অতিমারিকালের বিষণ্নতা দূর হতে পারে সৃজনশীলতার উদ্যাপনে। তেমনি একটি সন্ধ্যা ঢাকা শহরকে উপহার দিতে চলেছেন বিশ্বনন্দিত কোরিয়ান ডিজাইনার গ্রেস মুন। গেল বছর প্যারিস ফ্যাশন উইকে সেরা ডিজাইনার হিসেবে সম্মানিত মুন এখন নগরে। ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় খুলবেন তাঁর জাদুবাক্স। তিনি সঙ্গে নিয়েছেন বাংলাদেশের নন্দিত মডেল আজিম উদদৌলাকে।
মডেল হিসেবে এক দশক পেরোনো আজিম নিজের ক্যারিয়ার অব্যাহত রেখেই একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ড লঞ্চ করেন গত বছর ঈদে। এজেড। একেবাবেই পুরুষ পোশাক নিয়ে তাঁর এই ব্র্যান্ডের যাত্রা শুরু। বাংলাদেশের এথনিক ওয়্যার বলতে যেটা বোঝায় সেই পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি ইত্যাদি দিয়েই শুরু হয়েছিল। পরে যোগ হয়েছে ওয়েস্টার্ন ওয়্যার।
এ বছরের গোড়ায় ফেস অব এশিয়া প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে ঢাকায় এসেছিলেন মুন। একেবারেই ঝটিতি সফর। তাতে সায় ছিল না তাঁর বন্ধুবান্ধব, পরিচিতজন এবং এমনকি তাঁর এজেন্টেরও। কারণ, মাত্র কয়েক মাস আগে প্যারিস–সেরা হওয়া কোনো ডিজাইনারের পরবর্তী গন্তব্য বাংলাদেশ হতে পারে, তা ছিল সবার ভাবনাতীত। তবু তিনি এসেছিলেন। এবং ভালোবেসে ফেলেছিলেন এই শহর এবং এই দেশকে। যদিও তেমন করে কিছুই দেখে ওঠা হয়নি তাঁর। কিন্তু আবার ফেরার ইচ্ছা নিয়েই ঢাকা ছেড়েছিলেন তিনি। আর যাওয়ার সময় তিনি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন কয়েকটি পাঞ্জাবি। সেই প্যাটার্নে মুন কি ভেলকি দেখাচ্ছেন, তা দৃষ্টিগোচর হবে সাতাশের সন্ধ্যায়।
নগরীর ফ্যাশনিস্তারা সেদিকেই তাকিয়ে। তাঁরা আশাহত হবেন না, তা মুনের প্রত্যয়ী আলাপনে স্পষ্ট। বরং তিনি ঢাকায় রেখে যেতে চান তাঁর সৃষ্টির ছাপ। তাই তো এই শোয়ের নাম দেওয়া হয়েছে ফ্রোজেন ইন টাইম। অতিমারির বিষণ্নতা কাটিয়ে একটি সন্ধ্য সুন্দর ও স্বর্ণালি হয়ে উঠবে বলেই এমন নামকরণ।
কাপড় নিয়ে খেলতে পছন্দ করেন মুন। সেখানে প্যাটার্ন আর রঙের মাধুর্যে পোশাক অবয়ব পায়। কাপড়ে রঙের উপস্থিতি, জ্যামিতিক নকশা মনে করিয়ে দেয় ইভস সাঁ লোরের সৃজন। বড়দিনের বৈকালিক আলাপনে এমন অনেক কিছুই উঠে আসে।
মুনের পাঞ্জাবি নিয়ে উচ্ছ্বসিত আজিম। বললেন, গতবার যাওয়ার সময় আমি কয়েকটি পাঞ্জাবি দিয়েছিলাম। সেগুলোকে তাঁর মতো করেই নতুন রূপ দিয়েছেন মুন। বাংলা না বুঝলেও পাঞ্জাবি প্রসঙ্গ আঁচ করে কথায় যোগ দিলেন মুন, ‘আসলে বোঝই তো পাঞ্জাবি নিয়ে আমি কখনো কাজ করিনি। তবে আমি আমার মতো কিছু একটা করেছি।’
আজিম আরও জানাচ্ছিলেন, শোয়ের শুরুতে উভয় দেশের এথনিক পোশাক দেখানো হবে। এরপর থাকবে উভয়ের সংগ্রহের উপস্থাপনা। মোট ৭০টি পোশাক দেখবেন উপস্থিত ফ্যাশন অনুরাগীরা। যেখানে আজিমের থাকবে ২০টি। আর বাকিটা মুনের।
আমি অনেকটা নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকের সংগ্রহের মতো করেই কাপড় নিয়ে কাজ করেছি। রং আর প্যাটার্ন সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে, যোগ করলেন মুন।
সিউলে জন্ম গ্রেস মুনের। মাত্র ১৯ বছর বয়সে লন্ডনে গিয়ে ফ্যাশন নিয়ে পড়াশোনা করে পরে থিতু হন যুক্তরাষ্ট্রে। থাকেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। কিন্তু নিজের শিকড় বিস্মৃত হননি। এ জন্য তাঁর সৃজনে বাঙ্ময় থাকে কোরিয়া। ঢাকার ফ্যাশন অনুরাগীরাও সে ঝলক দেখবেন মুনের উপস্থাপনায়।
ফ্যাশন ডিজাইনের জগতে তিন দশক পার করে দিয়েছেন ইতিমধ্যে। এখন তাই তরুণদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী।
‘নবীনদের কাজের ভাবনায় আছে সমসময়ের উদ্দীপনা, যেটা আমাকে টানে। এ ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটেনি’ বললেন মুন; সঙ্গে যোগ করলেন, ‘আসলে ওর মধ্যে আমি কাজের আগ্রহ দেখেছি। উচ্চাশাও, সেটা ভালো কিছু করার। ফলে আজিমকে সঙ্গে নিয়েছি। ওর কাঁধে হাত রেখেছি।’
আজিম উচ্ছ্বসিত তাঁর ব্র্যান্ড লঞ্চিংয়ে এই ভুবনজয়ী ডিজাইনারের সঙ্গে জুটি বাঁধতে পেরে। অতএব এই শোয়ের মাধ্যমে মডেল আজিমের পাশাপাশি উদ্যোক্তা আজিমের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটবে। এই শো আয়োজনের নেপথ্যে রয়েছে ইংরেজি লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন আইস টুডে।
ফলে বছরের প্রান্তে এসে ঢাকা সাক্ষী থাকবে এক তরুণ ফ্যাশন উদ্যোক্তার সঙ্গে বিশ্বমাতানো বর্ষীয়ান ফ্যাশন ডিজাইনারের যুগলবন্দীর। রচিত হবে অবশ্যই মাইলফলক। কাপড় ক্যানভাসে সৃষ্টির উদ্ভাস কিছুটা হলেও হয়তো ভুলিয়ে দেবে মন্দ সময়ের বিষাদ। সম্মোহনী সৃজনের স্মৃতি ধরা থাকবে সময়ের দেয়ালে; হয়ে যাবে ফ্রোজেন ইন টাইম।