ফ্যাশনে বইছে ‘হাওয়া’
‘হাওয়া’য় ভাসছে দেশ। পাবলিক বাসে উঠে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, “‘হাওয়া’ দেখেছিস?” আবার টংদোকানের চায়ের কাপে ঝড় তুলছে ‘হাওয়া’। অফিসে ক্লায়েন্ট মিটিং শেষে লাঞ্চে উঠে এল ‘হাওয়া’র টিকিট এখনো হাওয়া থাকার আক্ষেপ। বহুকাল পর বাংলা ছবি নিয়ে দর্শকদের এমন উন্মাদনার ছোঁয়া লেগেছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতেও।
মুক্তি পাওয়ার পর প্রথম দিন থেকেই ছবিটি হাউসফুল। মুক্তির আগেই ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানে বুঁদ হয়ে আছে পুরো দেশ। ‘হাওয়া’র পোস্টার ডিজাইন সবার নজর কেড়েছে। হিট গান, ভালো ছবি—এসবের পাশাপাশি দেশব্যাপী ভিন্ন ধরনের প্রচারণার জন্য ছবিটি হলে দর্শক টানতে সফল হয়েছে। ব্যতিক্রমী প্রচারণার জন্য ‘হাওয়া’ সিনেমা থেকে অনুষঙ্গ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে শাড়ি, টি-শার্ট, নোটবুক, ব্যাজ, ব্যাগ, সানগ্লাসসহ নানা উপকরণ।
উদ্বোধনী শোতে ‘হাওয়া’ সিনেমার আদলে নকশা করা শাড়ি পরে এসেছিলেন ‘রেহানা মরিয়ম নূর’খ্যাত আজমেরী হক বাঁধন। বাঁধন ছাড়াও অনেকের পরনেই দেখা শাড়ি, আর সেই শাড়ির জমিনে নকশা করা সিনেমার চরিত্রদের মুখাবয়ব। এমন শাড়ি পরার কারণ হিসেবে ইউল্যাবে শিক্ষার্থী তামান্না নাদিয়া জানান, ‘আমাদের দেশীয় সিনেমা আবারও মানুষের মনে সাড়া ফেলেছে। শুভেচ্ছা জানাতে ‘হাওয়া’র নকশার শাড়ি পরে সিনেমাটি দেখতে এসেছি। আমি মনে করি, সিনেমা দেখার পাশাপাশি সিনেমাকে মনেপ্রাণে, পোশাকে, ফ্যাশনে ধারণ করতে হবে। সিনেমাকে দৈনন্দিন আলোচনায় রাখতে হবে। এভাবেই “সিনেমা মুভমেন্ট” তৈরি হবে। সে ক্ষেত্রে সিনেমার প্রচারণামূলক এই উপকরণগুলো সহায়ক।’ ফেসবুক পেজ ‘স্বপ্ন যাত্রা’র এই ‘হাওয়া’ শাড়ি ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। চলচ্চিত্রজগতের অনেকেই এই শাড়ি পরে সিনেমা হলে যাচ্ছেন।
‘হাওয়া’ সিনেমা নিয়ে নোটবুক ও ব্যাজ তৈরি করে সেভেন ডেইজ নোটস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। রাজধানীর বিভিন্ন সিনেমা হল ঘুরে দেখা গেছে, দর্শকের বুকে শোভা পাচ্ছে ‘হাওয়া’ সিনেমার ব্যাজ। অনেকের হাতে দেখা গেছে ‘হাওয়া’ সিনেমার নোটবুক। বসুন্ধরা সিটি সিনেপ্লেক্সে বুকে ‘হাওয়া’র ব্যাজ পড়ে সিনেমা দেখতে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব হাসান। বললেন, ‘অনেক দিন পর বাংলা সিনেমা দেখতে আসলাম। সুপারহিট সিনেমার স্মৃতি ধরে রাখতে “হাওয়া”র ব্যাজটি বুকে ধারণ করেছি। আর বন্ধুকে উপহার দিয়েছি “হাওয়া”র নোটবুক।’
এদিকে টিম সেভেন ডেইজ নোটসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনলাইনের যুগে মানুষকে কাগজ–কলমে লেখার অভ্যস্থতায় ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে তারা। ‘হাওয়া’ ছবিটি দেশ ও দেশের বাইরে সব বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে প্রভাবিত করেছে। সেই সুযোগে ‘হাওয়া’র নোটবুক মানুষকে কাগজ–কলমে ফিরিয়ে আনুক, এটাই কাম্য। এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একজন মুখপাত্র বলেন, ‘একটা সময় সিনেমাপ্রেমীরা প্রিয় সিনেমার পোস্টার সংগ্রহ করে ঘরে সাজাতেন। “হাওয়া” নোটবুক সিনেমার স্যুভেনির হিসেবে মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। মানুষের মধ্যে “হাওয়া”র সুবাতাস ছড়িয়ে দিতে “হাওয়া” সিনেমার থিম ব্যবহার করে বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করেছি। সিনেমাটি মানুষ যেমন পছন্দ করেছে, তেমনি সিনেমার থিমবেজ নোটবুক, ব্যাজ ও ব্যাগ সিনেমাপ্রেমী মানুষেরা পছন্দ করছে।’ মানুষের কাছে এ উপকরণগুলো সহজে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ফেসবুক পেজ, বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ও অফলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে।
চঞ্চল চৌধুরীসহ ‘হাওয়া’ সিনেমার প্রায় সব অভিনেতাই ‘হাওয়া’ সিনেমার ডিজাইনের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি করা টি-শার্ট গায়ে দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন। তারকাদের পাশাপাশি সাধারণ দর্শকেরাও ‘হাওয়া’র টি-শার্ট গায়ে, ‘হাওয়া’ টোটে ব্যাগ নিয়ে সিনেমা দেখতে আসছেন। তেমনই একজন শুভাকাঙ্ক্ষী মোহাম্মদপুরের জান্নাতুল ফেরদৌস। সীমান্ত সম্ভারের স্টার সিনেপ্লেক্সে বন্ধুদের সঙ্গে ‘হাওয়া’র টি-শার্ট গায়ে সিনেমা দেখতে এসেছেন। বললেন, ‘অনেক দিন পর বাংলা সিনেমায় সুবাতাস বইছে। সেই সুবাতাসকে “হাওয়া” সিনেমা দমকা হাওয়ায় পরিণত করেছে। বন্ধুরা মিলে হাওয়ার সাজে সেজে আমরাও শীতল হতে এসেছি।’
এ ছাড়া ফ্যাশন একসেসরিজ কোম্পানি বিস্কুট ফ্যাক্টরি এনেছে হাওয়া চশমা। বিস্কুট ফ্যাক্টরির পক্ষ থেকে প্রথম আলোকে বলা হয়, শুধু ভালো সিনেমার প্রচারের জন্য আরও নতুন নতুন ফ্যাশন অনুষঙ্গ নিয়ে কাজ করছে। যেমন জুতা, ফোনের কভার, বাক্স, ব্লাউজ ইত্যাদি। দর্শক চাইলে এগুলো কিনে সংগ্রহে রাখতে পারবেন। এভাবে তাঁরা আমাদের মতো ‘হাওয়া’র সঙ্গী হবেন।
হাওয়ার সুবাস প্রত্যেক হাওয়াপ্রেমীর কাছে পৌঁছে দিতে কালারটিসান নিয়ে এসেছে হাওয়ার অফিশিয়াল ডিজাইনের টি-শার্ট, মগ ও বিভিন্ন ধরনের পোস্টার।