২০ বছর বয়সটা কেন জীবনের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং সময়
বিশের কোটাকে ধরা হয় জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। কিশোর থেকে যুবক হওয়ার বয়সে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোই বদলে দিতে পারে জীবনের গতি। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশের সময়টা শুধু কঠিনই নয়, চ্যালেঞ্জিংও। জীবনের এই চ্যালেঞ্জিং সময়টা ঠিকঠাক পাড়ি দিতে পারলেই অপেক্ষা করে সুন্দর ভবিষ্যৎ।
ভিন্ন এক জগৎ
স্কুল–কলেজের গণ্ডি পার করতে করতেই কেটে যায় জীবনের প্রথম দুই দশক। বেশির ভাগ তরুণেরই কর্মক্ষেত্রের প্রথম অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রেখে। বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে আস্তে আস্তে তাঁরা বুঝতে শুরু করেন, স্কুল-কলেজে অর্জন করে আসা পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞান কর্মক্ষেত্রে অনেকটাই অকেজো। অনেকে আবার পড়াশোনার ক্ষেত্র ছেড়ে যোগ দেন ভিন্ন কোনো পেশায়। তাঁদের জন্য চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি।
কর্মক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মূল্যায়িত হয় অভিজ্ঞতা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের পরিবেশ থেকে যিনি যত দ্রুত শিখতে পারবেন, কর্মক্ষেত্রে তাঁর উন্নতির গ্রাফটাও ঠিক সেভাবেই বৃদ্ধি পাবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করার পর থেকেই অভিজ্ঞতা অর্জনে নজর দেওয়া জরুরি। এতে কর্মক্ষেত্রে সমসাময়িক যে কারোর থেকে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকা সম্ভব।
সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার করে কী করব, সেটা নিয়ে মাথায় ঘুরপাক খায় নানা চিন্তা। কারও মনে হয়তো থাকে ব্যবসার চিন্তা। কেউ হয়তো চাকরিতেই দেখেন নিজের ভবিষ্যৎ।
যে বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, সে–বিষয়ক চাকরিই করবেন, না নতুন কোনো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবেন, তা নিয়েও দোটানায় ভোগেন অনেকে। জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা খারাপ কিছু নয়। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে ধারণা রাখতে হবে নিজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও চাপ নিতে পারার ক্ষমতা সম্পর্কে।
নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই
শিক্ষাজীবনের বিশাল একটা সময় ভালো ফলাফলের জন্য লড়াই করতে করতেই কেটে যায়। একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অদৃশ্য একটা লড়াই সহপাঠীদের সঙ্গে সব সময়ই চলত।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সেটা হয়ে ওঠে নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই। নিজেকে কতটা ছাড়িয়ে যেতে পারেন, বর্তমান পৃথিবীর সঙ্গে নিজেকে কতটা মানিয়ে নিতে পারেন, মূল লড়াইটা শুরু হয় সেখানেই। নিয়ত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে নিজেকে নিয়মিত আপডেট না করলে পিছিয়ে পড়াটা অবধারিত। তাই সময়টা নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়ার।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতার অভাব
বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে পকেটের সঙ্গেও টানাপোড়েনের সম্পর্ক শুরু হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে মা–বাবার কাছে হাত পাততে দ্বিধা ছিল না। কিন্তু চাকরি করার বয়সে এসে পরিবারের কাছে টাকাপয়সা চাইতে আত্মসম্মানে লাগে। চাকরি জোগাড় হলেও সীমিত বাজেটের ভেতর কীভাবে নিজেকে সামলে রাখা যায়, সেই চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে।
সম্পর্কে টানাপোড়েন
আপনি যখন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, নিজের জন্য সময় বের করাটাই যখন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠছে, তখনই হয়তো প্রেমিকার জন্য ভালো পাত্রের সন্ধান করছেন তাঁর মা–বাবা। কর্মক্ষেত্রে পা রাখতে না রাখতেই সম্পর্কের বাড়তি প্রেশার পড়তে পারে জীবনে। এমন সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া থাকলে পরিবারকে সামাল দেওয়া অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
নিজেকে সময় দিতে না পারা
বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শেষবেলায় এসে যুক্ত হয় বাড়তি একাডেমিক চাপ। সেই সঙ্গে থাকে নতুন চাকরিতে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ। সব সময় নিজেকে প্রমাণ করার লড়াইয়ে নিজের জন্য আলাদা করে সময় বের করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
কর্মব্যস্ত জীবন এতটাই আষ্টেপৃষ্ঠে চেপে ধরে যে দম ফেলার ফুরসতও পাওয়া যায় না। তবে যত কঠিনই হোক না কেন, অন্তত সপ্তাহের শেষে কিছুটা সময় নিজের জন্য আলাদা করে রাখা উচিত। নিজের অবসরকে নিজের মতো করে উপভোগ করুন। যত কঠিন সময়ই আসুক না কেন, স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলাটা কখনোই ভালো সিদ্ধান্ত নয়।
তবে যত বাধাই আসুক না কেন, ২০ বছর বয়স হলো ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে তৈরি করার সময়। অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া, তা উতরে নিজেকে প্রমাণ করা—এমন থ্রিল কি আর কখনো পাওয়া সম্ভব?
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস, লাইফহ্যাক