হ্যালো... অভিনন্দন। শরীর কেমন?
থ্যাংক ইউ। এইতো, ভালোই আছি।
প্রথম আলো :
প্রথমেই আমি ‘স্নো কুইন’ থিমের পোশাকটাকে নিয়েই আলাপ শুরু করতে চাই। গাউনটা এত বেশি গর্জিয়াস, এত ডিটেইলিংয়ের কাজ...মেটালিক, ট্যাসেল, পালক, চুমকি, পুঁতি, ফয়েল পেপার, নেট...কী নেই!
ওটা আসলে একটা সাদা–রুপালি লং কোট। ডিজাইন করেছেন আয়ারল্যান্ডের নামকরা ফ্যাশন ডিজাইনার ক্লেয়ার গারভি। তাঁর নকশা করা পোশাক বড় বড় আন্তর্জাতিক তারকারাও পরেন। তিনি মূলত কাস্টমাইজড কাজই করেন। সবই ‘ওয়ান পিস কালেকশন’। তিন মাস ধরে তিনি আমার এই পোশাকটি তৈরি করেন। পোশাকটি আইরিশ উলে বোনা, রিসাইকেলড প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়েছে। হীরা বা বরফের প্রতিবিম্ব তৈরির ব্যাপারটা পোশাকে তুলে ধরা হয়েছে ফয়েল মিরর দিয়ে। পালকগুলো কিন্তু আর্টিফিশিয়াল। সেটিও পুরোনো একটি জ্যাকেট থেকে সংগ্রহ করা। সব মিলিয়ে আমি টেকসই, আপসাইকেল আর রিসাইকেল ফ্যাশনের প্রতিনিধিত্ব করেছি।
প্রথম আলো :
গতবারও তো ক্লেয়ার গারভি আপনার পোশাক বানিয়েছিলেন?
হ্যাঁ। গতবারও কানের জন্য ক্লেয়ার আমার পোশাক বানিয়েছিলেন। তবে এবারের বিষয়টা ভিন্ন। এই বছর ফেব্রুয়ারিতে আমি তাঁকে আমার গর্ভাবস্থার কথা জানাই। ৩ মাস পর আমার শরীরের অবস্থা কেমন হবে, সেটা আন্দাজ করেই তিনি পোশাকটি বানিয়েছেন। পোশাকটি পরে বের হওয়ার পর অনেকেই বলছিলেন, ‘স্নো কুইন ড্রেস’। আমি যখন পোশাকটা পরে হেঁটেছি, আশেপাশে এমন কেউ ছিল না যে একবার ঘুরে তাকাননি।
এ বছর আপনার কান লুকের ভেতর ব্যক্তিগতভাবে আমার পছন্দ ‘গ্রিক গোল্ডেন গডেস’ থিমের শরীর জড়ানো কাটআউট গাউনটি। অভিজাত লুক দেয় আবার প্রেগন্যান্সি আর গরমে ক্যারি করাও সহজ। এটাও তো কাস্টমাইজড?
ওহ আমারও! ‘থ্রি কিলোমিটারস টু দ্য অ্যান্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’–এর প্রিমিয়ারে পরেছিলাম। সোনালি আর লাল মেশালে যে রং হয়, অনেকটা সেরকম। রাজকীয়, প্রভাবশালী একটা লুক এসেছিল। গলা, প্রতিটা ভাঁজে ভাঁজে সোনার পাত বসানো ছিল। কাটআউট গাউনের ট্রেইলটা আকাশের মেঘ থেকে অনুপ্রাণিত। হাতার চওড়া ভাঁজেও তৈরি হয়েছে নাটকীয়তা।
এটাও আরেক আইরিশ ফ্যাশন ডিজাইনার অড্রে অ’হ্যানলনের করা। তাঁকেও ফেব্রুয়ারিতেই জানিয়েছিলাম। আসলে আমি তো দীর্ঘসময় ‘সিক্স টু এইট’ ছিলাম। এটা মডেলদের শরীরের একটা সাধারণ মাপ। ফলে ডিজাইনাররা সাধারণত এই মাপেই পোশাক বানান। এদিকে প্রেগন্যান্সি এমন একটা বিষয় যে শরীরের আকৃতি কোথায় কীভাবে কতটুকু বদলাবে, বলা মুশকিল। তবে পোশাকটি পরে আমি এত ‘পাওয়ার্ড ফিল’ করেছি, এই অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমার মনে হচ্ছিল আমি সত্যিই একটা সোনালি দেবী হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমার নারীত্ব, শরীরের সৌন্দর্য, মাতৃত্বের শক্তি—সবকিছু এই পোশাকের ভেতর দিয়ে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। অড্রেও মা হয়েছেন। উনি বলেছিলেন, ‘আমি চাই তুমি একদম সাবলীল থাকো। সেইসঙ্গে স্টাইলিশ দেখাও।’
এরসঙ্গে আমি পরেছিলাম সোনার গয়না, আর সোনার ব্রেসলেট। আর পায়ে ছিল হিল। আমার এই লুক প্রাচীন মিশরীয় রানি বা আপনি যেমন বললেন গ্রীক দেবীর লুক থেকে অনুপ্রাণিত।
প্রথম আলো :
অলিভ গ্রিন স্লিট ইভিনিং গাউনটাও কি কাস্টমাইজড?
