আবারও ভাইরাল রুনা খান, তাঁর পোশাক নিয়ে কী বললেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা

আর্কা ফ্যাশন উইকে এই পোশাকটি নিয়ে আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেছবি: রুনা খানের ফেসবুক থেকে নেওয়া

তৃতীয়বারের মতো ঢাকায় হয়ে গেল আর্কা ফ্যাশন উইক। নতুন প্রজন্মের, বিশেষ করে শহুরে জেন-জিদের কাছে এই উৎসব পেয়েছে জনপ্রিয়তা। ১৬ থেকে ১৯ জানুয়ারি এই ফ্যাশন উইক অনুষ্ঠিত হলো তেজগাঁওয়ের আলোকি কনভেনশন হলে। ভিন্নধর্মী ফ্যাশন উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে পণ্য প্রদর্শনী, বেচাকেনাসহ চার দিনে নানা রকম মাস্টারক্লাস, ডিজাইন ল্যাব, ফ্যাশন শোয়ের আয়োজনও ছিল। শেষ দিন ফ্যাশন শোয়ের একটি কিউয়ে ডিজাইনার তানহা শেখের ফ্যাশন লেবেল ‘তান’-এর নতুন সংগ্রহ তুলে ধরা হয়। যেখানে শো স্টপার অভিনেত্রী রুনা খানের পোশাকটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

দেশের জ্যেষ্ঠ ফ্যাশন ডিজাইনার থেকে শুরু করে মডেলরাও পোশাকটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন মাধ্যমে। ফ্যাশন অঙ্গন থেকে সাধারণ মানুষ রীতিমতো দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে বলা চলে। একদল সরব ‘দেশি ঐতিহ্য ভুলে যাওয়া হচ্ছে’ বলে, আরেক দল বলছে, ‘এটা নতুনকে নিতে না পরার ব্যর্থতা’।

আর্কার মঞ্চে তানের পোশাকে শো স্টপার অভিনেত্রী রুনা খান
ছবি: রুনা খানের ফেসবুক থেকে নেওয়া

আলোচনার শুরু ১৯ জানুয়ারি ফ্যাশন শো শেষ হওয়ার পর। অনেকে লুকটাকে বাহ্বা দিয়েছেন, কেউ দিয়েছেন দুয়ো। এমনকি নানা রকম মিম ও ট্রলও হয়েছে অনলাইনে। এর মধ্যে ফ্যাশন ডিজাইনার ও ‘আনোখি’র উদ্যোক্তা হুমায়রা খান ২১ জানুয়ারি রুনা খানের একটি ছবিসহ বেশ কড়াভাবেই নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছেন ফেসবুকে। এরপর সরব হয়েছেন আরও অনেকে। কেউ কেউ হুমায়রা খানের লেখাটি শেয়ার করে একমত প্রকাশ করেছেন, কেউ আবার দ্বিমত জানিয়েছেন ওই পোস্টের কমেন্ট বক্স বা নিজেদের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে। হুমায়রা খানের ওই পোস্ট শেয়ার করে পোশাকটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়া ডিজাইনার ও মডেল বিবি রাসেল। শো স্টপারের লুক নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মডেলিং দিয়ে দেশ-বিদেশে পরিচিতি পাওয়া পিয়া জান্নাতুলও। আবার তরুণ ডিজাইনার তানহা শেখের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন সম্প্রতি দেশ-বিদেশে খ্যাতি পাওয়া তরুণ মডেল ও ইনফ্লুয়েন্সার সোবিয়া আমিনসহ অনেক তরুণ মডেল ও উদ্যোক্তা।

রুনা খানের এই ভাইরাল পোশাক বা লুক নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত জানতে চেয়েছিলাম আমরা। আসুন জেনে নিই, কে কী বললেন।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে হুমায়রা খান যা বলেছেন

ফেসবুকে এই ছবিটি পোস্ট করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ডিজাইনার হুমায়রা খান
ছবি: রুনা খানের ফেসবুক থেকে নেওয়া

ফেসবুকে হুমায়রা খান ‘ইয়াং ডিজাইনার’ সম্বোধনে ইংরেজিতে যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তার সারমর্ম হলো, ‘দয়া করে আপনারা দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মানুষের কথা ভেবেই নকশা করুন। এমন বিজনেস মডেল নিয়ে ভাবুন, যেটিকে আপনার গোষ্ঠী নিজের বলে মনে করবে। মেট গালার মতো পোশাকে “ওভার দ্য টপ” এ দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। আমরা যা করতে পারিনি, তরুণ ডিজাইনারদের সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর অনুরোধ করছি।’ শেষে পোশাকটির মডেলকে উদ্দেশ করে হুমায়রা খান ওই স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আপনি কেন জেনেবুঝে এটার প্রচার করছেন?’

প্রথম আলোকে যা বললেন হুমায়রা খান

ডিজাইনার হুমায়রা খানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কোন ভাবনা থেকে পোশাকটি নিয়ে লিখলেন? আক্ষেপ নিয়েই শুরু করলেন তিনি, ‘ঔপনিবেশিকতার মধ্যে থাকলেও আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। আমাদের পোশাকের ঐতিহ্য গর্ব করার মতো। অথচ আজকাল বাজার সয়লাব শুধু আশপাশের দুটি দেশের কপি করা পোশাকে। আমাদের নিজস্ব পোশাকের কয়টা কপি হতে দেখছেন দেশজুড়ে? কেন সেই জায়গায় আমরা এখনো যেতে পারছি না? আন্তর্জাতিক ফ্যাশনকে অনুসরণ করার নামে আমরা আসলে কিসে গুরুত্ব দিচ্ছি, সেটা ভাবার দরকার আছে।’

ডিজাইনার হুমায়রা খান
ছবি: হুমায়রা খানের ফেসবুক থেকে

নিজের স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে পক্ষ-বিপক্ষের নানা মত চোখে পড়েছে হুমায়রা খানের। সেসব প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘আমরা নাকি চেয়ার ধরে আছি! এটা কি আমার বাবার চেয়ার যে ধরে রাখব? এখানে যে কেউ নিজের মতো করে কাজ করতে পারে। আমাদের মাঠটা বরং খালিই পড়ে আছে। নতুনদের তো সেখানে সুযোগ আরও বেশি। সবারই ইচ্ছেমতো কাজের স্বাধীনতা আছে। তবে মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা মানে দায়িত্বশীলতাও। আর অন্য ধরনের পোশাক বানানোতেও অপরাধ নেই। তবে সেটা দৃষ্টিনন্দন হওয়া জরুরি।’

আরও পড়ুন

পোশাকটির ডিজাইনার তানহা শেখ যা বললেন

মঞ্চে রুনা খানের সঙ্গে ডিজাইনার তানহা শেখ
ছবি: রুনা খানের ফেসবুক থেকে নেওয়া

২০১৯ সাল থেকে দেশের ফ্যাশন অঙ্গনে কাজ করছেন ডিজাইনার তানহা শেখ। দেশি ডিজাইনারদের সংগঠন এফডিসিবির (ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশ) সদস্য ছিলেন একসময়। চেষ্টা করছেন ফ্যাশন ডিজাইনে নিজের চিন্তা তুলে ধরতে। বাংলাদেশ ফ্যাশন উইকেও নিজের সংগ্রহ দেখিয়েছেন তানহা। ২০২৪ সালেও আর্কা ফ্যাশন উইকে ছিলেন নিজের সংগ্রহ নিয়ে। আর এবারের আয়োজনে মোট সাতটি পোশাকের সংগ্রহ নিয়ে আর্কার রানওয়েতে আসেন তিনি। তাঁর এই সংগ্রহের নাম রেখেছেন ‘অস্ট্রিয়া’। গ্রিক শব্দ ‘অস্ট্রিয়া’র অর্থ ‘তারকাখচিত’। নারী-পুরুষ উভয়ের পোশাকই ছিল সেখানে। তানহা বলেন, ‘পশ্চিমা পোশাকে আমাদের আধুনিক চিত্রকলাকে উদ্‌যাপন করার ভাবনা থেকে আমার এবারের পোশাকগুলো তৈরি করেছি। পোশাকের নকশায় অনুপ্রেরণা হিসেবে ছিল দেশের প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকারের আঁকা। শো স্টপার রুনা খানের পোশাকটিও সেই ভাবনারই অংশ। যেখানে এই “আওয়ারগ্লাস (বালুঘড়ি) কোরসেট ড্রেস”টি আমার সিগনেচার স্টাইলে ফেব্রিক দিয়ে ম্যানিপুলেট করা হয়েছে কালিদাস কর্মকারের চিত্রকর্মের মোটিফ। এই পোশাক তৈরি করেছি রুনা খানকে ভেবেই। এমনকি তাঁর মাপ নিয়েই এটা বানিয়েছি। পোশাকটির সামনের অংশে যে পিকাবু ব্রা ডিটেলস স্টাইল নিয়ে অনেকে আলোচনা করছেন, তাঁরা আন্তর্জাতিক ধারাটা অনুসরণ করলেই বুঝতে পারবেন যে নকশাটা এখন বিশ্বফ্যাশনের ট্রেন্ডে আছে। আমার এই পোশাক বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ডিওরের ১৯৪৭ সালের আইকনিক বার জ্যাকেটের অনুপ্রেরণা থেকে তৈরি বলা যায়।’

রুনা খানের এই পোশাক তৈরি করতে এক সপ্তাহের মতো সময় লেগেছে। তানহার মতে, একই পোশাক একেক ধরনের শরীরে একেকভাবে মানাবে। পোশাকটি নিয়ে সমালোচনাগুলো চোখে পড়েছে কি না, জানতে চাইলে তানহা বলেন, ‘হ্যাঁ দেখেছি। ডিজাইনার হিসেবে আমাকে নতুনই বলা চলে। আমার এই সংগ্রহের পুরোটাই নিরীক্ষাধর্মী। প্যাটার্নগুলো নিয়ে অনেক দিন গবেষণা করেই কাজে হাত দিয়েছি। সামনে আরও নানা ধরনের কাজ করার চেষ্টা করব। সবার আলোচনা-সমালোচনা নিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। একই সঙ্গে আর্কা ফ্যাশন উইকের উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ দিই, এমন একটি প্ল্যাটফর্মে আমাকে সুযোগ দেওয়ার জন্য।’

আজকাল রুনা খান মানেই যেন ভাইরাল

অভিনেত্রী রুনা খানের পরনে আওয়ারগ্লাস কোরসেট ড্রেস
ছবি: রুনা খানের ফেসবুক থেকে নেওয়া

২০০৫ সাল থেকে দেশের বিনোদন অঙ্গনে কাজ করছেন অভিনেত্রী রুনা খান। শুরুটা শিশুদের ধারাবাহিক শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান ‘সিসিমপুর’ দিয়ে। যেখানে ‘সুমনা’ চরিত্রে অভিনয় করা রুনা খানকে খুব দ্রুতই পাশের বাড়ির মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করেছেন দর্শক। টেলিভিশন থেকে মঞ্চেও অভিনয় করেছেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে। অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মনে জায়গা করে নেওয়া রুনা খান করোনাকালের পর আলোচনায় এসেছেন ফ্যাশন ফটোশুটের মাধ্যমে।

