মেঘলা দিনে মন খারাপ হলে কী করবেন

বর্ষাকাল। আকাশজুড়ে মেঘের পর মেঘ। নামছে বৃষ্টিও। এমন দিনে আপনিও হয়তো শৈশবের হুল্লোড়ের দিনগুলোর কথা ভেবে আনমনা হয়ে পড়েন। প্রিয় কারও জন্য হয়তো মন কেমন করে ওঠে। কবি জীবনানন্দ দাশের ভাষায়, ‘সব কাজ তুচ্ছ হয়—পণ্ড মনে হয়, সব চিন্তা–প্রার্থনার সকল সময় শূন্য মনে হয়, শূন্য মনে হয়।’ অর্থাৎ মেঘ-বৃষ্টির ধূসর দিনে মন খারাপের একটা অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন অনেকে। এমন হলে কী করবেন? কেবল মুঠোফোন স্ক্রল না করে আরও যা করতে পারেন, তা জেনে নিন এখানে...

বৃষ্টি নামলে আপনিও হয়তো শৈশবের হুল্লোড়ের দিনগুলোর কথা ভেবে আনমনা হয়ে পড়েনছবি: প্রথম আলো

উষ্ণ পানীয়

ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা কিংবা কফিই হয়ে উঠতে পারে আপনার মনমেজাজ ঠিক রাখার এক মোক্ষম হাতিয়ার। আয়েশ করে একটু বসুন। উপভোগ করুন সুস্বাদু পানীয়র সতেজতা।

প্রিয় খাবার

বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি তো হতেই পারে। এর বাইরে পছন্দের কোনো খাবার রেঁধে ফেলতে পারেন। রান্নাবান্নার ঝামেলায় যেতে না চাইলে অবশ্য রেস্তোরাঁই ভরসা। বৃষ্টির দিনে বাড়িতে ফরমাশ দিতে পারেন রেস্তোরাঁর খাবার।

ঘরজুড়ে থাকুক সুঘ্রাণ

বর্ষার সুগন্ধি ফুল রাখতে পারেন ঘরে। বেলি ফুলের একটা মালার কথাই ভাবুন। ঘরের এক কোণে রাখলেও সেটির সতেজ অস্তিত্ব অনুভব করতে পারবেন আপনি।

বই হোক সঙ্গী

বই তো সব সময়েরই বন্ধু। এই বন্ধুকে কাছে রাখুন বৃষ্টির দিনেও। মেঘলা দিনে বিছানা ছাড়তেই মন চায় না? বিছানাতেই রাখতে পারেন দু–একটি বই। খানিকটা বাড়তি সময় শুয়ে থাকলে বই পড়ুন, মন ভালো হবে।

প্রিয় শব্দমালা কিংবা সিনেমা

চোখ বুজে শুনুন বৃষ্টির শব্দ। বাড়িতে বসেই শুনতে পারেন অন্য কোনো প্রিয় শব্দ। অনলাইনে এমন কোনো শব্দের ক্লিপ খুঁজে বের করে নিতে পারেন। ঝরনার শব্দ, বৃষ্টির শব্দ, পাখির ডাক—যা মন চায়। চোখ বুজে শুনুন। অনুভব করুন। দারুণ কোনো কবিতা শুনতে পারেন। নিজেও আবৃত্তি করতে পারেন। পছন্দের কোনো সিনেমাও দেখতে পারেন চাইলে।

রাতের আলোকবিন্যাসে ভিন্নতা

বৈদ্যুতিক বাতি নিভিয়ে দিয়ে মোম জ্বালাতে পারেন ঘরের এক কোণে। মাটির পাত্রে মোম আর পানিতে ফুলের পাপড়ি ভাসিয়ে দিলে ঘরের আবহ বদলে যাবে।

নিজের যত্ন নিন

নিজের প্রতি মনোযোগী হোন। নিজের যত্ন নিন মেঘলা দিনে। অকারণে সাজতে পারেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খেলতে পারেন লুডু, দাবা কিংবা ক্যারমের মতো খেলা। কিংবা ছেলেবেলার ‘চোর ডাকাত বাবু পুলিশ’ খেলাতেও খুঁজে পেতে পারেন নির্মল আনন্দ।

অন্য কারও যত্ন নিন

অসহায় কারও পাশে দাঁড়াতে পারেন। বৃষ্টির দিনে শ্রমজীবী মানুষের কাজের অভাব হতে পারে। এমন কাউকে আপনার তরফ থেকে কিছু উপহার পাঠাতে পারেন, যা দিয়ে তিনি একটা দিন চলতে পারেন। পথের অসহায় প্রাণীকে আশ্রয় দিতে পারেন নিজের ঘরে কিংবা বাড়ির গ্যারেজে। ধরুন, বাড়ির গ্যারেজে দুটি কুকুরের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করলেন আপনি। বাড়ির সবার সহযোগিতা নিয়েই আপনি এই গ্যারেজটিকে ওদের দুঃসময়ের আশ্রয় হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। বছরজুড়েই থাকুক ওরা। ওদের জন্য পানির পাত্র রাখুন এক পাশে। নিয়মিত পানি বদলে দিন। টুকটাক খাবার দিন। আপনার মাধ্যমে এই বর্ষাতেই আশ্রয় হোক এমন কোনো প্রাণের। মন খারাপ বিদায় করার জন্য এ এক দারুণ উদ্যোগ।

না হয় একটু ভিজলেনই

বৃষ্টিতে হুটোপুটি করার বয়স পেরিয়ে এলেও বৃষ্টিতে ভেজা আপনার জন্য বারণ নয়। বজ্রবৃষ্টি না হলে ঘরের বাইরে যেতে পারেন। চাইলে সঙ্গে নিতে পারেন ছাতা। না-ও নিতে পারেন। কিংবা হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন বারান্দা বা জানালার গ্রিল দিয়ে। ছাদে গিয়েও ভিজতে পারেন। পথের ময়লা পানি আর কাদা ছিটে আসার ভয়টাকেও বিদায় করে দিন।

ঘুরতে পারেন আরও কোথাও

চাইলে এমন কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন, যে জায়গায় অবস্থানের সময় আপনাকে ভিজতে হবে না। কেবল যানবাহনের বন্দোবস্ত হলেই হলো। রেস্তোরাঁ, জাদুঘর, কিংবা প্রিয় বন্ধুর বাড়িতে কাটাতে পারেন কিছুটা সময়।

সূত্র: ফোর্বস ও রিডার্স ডাইজেস্ট