এইটা আর আকাশি বার্বি গাউনটা আসলে শেষ মুহূর্তে কেনা। আরও দুজন ডিজাইনারের সঙ্গে কথা বলে রেখেছিলাম। একজন শেষ করতে পারেননি সময়ের ভেতর। আরেকজন ‘ব্যাক অফ’ করেছেন, কিন্তু আমাকে জানাননি। ফলে একেবারে শেষ মুহূর্তে আমি খুবই প্যানিক করে যাই। কেননা, আমি যে পছন্দের পোশাকগুলো ট্রাই করছিলাম, সেগুলো ওপরে ঠিক থাকলে নিচে হয় না। নিচে ঠিক থাকলে ওপরে বেশি ঢিলেঢালা হয়ে যায়। আসলে এই সময় কাস্টমাইজড ছাড়া তেমন বিকল্প থাকে না। হুলুস্থুলের ভেতর অলিভ গ্রিন ইভিনিং ড্রেস আর আকাশি বল গাউনটা কিনি। যত পোশাক ট্রাই করেছি, এই দুটাই শরীরে ফিট করেছিল।
জুয়েলারিগুলো তো খুবই দামি...ঠিকমতো গুছিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে ফেরত দেওয়াও তো একটা ঝুঁকির ব্যাপার, তাই না?
আমি এবার জুয়েলারির ওপর খুবই গুরুত্ব দিয়েছি। খুবই বাছাই করে অল্প জুয়েলারি নিয়ে গেছি। যেগুলো নিয়ে গিয়েছি, প্রায় সবই হীরার। একেকটা জুয়েলারির দাম বাংলাদেশি টাকায় ৭০ লাখ, ৮০ লাখ—এ রকম। ফলে প্রতিদিনই কোটি টাকায় জুয়েলারি পরে হেঁটেছি। আমি আসলে এগুলো বলতে চাই না। কেউ জিজ্ঞেস না করা পর্যন্ত জানাই না। হ্যাঁ, অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়েছি, বিভিন্ন আইরিশ গণমাধ্যম, পত্রিকা, ম্যাগাজিন সেগুলো কভার করেছে।
প্রথম আলো :
মেকআপ কে করেছেন?
লুক, হেয়ার, মেকআপ ইউক্রেনের মেকআপ আর্টিস্ট মারিয়া ও তাঁর দল। মারিয়া আমার প্রতিটি লুক নিয়ে, সময় নিয়ে রিসার্চ করেছেন। প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ধরে তৈরি হয়েছে আমার লুক।
প্রথম আলো :
এবার তো আপনি অন্তঃসত্ত্বা। এত কাজ, চাপ—সবকিছু সামলে সুস্থ ছিলেন তো?
দিনে তিন ঘণ্টা করে ঘুমাতে পেরেছি ওই কয়েক দিন। আর এমনিতেই পরিবেশ, বিছানা, বালিশ বদলে গেলে আমার ঘুমটা মানিয়ে নিতে সময় লাগে। আসলে আমার জন্য প্রেগন্যান্সিটা একটা সারপ্রাইজ ছিল। ‘নিউ ইয়ার পার্টি’র ঠিক আগ দিয়ে জানতে পারি। তবে আমি বরাবরই গর্ভপাতের বিপক্ষে। তাই সন্তান আমার প্রথম প্রায়োরিটি। এ কারণেই কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রস্তুতিস্বরূপ আগে থেকেই ব্যায়াম করতাম। যাতে সুস্থ্ থাকতে পারি। সবকিছু সুন্দরভাবে সামলে নিতে পারি। সৃষ্টিকর্তা, আমার টিম—সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমি আসলে এখন আমার সন্তানের জন্য, পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কীভাবে আবার ক্যারিয়ারে ফিরব, নতুন চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করব—এই সবকিছু নিয়ে এক্সাইটেড।
কানে গিয়ে অন্য কোনো অন্তঃসত্ত্বা নারীর সঙ্গে দেখা হলো?
লালগালিচায় আর কাউকে হাঁটতে দেখিনি। তবে অন্যান্য পেশাগত কাজে দুয়েকজন নারী এসেছিলেন, যাঁরা অন্তঃসত্ত্বা। উৎসবে সবাই আমাকে খুবই এপ্রিশিয়েট করেছেন, সাহায্য করেছেন, সাহস দিয়েছেন।
প্রথম আলো :
ভাবনার সঙ্গে দেখা করে, আলাপ করে কেমন লাগল?
ভাবনার সঙ্গে ভালো সময় কেটেছে। ওর টাইম ম্যানেজমেন্ট ভালো। কোনো অহংকার নেই। ওর সবচেয়ে বড় গুণ হলো, ও খুবই হাসিখুশি। ‘পজিটিভ এনার্জি’ ছড়ায়। আমরা একসঙ্গে ডিনার করেছি। প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয়েছে।