যে চমক ছিল আর্কা ফ্যাশন উইকের দ্বিতীয় দিনে
তেজগাঁওয়ের আলোকি কনভেনশন সেন্টারে ঢুকতেই উৎসবের আমেজ টের পাওয়া গেল। আর্কা ফ্যাশন উইকের মার্কেটপ্লেস, ডিজাইন ল্যাব ও ফুড জোনে ভিড় জমিয়েছেন ফ্যাশনিস্তারা। জমকালো আয়োজনে এই ফ্যাশন উইক শুরু হয়েছে ১৬ জানুয়ারি। আয়োজনের প্রধান চমক ফ্যাশন শো ছিল গতকাল ১৭ জানুয়ারি। চারটি কিউয়ে এই পর্বে নিজেদের নকশা করা বৈচিত্র্যময় পোশাক প্রদর্শন করে ৯টি ব্র্যান্ড।
আর্কার ফ্যাশন শোতে প্রতিবারই তারকা মডেলদের পাশাপাশি নবাগত মডেলদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। এবার প্রায় ছয় শতাধিক আবেদন থেকে ২৫ জন নতুন মডেলকে নির্বাচন করা হয়।
প্রথম স্লটে নিজেদের নকশা করা পোশাক নিয়ে হাজির হয় তিনটি ব্র্যান্ড। প্রথমে নিজেদের ডিজাইন প্রদর্শন করে বাংলাপাংক। বিদ্রোহী ঘরানার নকশার জন্য পরিচিত ফ্যাশন ডিজাইনার রুবার ব্র্যান্ড বাংলাপাংকের এবারের এই সংগ্রহে ছিল লাল, কালো ও সাদা রঙের প্রাধান্য। তাদের সংগ্রহের অফ শোল্ডার গাউন, ওভারকোট, জ্যাকেট, শার্ট, স্কার্ট সবকিছুতেই ছিল বিদ্রোহের ছোঁয়া।
প্রথম স্লটের দ্বিতীয় অংশে ছিল মডেল তারকা আজিম উদ্দৌলার ব্র্যান্ড এ জেড–এর প্রদর্শনী। বাংলাদেশি ঐতিহ্যের জামদানি, বেনারসি, সিল্কের সঙ্গে সমসাময়িকতার ছোঁয়া মিশিয়ে সাজানো হয়েছে নতুন কালেকশন। লেদারের জ্যাকেটের সঙ্গে দেশি কাপড়ের ফিউশন ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে এই কালেকশনে।
স্লটের পরের অংশে নিজেদের সংগ্রহ তুলে ধরে ট্যাপারড। তাদের এবারের কালেকশন জঙ্গলের থিমে সাজিয়েছেন ডিজাইনার রায়ান চৌধুরী। ট্যাপারডের এবারের সংগ্রহে ছেলেদের উল, লেদারের জ্যাকেটের পাশাপাশি ছিল মেয়েদের লং কোট। ছিল মেয়েদের স্লিট গাউন। জঙ্গল থিমের ভিন্নধর্মী প্যাটার্নের পোশাকের জন্য নজর কেড়েছে ট্যাপারড। লিফলেটের মাধ্যমে দর্শকদের পশুপাখির প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানান ফ্যাশন ডিজাইনার রায়ান চৌধুরী।
ফ্যাশন শোয়ের দ্বিতীয় স্লটে নিজেদের সংগ্রহ প্রদর্শন করেছে রয়েল বেঙ্গল কতুর, দানিয়া ও ওয়ান পার্সেন্ট ক্লাব। সাইফুল্লাহ গালিবের রয়েল বেঙ্গল কতুরের এবারের কালেকশনটি ছেলেদের পোশাক নিয়ে। রেগুলার ফিট ও ওভারসাইজড জ্যাকেট, কোট, হুডি, জিপ থ্রু জ্যাকেট ছিল তাদের এবারের সংগ্রহে। এসব পোশাকে ভিন্নতা যোগ করেছে বিভিন্ন চিত্রকর্ম। ওয়ান পার্সেন্ট ক্লাবের সংগ্রহে ছিল লেদার জ্যাকেট, বোম্বার জ্যাকেট ও ব্যাগি প্যান্ট।
এরপরের অংশে ছিল ফ্যাশন ডিজাইনার মিধাত হুদার ব্র্যান্ড দানিয়া ও ওয়ান পার্সেন্ট ক্লাবের প্রদর্শনী। দানিয়ার কালেকশনে দেখা গেছে কেপের প্রাধান্য, পাশাপাশি ছিল বোম্বার জ্যাকেট, লং জ্যাকেট, বাইকার জ্যাকেট ও ওভারকোট। দানিয়ার পোশাকে নজর কেড়েছে ডিজিটাল প্রিন্ট ও স্ক্রিনপ্রিন্টের কাজ।
আর্কা ফ্যাশন উইকের তৃতীয় স্লটে একক শো করে ঢেউ বাই সারা। ঢেউয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী সারাফ সাইয়ারার এবারের সংগ্রহে ছিল পশ্চিমা ধাঁচের বিভিন্ন পোশাক। নারীদের পোশাকে ছিল ডিপ নেক গাউন, অফ শোল্ডার গাউন, স্লিট গাউন, বডিকন, টপস, শার্ট, স্কার্ট ও ক্রপ টপ। আর ছেলেদের পোশাকে দেখা যায় প্রিন্টেড শার্ট, ক্যাজুয়াল হাফ শার্ট, ঢিলেঢালা প্যান্ট, শর্ট প্যান্ট ও জ্যাকেট। ছেলেমেয়ে উভয়ের পোশাকেই দেখা গেছে নেটের ব্যবহার। এই শোর পরবর্তী ধাপে দেখানো হয় পরিত্যক্ত কাপড় পুনর্ব্যবহার করে তৈরি ঢেউয়ের ফ্যাশনেবল পোশাক। এ সময় দেখা যায় বিভিন্ন কাটের ডেনিমের বডিকন, জ্যাকেট, স্কার্ট, ওভারসাইজড টি-শার্ট, টপ ও প্যান্ট।
সর্বশেষ স্লটের ফ্যাশন শোতে অংশ নেয় ‘আমি ঢাকা’ ও ‘কাঁঠাল’ নামের দুটি ব্র্যান্ড। আমি ঢাকার সংগ্রহে ছিল ফুল স্লিভ ও হাফ স্লিভ টি-শার্ট, জ্যাকেট, কোটি ও বডিকন। ‘আমি কে’, ‘মা-বাবার দোয়া’, ‘আমি সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস’–এর মতো বিভিন্ন কথা লেখা ছিল আমি ঢাকার পোশাকে। আমি ঢাকার শো–র পর ছিল আগুনের বলয় হাতে একদল শিল্পীর পরিবেশনা। কাঁঠালের ফ্যাশন শোর মাধ্যমে শেষ হয় আর্কা ফ্যাশন উইকের দ্বিতীয় দিনের ফ্যাশন শো। ফুল স্লিভ টি-শার্ট, ক্রপটপ, স্লিট স্কার্ট, মিনি স্কার্ট ও বেল বটম জিন্স ছিল কাঁঠালের সংগ্রহে।