নবজাতকের জন্য কী কিনবেন, কিনবেন না
দেড় বছর আগে প্রথম মা হন রেহনুমা আবদুল্লাহ। পেশায় দন্তচিকিৎসক এই মা সন্তানকে পৃথিবীর বুকে স্বাগত জানাতে ঠিক ততটুকু আয়োজনই করতে চেষ্টা করেছেন, যতটুকু তার প্রয়োজন।
খুব বেশি কেনাকাটা করেননি তিনি। তবু পরে তিনি উপলব্ধি করেছেন, যা কিছু কেনা হয়েছে, তার সবটাই নবজাতকের জন্য আবশ্যক নয়। নরম, পাতলা, সুতি কাপড়, কয়েকটি জামা, কাঁথা, ন্যাপি আর ‘শূন্য’ মাপের ডায়াপার কাজে এসেছিল। তবে সেই সময়ের ‘অনভিজ্ঞ’ মা বুঝতে পারেননি, নাইলন ও রেশমি কাপড় দিয়ে তৈরি ছোট্ট বিছানার সেট শিশুর জন্য কতটা অস্বস্তিকর।
না বুঝেই কিনে নিয়েছিলেন শিশুর বাথটাব আর কটনবাডও, যেগুলো নবজাতকের কাজে আসেনি। নতুন মা তখন জানতেন না, কটনবাড দিয়ে কান পরিষ্কার করতে গেলে হতে পারে বিপদ। এটাও জানতেন না, নবজাতকের কোমল ত্বকে লোশন বা পাউডার প্রয়োগ করা যাবে না। সন্তান বড় করতে করতে জেনেছেন সন্তানের যত্নআত্তির খুঁটিনাটি বিষয়।
প্রয়োজন বুঝে আয়োজন
রাজধানীর বাড্ডার বাসিন্দা রূপা আক্তার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন তাঁর দুই সন্তান জন্মের সময়কার দুই রকম অভিজ্ঞতার কথা। তাঁর ছোট সন্তানের বয়স ৬ মাস। এই সন্তানটির লালন–পালনে তাঁর প্রথমবারের অভিজ্ঞতা যেমন কাজে লাগছে, তেমনি আগেরবারের কিছু জিনিসও কাজে লাগছে।
সন্তানের আরাম, স্বস্তি ও প্রয়োজনের দিকটা মাথায় রেখেই কেনাকাটার তালিকা করা উচিত বলে মনে করেন এই মা। এই যেমন, দুটি কোলবালিশ রাখা ভালো সন্তানের দুই পাশে। আবার শীত মৌসুমে নবজাতকের উপযোগী শীতের পোশাক আর ছোট কম্বল লাগবেই লাগবে।
শিশুর যত্নে
রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহসিনা আক্তার বলেন, ‘নবজাতককে জড়িয়ে রাখতে পাতলা, সুতি কাপড়ই ভালো। বড়রা যত স্তরের কাপড় পরছেন, তার চেয়ে দু-তিনটি স্তর বেশি কাপড় দিয়ে জড়াতে হবে তার মাথা ও শরীর। শীতে উলের টুপি আর হাত-পায়ের মোজাও লাগবে।’
মাঝে মাঝে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে শিশুর হাত-পায়ের তালু স্পর্শ করে দেখতে হবে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে কি না, প্রয়োজনে কাপড়ের পরত বাড়াতে হবে।
গরমেও দু-তিন মাস বয়স পর্যন্ত পাতলা, সুতি কাপড়ের টুপি পরানো উচিত, হাত-পাও জড়িয়ে রাখতে হবে। তার হাত-পায়ের তালু ঠান্ডা না হলে অবশ্য এর আগেই ধীরে ধীরে টুপি বাদ দেওয়া যাবে।
প্রসাধন, বালিশ ও অন্যান্য
আরও কিছু বিষয়ে ডা. মোহসিনা আক্তারের পরামর্শ—
প্রথম গোসলের সময় বয়স হতে হবে অন্তত ৭২ ঘণ্টা। দেরি হলে ক্ষতি নেই, কিন্তু ৭২ ঘণ্টা পেরোনোর আগে গোসল করানো যাবে না।
মাসখানেক পর থেকে তার উপযোগী শ্যাম্পু এবং তরল সাবান ব্যবহার করা যায়; এগুলো ঘ্রাণবিহীন হলে সবচেয়ে ভালো।
শীতে অলিভ অয়েল লাগাতে পারেন। অন্য তেল কখনোই নয়। তিন মাসের আগে লোশন-পাউডার নয়।
ঘাড় শক্ত হওয়ার আগে একেবারে কম পুরুত্বের (ফ্ল্যাট) বালিশ দিতে পারেন, যাতে শোয়ার সময় তার ঘাড় ভাঁজ না হয়ে যায়। এ সময় পর্যন্ত বালিশ না দিলেও ক্ষতি নেই।
নরমাল স্যালাইন ড্রপ কিনুন। শিশুর নাক বন্ধ হলে দু-তিন ফোঁটা করে দিতে পারবেন।
ছোট নেইলকাটারও কিনতে পারেন।
বিকাশসহায়ক ও সুস্থ পরিবেশ
ঢাকার আজিমপুরে অবস্থিত গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের ‘শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক’ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা শিশুর সুস্থতা, নিরাপত্তা এবং বিকাশসহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্ব দিলেন। শিশুর জন্মের আগে কিছু কাঁথা ও নরম, সুতি কাপড়ের জামা কিনে বা বানিয়ে সেগুলো পরিষ্কারভাবে ধুয়ে, শুকিয়ে উঠিয়ে রাখা উচিত। হালকা রঙের জামা ও কাঁথা বেছে নিন। উল্টাপাল্টা প্রচুর খরচ করে ফেলাটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
ডায়াপার এবং ওয়াইপ বা ভেজা টিস্যু শিশুর কাজে লাগে। দুটি তোয়ালে এবং একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজারও রাখুন। শিশুকে স্পর্শ করার আগে সবাইকেই সঠিক নিয়মে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। শিশুর উপযোগী, ভালো মানের একটি মশারিও কেনা উচিত।
তবে একটু বড়সড় কিনলে তা দিয়েই দুই-আড়াই বছর পর্যন্ত অনায়াসে কাজ চলে যায়। অবশ্য বেবি কট বা আলাদা বিছানার প্রয়োজন নেই। বরং মায়ের সঙ্গে থাকলে শিশু মায়ের দেহ ও মনের উষ্ণতায় বেড়ে উঠবে। এতে মায়ের সঙ্গে শিশুর বন্ধন সুদৃঢ় হয়, জানালেন জাকিয়া সুলতানা।
অনেক পোশাক, অনেক খেলনা—এসবই প্রয়োজনের অতিরিক্ত। যাঁরা বাইরে ঘুরতে বের হতে চান, প্যারাম্বুলেটর (শিশুগাড়ি) কিনতে পারেন। এতে অনেকক্ষণ শিশুকে কোলে রাখতে হবে না। পাশাপাশি একটি–দুটি দুধের বোতল কিনতে পারেন।
মায়েরও নিজস্ব জিনিস চাই
সন্তান জন্মের পর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর উপযোগী পোশাক প্রয়োজন হয় মায়ের। এ ছাড়া মায়ের নিজের যত্নে যা কিছু প্রয়োজন, সবই কিনে রাখুন। কারও কারও ব্রেস্ট পাম্পেরও প্রয়োজন হতে পারে।