রাষ্ট্রের মালামাল ধ্বংস করলে কী শাস্তি হতে পারে?
রাষ্ট্রীয় সম্পদ আসলে জনগণের সম্পদ। তাই কোনো রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি মানে দেশেরই ক্ষতি। দেশের সম্পদ রক্ষায় আইনও আছে নানা রকম। আসুন জেনে নেওয়া যাক, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করলে কী ধরনের শাস্তি হতে পারে।
আইনে কী বলা আছে
কোনো সরকারি সম্পদের ক্ষতি করলে দণ্ডবিধিতে এ জন্য শাস্তির বিধান আছে। দণ্ডবিধির ৪৩১ থেকে ৪৩৮ পর্যন্ত ধারাগুলোয় রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্টকারীদের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি কোনো সরকারি সড়ক, সেতু, নদী ও খাল এমনভাবে কোনো অনিষ্ট করে যে কারণে যোগযোগব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়, ভ্রমণ কিংবা পারাপারের জন্য কম নিরাপদ হয় বা হতে পারে, তাহলে সেটি একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। এ অপরাধে পাঁচ বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।
১০ টাকার ঊর্ধ্বে কোনো কৃষিসম্পদ কিংবা ১০০ টাকা বা তার বেশি মূল্যমানের কোনো সম্পদ আগুন বা বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে নষ্ট করলে ৭ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। কোনো উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত কিংবা মানুষের বসবাসের জন্য ব্যবহৃত কোনো ঘর আগুন বা বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে জ্বালিয়ে অনিষ্ট সাধন করলে দায়ী ব্যক্তিকে ১০ বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে যা বলা হয়েছে
আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ অনুযায়ী, কোনো স্থানে, বাড়িঘরে, দোকানপাটে, হাটে-বাজারে, রাস্তাঘাটে, যানবাহনে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে পরিকল্পিতভাবে বা আকস্মিকভাবে একক বা দলবদ্ধভাবে দাপট প্রদর্শন করে ভয়ভীতি বা ত্রাস সৃষ্টি করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে এমন অপরাধকে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী, সরকার বা কোনো সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট বা ভাঙচুর করাও আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ। এ আইন অনুযায়ী, যেকোনো আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ করলে অপরাধীকে সর্বনিম্ন ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। এ ছাড়া কোনো সরকারি বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা কোনো ব্যক্তির আর্থিক ক্ষতি করলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণও দায়ী ব্যক্তির কাছ থেকে আদায় করার বিধান আছে। কোনো ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ করতে সহায়তা করলেও দায়ী ব্যক্তি যে শাস্তি ভোগ করবে, সহায়তাকারীকেও সেই শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ অপরাধের বিচার হবে দ্রুত বিচার আদালতে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ নামে একটি আইন দেশে কার্যকর রয়েছে। এ আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি প্রজাতন্ত্রের কোনো সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করে বা করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করে, তাহলে সন্ত্রাসী কার্য হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য দায়ী ব্যক্তিকে পেতে হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড। এ অপরাধের সর্বনিম্ন শাস্তি হচ্ছে ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড। কোনো ব্যক্তি প্রজাতন্ত্রের সম্পদ বিনষ্টের জন্য কোনো ষড়যন্ত্র, সহায়তা বা প্ররোচিত করলে ওই ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও সর্বনিম্ন ৪ বছর কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তির ক্ষতির উদ্দেশ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য, দাহ্য পদার্থ ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে বা নিজ দখলে রাখলেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। এ অপরাধের সর্বনিম্ন শাস্তিও ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ড। এ আইনের আওতায় বিচার হবে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠিত না হলে সে ক্ষেত্রে বিচার হবে দায়রা জজ আদালতে।
দেশের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে দেশের বা রাষ্ট্রের সম্পদের সুরক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট