দেড় কোটি টাকার শাড়ি আছে তাঁর কাছে, ভালোবাসেন বাংলাদেশের শাড়ি
তামিল পরিবারের মেয়ে উষা উথুপ। সত্তর দশক থেকে জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পী এখনো গান গেয়ে চলেছেন। সচরাচর যে রকম কণ্ঠ আমরা ভারতীয় উপমহাদেশে শুনে থাকি, তার চেয়ে খানিকটা আলাদা উষার কণ্ঠ। ২৫টি ভাষায় বহু গান গেয়েছেন এই শিল্পী।
পোশাক ও পারিপাট্যের জন্যও তিনি বিশেষভাবে সমাদৃত। আর পোশাক বলতে উষা উত্থুপ মূলত যা বোঝেন, সেটা শাড়ি।
তাঁর এই শাড়িপ্রীতির গল্প বিভিন্ন সাক্ষাৎকারেও উঠে এসেছে। ছোটবেলা থেকেই শাড়ির প্রতি বিশেষ টান, কিন্তু মধ্যবিত্ত মা-বাবা নতুন নতুন শাড়ি কিনে দিতে পারতেন না। তবে এখন তাঁর সংগ্রহে আছে বিভিন্ন দাম ও নকশার ছয় শর বেশি শাড়ি। উষা বলেন, ‘প্রতিটি ডিজাইনের শাড়ির পেছনে একেকটি রোমাঞ্চকর গল্প রয়েছে। এমনকি আমার সংগীতের জীবনের সূচনায় মাদ্রাজের নাইট ক্লাব “নাইন জেমস”থেকেও গান গাওয়ার বিপরীতে প্রথম বেতন হিসেবে পেয়েছিলাম শাড়ি।’
শাড়ির সঙ্গে স্নিকার্স পরে অহমিয়া, বাংলা, তামিল, হিন্দিতে জ্যাজ, পপ, রক ও সিনেমার গান গেয়েছেন উষা উথুপ। একই সঙ্গে স্টাইলে স্বাতন্ত্র্য এনেছে তাঁর টিপ, খোঁপার ফুল আর হাতের চুড়ি।
শাড়ির সঙ্গে পায়ে কাঞ্জিভরম কাপড়ের স্নিকার্সে যখন রক-পপ গানে মঞ্চ মাতান, তখন শ্রোতারাও বিস্মিত না হয়ে পারেন না। ৫০ বছরেরও বেশি তাঁর ক্যারিয়ারের বয়স। এই শিল্পীর কাছে গান যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তেমন গুরুত্বপূর্ণ তাঁর দেশীয় সংস্কৃতির শাড়ি ও টিপ। এই দুটি ছাড়া নিজেকে ভাবতেই পারেন না উষা। তাঁর সংগ্রহে থাকা শাড়ির বেশির ভাগই দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় কাঞ্জিভরম। এক্সক্লুসিভ শাড়িগুলো রঙে যেমন অনন্য, নকশা বা কাজেও তেমন রুচিসম্মত। তাঁর মায়ের দেওয়া কমলা রঙের সিল্ক চেক কাঞ্জিভরমটির বিষয়ে উষা জানান, ‘চেক, ডট, স্ট্রাইপের নকশা কখনো ফ্যাশন থেকে ফুরিয়ে যাওয়ার না।’ মজা করে বলেন, ‘দামি ও রুচিশীল শাড়ি কিনতে আমি মেয়ের ওপর নির্ভর করি। যদিও মেয়ে আমার এসব শাড়ির দিকে নজর দিয়ে রেখেছে।’
পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী শাড়ির নকশাগুলোই এই গায়িকাকে বেশ টানে। বিশেষ করে পূজা বর্ডারের সোনার মোটিফে গড়া শাড়ি, সবুজ-সোনালি জরির বর্ডারে কাঞ্জিভরম, কেরালার ব্লক সিল্ক কাঞ্জিভরম শাড়ি দেখলেই মন কেমন করে।
উষা বলেন, ‘এ ধরনের শাড়িগুলো চিরন্তন ফ্যাশনের মধ্যেই থাকে।’ এই যে এত এত উজ্জ্বল রঙের শাড়ি পরেন উষা, তাঁর পছন্দের রং কোনটা জানেন? কালো। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, কালো রং সবচেয়ে ভালোবাসেন উষা উথুপ। তাঁর শাড়ির আলমারির একটা বড় জায়গা দখল করে আছে কালো। কালো রঙের কথা বলতে গিয়ে মজার ছলে জানালেন, তাঁর শ্বশুরবাড়ি কেরালা। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষের সাদা বা প্যাস্টেল শেডের দিকে ঝোঁক। তাঁর প্রিয় রং কালো হওয়াতে শাশুড়ি বিরক্ত হয়ে বলতেন, ‘ওর সবকিছুতেই শুধু কালো, কালো আর কালো!’
অভিনেতা কমল হাসানের উপহার দেওয়া বেগুনি-গোলাপি-সোনালির মিশেলে হাতির মোটিফ করা শাড়িটিও যত্নের সঙ্গেই রেখেছেন উষা। এ ছাড়া গোলাপি পোলকা ডটের বর্ডারলেস শাড়ি, ক্রিম কাঞ্জিভরম শাড়িগুলোও তাঁর ভালোবাসার তালিকায় আছে। ভারতীয় একেক অঞ্চলের বৈচিত্র্যকে তিনি নিজের শাড়ির মধ্যেই ধারণ করেন। তাই হয়তো বাঙালি পূজাতে বিশেষভাবে তৈরি বাসন্তী রঙা পূজার শাড়ি, আসামের সংস্কৃতি ধারণ করতে নীল মুগা সিল্ক পরেন। আসামের সোনালি এমব্রয়ডারি শাড়িটি হাতে নিয়ে এর জমকালো বর্ডারটা দেখাতে দেখাতেই সেসব সংগ্রহ করার গল্পে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়ছিলেন উষা।
উষা উত্থুপের যেহেতু শাড়ির বিশাল সংগ্রহ, তাই স্বভাবতই অনেকের মনে প্রশ্ন, কত টাকার শাড়ি আছে তাঁর কাছে। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে উষা জানিয়েছেন তিনি দামি ও অভিজাত শাড়ির ডিজাইনার পিস সংগ্রহ করেন। তাঁর সংগ্রহে থাকা সব শাড়ির মোট দাম দেড় কোটি টাকার বেশি বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
গত বছর দুর্গাপূজায় একটি বাংলা গানে উষা উথুপের সঙ্গে কণ্ঠ দেন বাংলাদেশের সংগীতশিল্পী সিঁথি সাহা। সেই গানের মিউজিক ভিডিওতেও অংশ নেন উষা-সিঁথি। সেই ভিডিওর শুটিং চলাকালে নিজের দুখানা শাড়ি সিঁথিকে পরতে দিয়েছিলেন উষা উথুপ। সেই শাড়ি পরার অভিজ্ঞতা নিয়ে সিঁথি বলেন, ‘গত বছর যে গানটা গেয়েছিলাম, ওটা দিদিরই প্রজেক্ট ছিল। তাই মিউজিক ভিডিওর নানা রকম পরিকল্পনা তিনি সাজিয়েছিলেন। ভিডিওর মধ্যেই আছে, আমার হাতে একটা শাড়ি তুলে দিচ্ছেন তিনি। ওই শাড়িটা পরেই আমি পরের দৃশ্যে নাচছিলাম। লাল কাঞ্জিভরম শাড়িটা পরে কী যে ভালো লাগছিল। ওই শাড়ির সঙ্গে যে গয়নাগুলো পরেছিলাম, সেগুলোও দিদির কাছ থেকে নেওয়া। গানের শেষ অংশে আমি আরেকটি শাড়ি পরেছিলাম, লাল পাড় সাদা কাঞ্জিভরম। সেটাও দিদির সংগ্রহ।’
এই গানের অনেক আগে থেকেই অবশ্য উষা উথুপের সঙ্গে সিঁথির পরিচয়। তাঁর উপস্থাপনায় ‘সিঁথির অতিথি’তে শুরুর দিকে অতিথি হয়েছিলেন উষা উত্থুপ। তখন থেকেই দুজনের সম্পর্ক। সিঁথি জানালেন, কলকাতায় দিদিই আমার প্রধান অভিভাবক। বিভিন্ন সময় সেখানে গেলে দিদির জন্য শাড়ি নিয়ে যাই। বাংলাদেশের শাড়ি খুবই পছন্দ করেন দিদি, বিশেষ করে আড়ংয়ের শাড়ি।’
শুধু যে দিয়েছেন তা-ই নয়, ‘দিদি’র কাছ থেকে একাধিক শাড়ি উপহারও পেয়েছেন সিঁথি, ‘ভারতে গেলেই দিদির সঙ্গে দেখা করি। দিদিও আমাকে নিয়মিত শাড়ি উপহার দেন। তাঁর পছন্দ নিয়ে তো আর নতুন করে কিছু বলার নেই। প্রতিটি শাড়িই খুব সুন্দর।’
সূত্র: ইউটিউব চ্যানেল সিআরইডি ও ব্রুট ইন্ডিয়ায় উষা উত্থুপের সাক্ষাৎকার থেকে নেওয়া