২০২২ সালে দেশের নামকরা ফ্যাশন ডিজাইনার শাহরুখ আমিনের পোশাকের মডেল হিসেবে রুনা খানকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেন দেশের দর্শক। মেকআপ আর্টিস্ট আফরোজা পারভীনের সাজে শাহরুখের সেই পোশাক হয়ে যায় ভাইরাল। এরপর গত দুই বছরে একাধিক ফ্যাশন ফটোশুটের কল্যাণে ভাইরাল হয়েছেন রুনা। সবশেষ নতুন বছরের শুরুতে আর্কা ফ্যাশন উইকের মঞ্চে হেঁটে আবার তিনি ভাইরাল।

অভিনয়জগতে একধরনের ‘ইমেজ’ নিয়ে দুই দশক পার করা রুনা খানকে ফ্যাশন জগতে ভিন্ন রূপে দেখেই কি দর্শকদের এই হইচই? কেমন লাগে মানুষের এই আলোচনা-সমালোচনা? রুনা খান অবশ্য এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন বেশ গুছিয়ে, ‘যত ফ্যাশন ফটোশুট করেছি, তার সবই পেশাগত কারণে। কোনোটাই নিজের জন্য নয়। তাই ডিজাইনার বা মেকআপ আর্টিস্ট আমাকে যেভাবে সাজাতে চেয়েছেন, তাঁদের ভাবনাকে সম্মান জানিয়েছি। এবার যে আর্কার ফ্যাশন শোতে তানহার পোশাক পরেছি, সেটাও সানন্দ। আমি অভিনয়শিল্পী, তাই ফ্যাশনের জগত আমার কাছে নতুন কিছু আবিষ্কার করার মতো।’

তানের অস্ট্রিয়া কালেকশনের পোশাকে রুনা খানসহ অন্য মডেলরা
ছবি: রুনা খানের ফেসবুক থেকে নেওয়া

শেষ আর্কা ফ্যাশন উইকে লেবেল ‘তান’-এর পোশাকটি পরে কেমন লেগেছে জানতে চাইলে রুনা খান বলেন, ‘দারুণ। উপভোগ করেছি। এর আগে বিখ্যাত ডিজাইনার মাহিন খানের পোশাক পরেও রানওয়েতে হেঁটেছি। তাতে সম্মানিত বোধ করেছি এই ভেবে যে আমাকে তাঁরা ফ্যাশন শোয়ের রানওয়েতে হাঁটার জন্য ডেকেছেন। আর্কায় যে কিউয়ে হেঁটেছি, সেখানে এ সময়ের জনপ্রিয় মডেল জেসিয়া ইসলামও ছিলেন। তাঁর সঙ্গে হাঁটতে পেরে সম্মানিত বোধ করেছি। কারণ, সম্প্রতি তিনি মিস বাংলাদেশ খেতাব জিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে উপস্থাপন করেছেন। এই মঞ্চের জন্য তিনি যথার্থ; কারণ, তিনি মডেল হিসেবে জনপ্রিয়। তারপরও তিনি যে শো স্টপার না হয়ে বাকি ছয় মডেলের একজন হয়ে মঞ্চে হেঁটেছেন, তাতেও আমি সম্মানিত বোধ করেছি। হয়তো আমাকে অভিনয়ের কারণে লোকে একটু বেশি চেনে বলেই শো স্টপার করা হয়েছে।’

রুনা খানও নিশ্চিত করলেন, পোশাকটি তাঁর মাপ নিয়েই তৈরি করেছেন ডিজাইনার তানহা শেখ
ছবি: রুনা খানের ফেসবুক থেকে নেওয়া

এবার আরও খোলামেলা জানতে চাইলাম, অনেকেই আপনার লুক নিয়ে সমালোচনা করছেন। কেউ কেউ বলছেন, আপনি যে পোশাক পরেছেন, তা আপনার সঙ্গে যায় না। রুনা খানের সাবলীল উত্তর, ‘ফ্যাশন ফটোশুট বা ফ্যাশন শোয়ে মডেল শুধুই একটা হ্যাঙারের ভূমিকায় থাকেন। ডিজাইনারের ভাবনা থাকে পোশাক নিয়ে। সেটা রানওয়েতে উপস্থাপনের জন্য মডেলকে তৈরি করেন মেকআপ আর্টিস্ট আর কোরিওগ্রাফার। এখানে আমি একজন তরুণ ডিজাইনারের পোশাক পরেছি, যা আমি খুব উপভোগ করেছি। আমাকে এমন লুকে উপস্থাপন করেছেন এলিগ্যান্ট মেকওভারের এ সময়ের জনপ্রিয় মেকআপ আর্টিস্ট সামিনা সারা। তাঁদের ভাবনাকে সম্মান জানাই। পুরো জিনিসটা বহন করে মঞ্চে হেঁটেছি, শো শেষে কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদ তো আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন, ফাটাফাটি!’

রুনা খানও নিশ্চিত করলেন, পোশাকটি তাঁর মাপ নিয়েই তৈরি করেছেন ডিজাইনার তানহা শেখ। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা একাধিকবার বসেছেন, কথা বলেছেন। শোয়ের আগে ড্রেস ট্রায়াল দিয়েছেন, হাঁটার আগেও করেছেন রিহার্সাল।

আরও পড়ুন

মডেল জান্নাতুল পিয়া যা বললেন

মডেল ও অভিনেত্রী জান্নাতুল পিয়া
ছবি: কবির হোসেন

রুনা খানের এই পোশাক ও লুক নিয়ে মন্তব্য করেছেন মডেল ও অভিনেত্রী জান্নাতুল পিয়া। তাঁর কথা, একটা ফ্যাশন শোয়ের শো স্টপার হওয়া মানে তাঁর কাঁধে পুরো শোয়ের দায়িত্ব তুলে দেওয়া। দেশের মডেল ইন্ডাস্ট্রি তো বটেই, পশ্চিমা দুনিয়ায়ও মডেলিং করার অভিজ্ঞতা আছে পিয়ার। হয়েছেন ‘ভোগ’ সাময়িকীর ভারতীয় সংস্করণের প্রচ্ছদ মডেল। শাড়ি, কামিজের পাশাপাশি ফটোশুট করেছেন বিকিনিরও। পিয়া বলেন, ‘পোশাক দেশি না বিদেশি, সেটা বিষয় নয়। ঠিকঠাকমতো বানানো হলো কি না, মডেল সেটা ধারণ করতে পারলেন কি না, মঞ্চে সেটা কীভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, তা দেখা জরুরি। আমি যেহেতু ডিজাইনার নই, তাই পোশাকের নকশা নিয়ে কিছু বলতেও চাই না। আমার প্রশ্ন হলো, পোশাকটি যিনি উপস্থাপন করছেন, তাঁর দায়িত্ব তিনি কতটা ভালোভাবে পালন করছেন, সেটা নিয়ে। যে পোশাক নিয়ে এই আলোচনা, তার পেছনের দিকটা খেয়াল করলে দেখবেন, ফিতাগুলোও ঠিকমতো আটকানো হয়নি। পোশাকটির সামনের দিকে যেভাবে ব্রা কাপগুলো (পিকাবু ব্রা) বের করে রাখা হয়েছে, এই স্টাইল পশ্চিমা বিশ্বে এখন জনপ্রিয়। কিন্তু সেটাও কি এই পোশাকে ঠিকমতো সেট করা হয়েছে? রুনা আপা যেহেতু পোশাকটি পরে মঞ্চে হেঁটেছেন, তাঁর পোশাকের সঙ্গে জুতাটি জুতসই হলো কি না, সেটা তাঁর ভাবার দরকার ছিল। কারণ, শো স্টপার হলে মডেলকেও দায়িত্বশীল হতে হয়।’

পোশাকটি নিয়ে ফেসবুকেও স্ট্যাটাস দিয়েছেন পিয়া। যেখানে লিখেছেন, ‘একজন সেলিব্রিটির জন্য শুধু শো স্টপার হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ নয়, যেভাবে তিনি মঞ্চে উঠছেন, সেটা তাঁর স্ট্যান্ডার্ড পুরোপুরি মিট করছে কি না, এটাও দেখা জরুরি।’

সাধারণ মানুষ কী বলছেন

রুনা খানের পোশাকটি নিয়ে ফেসবুকে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। কেউ বলছেন, ‘এই দেশে নতুন কিছু করতে গেলেই একজন আরেকজনের পা টেনে ধরে।’ কেউ লিখেছেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পোশাকের নকশায়ও বদল আসা জরুরি। সবাই তো শাড়ি পরবে না। তাই অন্য রকম পোশাকও বানাতে হবে ডিজাইনারদের।’

আবার ভিন্ন বক্তব্যও আছে। মারিয়া নামের একজন কমেন্ট করেছেন, ‘পোশাকটি খাটো করে বানানো হয়েছে, তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। সেলিব্রিটি রুনা খান সেটি পরেছেন, সেটা নিয়েও আমার সমস্যা নেই। আমার মন জানতে চাইছে, পোশাকটির নিচে আলাদা করে যে পাতলা কাপড় দিয়ে রুনা খানের পা ঢেকে দেওয়া হয়েছে, সেটা কি তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে? অন্তত আমার দেখে তাই-ই মনে হয়েছে। আর এ কারণেই পোশাকটি সৌন্দর্য হারিয়েছে।’

মডেল ও ইনফ্লুয়েন্সার সোবিয়া আমিন
ছবি: সোবিয়া আমিনের ফেসবুক থেকে নেওয়া

ভারতীয় মডেলিং ইন্ডাস্ট্রিতে শক্তপোক্ত জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের তরুণ মডেল সোবিয়া আমিন। বিশ্বখ্যাত ‘ভোগ’ সাময়িকীর ইতালীয় ও ভারতীয় সংস্করণে ফিচার হয়েছে তাঁকে নিয়ে। ‘হারপারস ম্যাগাজিন’-এর (ভারতীয় সংস্করণ) প্রচ্ছদেও এসেছেন। ‘ভোগ’ সাময়িকীর ভারতীয় সংস্করণ থেকে পেয়েছেন বিশেষ অ্যাওয়ার্ড।

ফেসবুকে তানহার নকশা করা পোশাকটির নানা রকম নেতিবাচক মন্তব্য দেখে বিরক্ত হয়ে শেষে নিজের ফেসবুক আইডিতে লম্বা এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন সোবিয়া। যেখানে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, অন্তর্জালে কেন মানুষ এক তরুণ নারী ডিজাইনারের প্রতি এমন অমানবিক আচরণ করছেন? স্ট্যাটাসের সঙ্গে নিজের ব্লাউজ ছাড়া পিঠখোলা শাড়ি পরার একটা ছবিও দিয়েছেন তিনি। যে ছবিকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ‘আমাদের নারীরা আগে এভাবেই শাড়ি পরতেন, যত দিন পর্যন্ত না উপনিবেশ স্থাপনকারীরা এটাকে ‘আনসিভিলাইজড’ হিসেবে দেখতেন। এরপর শাড়ির সঙ্গে নারীরা ব্লাউজ বা জ্যাকেট পরতে শুরু করলেন। এখন আমার এই পিঠখোলা ছবি দেখেও আপনারা সমালোচনা করুন; কারণ, “আমরা” এটাই ভালো পারি। অথচ এই ছবি “ভোগ”-এ দুই পৃষ্ঠাজুড়ে ছাপা হয়েছিল। আমার কষ্ট লাগছে যে পুরো সংগ্রহের একটামাত্র ছবি দেখে আমরা একজন তরুণ ডিজাইনারকে বুলি করছি।’

এরপর সোবিয়া সরব হয়েছেন মডেলকে বুলি করা নিয়েও, ‘একজন মডেল ও তাঁর শরীর নিয়ে বাজে মন্তব্য করতেও আমরা ছাড়ছি না দেখে হতাশ লাগছে।’

আরও পড়ুন