশেই থেকে থাকে আর সত্যিই যদি তা তিনি কিনতে পারার আগেই সৌরশক্তিকেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়ে যায়, তাহলে তো সব চেষ্টাই বরবাদ! সৌরশক্তিকেন্দ্রের কল্যাণে নিউপোর্ট শহর আলোকিত হয়ে উঠলেও জেমস রইবেন নিরাশার অন্ধকারে। তাঁর বক্তব্য, তাঁকে হার্ডড্রাইভটি খুঁজে বের করার সুযোগ দেওয়া হলে বিটকয়েনের সেই সম্পদের বিনিয়োগে ভর করে নিউপোর্ট শহর লাস ভেগাস বা দুবাইয়ের মতো ঝলমলে হয়ে উঠতে পারত। তবে কর্তৃপক্ষ কিন্তু এখনো সেই ‘সাদামাটা’ সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্রের আলোর পরিকল্পনাতেই আছে! দেখা যাক, ভাগ্য এই দারুণ আত্মপ্রত্যয়ী মানুষ জেমস হাওয়েলসের সহায় হয় কি না!

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুন