কিশোরীদের ঈদ পোশাকে যে ধারা চলছে
কলেজপড়ুয়া ছোট বোন বায়না করল, এবার ঈদে তার চাই সবুজ রঙের জামা। যে সে সবুজ নয়, হতে হবে ঠিক কাঁঠালগাছের পাতার মতো গাঢ় সবুজ। পরীক্ষার কারণে এবার সে মার্কেটে যেতে পারবে না। এদিকে তৈরি (রেডিমেড) পোশাকও তার পছন্দ না। আবার দরজির কাছে জামা তৈরি করতে হলে আগেভাগেই কিনতে হবে কাপড়। তাই সবুজ কাপড় কিনে আনার গুরুদায়িত্বটা শেষমেশ আমার ঘাড়েই পড়ল। বাজারে গিয়ে বুঝলাম, কিশোরীদের পোশাক কেনার কাজটা সত্যিই বেশ কঠিন। রোজা রেখে দুপুর থেকে রাত অবধি ঘুরে ঘুরে শেষমেশ ছোট বোনের জামার কাপড় কিনতে পেরেছিলাম কি না, সেটা একটু পরেই বলছি। তার আগে জেনে নেওয়া যাক এবার কী কী আছে কিশোরীদের ঈদপোশাকের সংগ্রহে।
কী আছে
না ছোট না বড়—জটিল এই বয়সের মতোই পোশাকও যেন দ্বিধায় আছে। এই বয়সের পোশাকে দারুণভাবে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বফ্যাশনের চলতি ধারা।
কামিজ, প্যান্ট, ওড়না, থ্রি–পিসে যে এত এত নকশা আছে, পোশাকের দোকানগুলো না ঘুরলে বিশ্বাস করাই কঠিন হতো। দেখলাম, সাধারণ ঈদ বাজার থেকে ব্র্যান্ডের দোকান—সবখানেই নায়রা ও আলিয়া, এই দুই কাটের জামার জয়জয়কার। দুটি পোশাকই কুