পুরোনো সিডি ও মশারির কাপড়ে বিয়ের গাউন
ফেলনা আবর্জনা (ট্রাস) দিয়ে বিয়ের গাউন তৈরি করেছেন রিফাহ্ ইসলাম। ইউল্যাবের মিডিয়া ও জার্নালিজম বিভাগের নবম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী তিনি। গাউনটি তৈরি করতে তাঁর লেগেছে ১০০টি পলিথিন ব্যাগ, পুরোনো সিডির ডিস্ক আর ফেলে দেওয়া মশারির কাপড়। কনভারজেন্স কমিউনিকেশন কোর্সের অংশ হিসেবে পোশাকটি বানিয়েছেন তিনি। ট্রাস দিয়ে পোশাকের একটি ফ্যাশন শোও করেছেন তাঁরা, নাম ‘ট্রাসন শো’।
ক্রমশ আবর্জনা আর জঞ্জালে ভরে উঠছে বিশ্ব। সেসব আবর্জনাকে রিসাইকেল ও আপসাইকেলের মাধ্যমে ফ্যাশন উপযোগী করে তোলাই ছিল এই শোর উদ্দেশ্য। আর ছিল মানুষকে পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনে আগ্রহী হতে সচেতনতার বার্তা দেওয়া। এই শোতে অংশ নেয় রিফাহ্দের ‘ট্রাসব্রাইড’ নামের গ্রুপ। মৌনতা ছাড়া এই দলে আরও ছিলেন তামিম আলম ও আসিফ ইসলাম।
বিয়েতে কনের পোশাকই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এখন বিয়ের পোশাকে এসেছে পরিবর্তন। বিশ্বায়নের ছোঁয়ায় বিয়ের পোশাকে বৈচিত্র্যও চোখে পড়ছে ব্যাপক। অনেকেই এখন পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিয়েতে লাল বেনারসি ছাপিয়ে লেহেঙ্গা রেখে হাত বাড়াচ্ছেন সাদা গাউনের দিকে। রিফাহ্ পলিথিন দিয়ে বানিয়েছেন বিয়ের সাদা গাউন। শোতে সেই গাউন পরে হেঁটেছেনও রিফাহ্। এই শিক্ষার্থী বললেন, ‘পোশাকের ওপরের অংশটা আমরা পুরোনো টি–শার্টের ওপর ডিস্ক বসিয়ে বানিয়েছি। আর নিচের অংশে ১০০ পলিথিন সেলাই করেছি। ভেইলটা বানিয়েছি মশারির কাপড় দিয়ে। এ ছাড়া রয়েছে একটি বেল্ট। পুরোটাই হাতে তৈরি।’ এই শোতে আরও দেখা গেছে, ফেলে দেওয়া নানা কিছু রিসাইকেল করে বানানো পোশাক, জুতা, ব্যাগ, গয়না।
শোর নির্দেশনায় ছিলেন মিডিয়া ও জার্নালিজম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনিরুজ্জামান। এই শিক্ষক বললেন, ‘এমআইটিসহ বিশ্বের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাসন শো হয়। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। বিশ্বে যে পরিমাণ পোশাক উৎপাদিত হয়, এর মাত্র ৬০ ভাগ বিক্রি হয়। ৪০ ভাগ আবর্জনায় রূপান্তরিত হয়। এত এত আবর্জনা একটা বৈশ্বিক সমস্যা। আমাদের ছাত্রদের মাথায় বিষয়টি ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। তারাও বিষয়টি নিয়ে ভাবুক, গবেষণা করুক, সমাধান খুঁজে বের করুক।’
এই শিক্ষক জানান, পলিথিন দিয়ে বানানো গাউন আর একটি সত্যিকারের গাউন পাশাপাশি রাখলে দুটো আলাদা করা মুশকিল হবে। অথচ গাউনটি প্রায় জিরো বাজেটে বানানো। মানুষ বিয়ের পোশাকের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ অপচয় করে। মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য লাখ লাখ টাকা খরচ করে। সেই পোশাক পরে আর পরাও হয় না। আবর্জনা দিয়ে তৈরি এমন বিয়ের গাউন যদি নিম্নবিত্ত আর নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য বাজারজাত করা যায়, কেউ কেউ হয়তো কিনবেনও!