এই তরুণদের হাত ধরে আসছে ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেটেড ওয়েব সিরিজ
রাতুল, রোহান আর এ্যানি—তিন বন্ধু। তিনজনের এই দলে এ্যানি সবচেয়ে বুদ্ধিমান। রাতুল একটু দুষ্টু স্বভাবের। মাঝেমধ্যেই সে উদ্ভট কাণ্ড-কারখানা করে। সবকিছু সামাল দিতে হয় রোহানকে। তিন বন্ধুর দৈনন্দিন জীবনকে কেন্দ্র করেই নির্মিত হয়েছে ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেটেড ওয়েব সিরিজ—এক্সডি ব্রোস। এ মাসেই ইউটিউবে মুক্তি পাবে সিরিজটি।
সিটকম (সিচুয়েশনাল কমেডি) ঘরানার এই ধারাবাহিক নির্মাণের পেছনে কাজ করেছেন বেশ কয়েকজন তরুণ, যাঁদের বড় অংশই শিক্ষার্থী। আহছানউল্লা ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিংয়ের ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী আরটিবি রুহান, আইডিয়াল কলেজের লামিয়া হান্নান, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের হানিফ এ্যানি, মাইজদী বালিকা বিদ্যানিকেতনের আমতুন নূর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শাহরিয়ার ইসলাম, জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের আহমেদ অভি ও অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজের নাঈম আহমেদ।
এর মধ্যে রুহান ও রাতুল বিশ্বাস ওয়েব সিরিজটি পরিচালনা করেছেন, লামিয়া গল্প লিখেছেন, এ্যানি করেছেন ডাবিংয়ের কাজ। এ ছাড়াও শাহরিয়ার সংগীতশিল্পী, অভি সহকারী, নাঈম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবস্থাপক ও নূর পরামর্শক হিসেবে দলে ছিলেন।
২০১৯ সাল থেকে অ্যানিমেশন শিল্পের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছেন রুহান ও রাতুল। ত্রিমাত্রিক ডিজাইন স্টুডিও নামের একটি অ্যানিমেশন স্টুডিওতে চাকরি করেন দুজন, অভিজ্ঞতার জন্য বাইরের কাজও অব্যাহত রেখেছেন। অ্যানিমেটেড সিনেমা ও গেম যেহেতু পছন্দের বিষয় ছিল, তাই আগেও কয়েকবার এ ধরনের সিনেমা বানানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাঁরা। নানা কারণে সেই প্রচেষ্টা তখন আলোর মুখ দেখেনি। অবশেষে ২০২১–এর শেষে এক্সডি ব্রোস প্রকল্পটি হাতে নেন রুহান ও রাতুল। রুহান বলেন, ‘ইচ্ছা ছিল এমন কিছু করব, যা বাংলাদেশে এখনো হয়নি। আমাদের দেশেও যে সুন্দর অ্যানিমেশন ছবি তৈরি করা সম্ভব, সেটিই করে দেখাতে চেয়েছিলাম।’
কোন শ্রেণির দর্শকের জন্য ধারাবাহিকটি তৈরি হবে, গল্প কেমন হবে, নির্মাণ পদ্ধতি কী—এসব ঠিক করতে করতেই তিন-চার মাস অতিবাহিত হয়ে যায়। এরপর গল্পের কারিগর খোঁজার পালা। তরুণ লেখক লামিয়া হান্নান দলে যুক্ত হন। শুরু হয় গল্প লেখা ও গল্পের চরিত্র আঁকার কাজ। পরের ধাপে বাইরের দেশ থেকে আরও কিছু শিল্পীও যোগ দেন দলে।
প্রথম দিকে কাজে এলোমেলোভাব থাকলেও সময়ের সঙ্গে সবকিছু ঠিক গুছিয়ে নেন তাঁরা। এ জন্য পুরো প্রকল্পকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। কাজও বণ্টন করে দেওয়া হয় সেই অনুযায়ী। রাতুল বলছিলেন, ‘বাইরের দেশে এ ধরনের প্রকল্পগুলোয় এক দল আরেক দলের কাজ সম্পর্কে জানতেও পারে না। তারা শুধু নিজের কাজটাই মন দিয়ে করে। ফলে দলের মধ্যে বন্ধন গড়ে তোলা ও একনিষ্ঠ থাকা সহজ হয়। সময়ও কম অপচয় হয়। আমরা এই নিয়মগুলো অনুসরণ করেছি। এভাবে পুরো প্রকল্পটি শেষ করতে দুই বছরের মতো সময় লেগেছে আমাদের।’
ওয়েব সিরিজে প্রধান সফটওয়্যার হিসেবে ব্লেন্ডার ও হুডিনি ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানালেন নির্মাতারা। ব্লেন্ডার মূলত একটি থ্রিডি গ্রাফিকস টুল, যা দিয়ে কার্টুন শহর ও চরিত্রগুলোর অ্যানিমেশন করেছেন তাঁরা। এ ছাড়া জি ব্রাশ, অ্যাডোবি প্রিমিয়ার প্রো, আফটার ইফেক্টের ব্যবহারও ছিল।
পরিকল্পনা পর্যায়েই প্রথম বাধা টের পান রুহান-রাতুল। হিসাব কষে দেখেন, কাজের পেছনে বছরখানেক দৌড়াতে হবে। এই দীর্ঘ সময় চাকরি ও দৈনন্দিন জীবনের ভারসাম্য ঠিক রাখা বেশ কঠিন ছিল। প্রয়োজনীয় লোকবল পেতেও বেশ ধকল গেছে। দেখা গেছে, অধিকাংশেরই এ ধরনের কাজে অভিজ্ঞতা নেই। সৌভাগ্যবশত, বাইরের দেশের অনেকের সাহায্য পেয়ে যান তাঁরা।
নাল স্টেশন নামে একটি ছোট স্টুডিও আগে থেকেই আছে রুহান-রাতুলদের। এই স্টুডিওর অধীনে সিরিজের পাশাপাশি এক্সডি ব্রোসের একটি গেম নিয়েও কাজ করছেন তাঁরা।