নতুন বছরে যে ৭ প্রতিজ্ঞা করতে পারেন

নতুন বছর অনেকেই নতুন প্রতিজ্ঞা নিয়ে শুরু করেন। আবার জীবনের যেকোনো বাঁকে ও বছরের যেকোনো দিন জীবনটাকে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলার লক্ষ্যে কোনো বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতে পারেন যে কেউ। নতুন বছর তো কেবল উপলক্ষ মাত্র। জীবনকে সুন্দর করে তোলার দারুণ কোনো ভাবনা আপনি ভাবতে পারেন যেকোনো সময়।

যেকোনো লক্ষ্য ঠিক করার জন্য নতুন বছর একটি ভালো সময়মডেল: তামান্না রহমান, ছবি: কবির হোসেন

নিজেকে শুধরে নেওয়া

দোষেগুণে মিলিয়েই মানুষ। নিজের দোষগুলো শুধরে নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করতে পারেন। নিজের দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালন করার ব্রত নিন। হোক সেটা আপাতদৃষ্টে ছোট কাজ। তবু দায়িত্ব পালনে অবহেলা নয়। সময়ের কাজ সময়ে করুন। কাউকে রাগ দেখাবেন না। রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন। মিথ্যা বলবেন না। কেবল মিথ্যা বলা ছেড়ে দেওয়াটাও কিন্তু হতে পারে আপনার ‘নিউ ইয়ার রেজল্যুশন’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় কমিয়ে দিন। ধূমপান, মদ্যপান ও মাদক থেকে দূরে থাকুন।

সুন্দর কথার চর্চা

কথার আঘাত বড় কঠিন। কাউকে এমন আঘাত দেবেন না, এমনকি অন্য কেউ আপনাকে আঘাত করতে এলেও তাঁকে সুন্দর আচরণ দিয়ে বিরত রাখার চেষ্টা করুন। রিকশাচালক, নিরাপত্তারক্ষী, গৃহকর্মী, ছিন্নমূল মানুষ—সবার সঙ্গেই ভালো আচরণ করুন। কখনো চিৎকার-চেঁচামেচি করবেন না। পরচর্চা করবেন না। কেউ পরচর্চা করলে শুনবেনও না; বরং প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলবেন। সামনের দিনগুলোর জন্য কেবল এই বিষয়টিই হতে পারে আপনার অন্যতম প্রতিজ্ঞা। জীবনে যা পেয়েছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। অন্যের প্রশংসা করুন। ধন্যবাদ দেওয়ার চর্চা করুন।

পরিবেশবান্ধব জীবনাচরণ

পাটের তৈরি বাজারের ব্যাগ পরিবেশবান্ধব
ছবি: সংগৃহীত

পরিবেশবান্ধব পণ্য বেছে নিন। প্লাস্টিকজাতীয় সামগ্রী এড়িয়ে চলুন। পলিথিন বর্জন করুন। কোনো জিনিসের অপচয় করবেন না। অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করবেন না। নিত্যনতুন ফ্যাশন পণ্য কিনলেই যে আপনি ফ্যাশন–সচেতন, তা কিন্তু নয়; বরং অনেক পণ্যই রিসাইক্লিং বা আপসাইক্লিং করা যেতে পারে। পুরোনো জিনিসকে নতুনভাবে ব্যবহার করলে পরিবেশের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে না। গাছও লাগাতে পারেন।

নিজেকে ভালোবাসা

মহাবিশ্বের বুকে আপনি এক অনন্য অস্তিত্ব। অন্যকে অনুসরণ করতে গিয়ে নিজস্বতাকে বিসর্জন দেবেন না। নিজেকে ভালোবাসুন। নিন্দুকের কথায় কান দেবেন না। খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা, ঘুম ও মনের যত্নের প্রতি মনোযোগী হোন। রোজ অন্তত সাত ঘণ্টা ঠিকঠাক ঘুমটাও আপনার ‘নিউ ইয়ার রেজল্যুশন’ হতে পারে। রূপচর্চাও নিজেরই যত্ন। নতুন বই পড়ুন। প্রতি মাসে অন্তত একখানা করে বই পড়ুন। পুরোনো বইও পড়তে পারেন। যেকোনোভাবেই নিজেকে রোজ একটু করে সময় দিন। কাছের মানুষদের নিয়ে ভালো থাকুন।

নিজেকে ভালোবাসুন
ছবি: কবির হোসেন

মানবসম্পদবিষয়ক প্রতিষ্ঠান করপোরেট কোচ-এর মুখ্য পরামর্শক যিশু তরফদার বলেন, ‘একজন মানুষ সত্যিকার অর্থে ভালো থাকার জন্য নিজের সুস্থতা, পরিবারের সুস্থতার পাশাপাশি পেশাগত, আর্থিক, সামাজিক ও পরিবেশগত দিক থেকে ভালো থাকার বিকল্প নেই। এই ছয় বিষয়ের যেকোনো একটি ঠিক না থাকলে তিনি ভালো থাকতে পারেন না।’

কাজকে ভালোবাসা

প্রতিটি পেশাই সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই যে কাজে আছেন, সেটির গুরুত্ব উপলব্ধি করুন, সেটিকেই ভালোবাসতে শিখুন। আর্থিক দিক ছাড়াও কাজটির মূল উদ্দেশ্য খুঁজে বের করুন, উদ্দেশ্য তৈরি করুন। ভালোবেসে কাজ করতে করতে দক্ষ হয়ে উঠলে ভীষণ আনন্দ নিয়ে তা করতে পারবেন। কাজকে আপনার কাছে চাপ মনে হবে না। এমনটাই বললেন যিশু তরফদার। তারপরও কোনোভাবেই যদি বর্তমান পেশাকে ভালোবাসতে না পারেন, তাহলে নিজের ভালোবাসার কাজটি খুঁজে নিতে চেষ্টা করুন। আজকের পৃথিবীতে পেশা পরিবর্তনের জন্য বয়স কোনো বাধা নয়। চাইলেই আপনি পেশা বদলাতে ভিন্ন কোনো দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। তবে এ জন্য সময়, ধৈর্য, মনোবল ও ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে।

ভালোবেসে কাজ করতে করতে দক্ষ হয়ে উঠলে ভীষণ আনন্দ নিয়ে তা করতে পারবেন
মডেল: আসিফ ও সামিয়া। ছবি: প্রথম আলো

দক্ষতা অর্জন

পেশাগত উন্নতির স্বপ্ন তো সবাই দেখেন। তবে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে আপনাকে দক্ষ হয়ে উঠতেই হবে। যে পেশাতেই থাকুন না কেন, আজ থেকেই তাতে দক্ষতা অর্জনের প্রয়াস নিন। পেশাগত জ্ঞানকে নিয়মিত হালনাগাদ করুন, প্রশিক্ষণ নিন। আবার আশৈশব লালিত স্বপ্নটি পূরণ করা সম্ভব না হলেও আপনি সে কাজের চর্চা করতে পারেন আপনার পেশাগত অন্যান্য দায়িত্ব সামলে। এটিও আপনার পেশাগত জীবনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

ভালোবাসা প্রাণে প্রাণে

সৃষ্টিকুল বিশাল। মানুষ, অন্যান্য প্রাণী কিংবা উদ্ভিদ—সবার জন্যই উজাড় করে দিন আপনার মায়াময় ভালোবাসা। গাছের যত্ন সম্পর্কে জানুন। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ নিন। বাড়িতে পোষা প্রাণী আনতে পারেন, যদি সত্যিকার অর্থে সেটির দায়িত্ব নিতে পারেন। পথের প্রাণীর জন্য খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করুন। ছিন্নমূল মানুষের পাশে দাঁড়ান। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও প্রাণীদের জন্য কিছু করুন। স্বেচ্ছাশ্রম হিসেবে এমন অনেক কিছুই করতে পারেন।

সূত্র: রিডারস ডাইজেস্ট

আরও পড়ুন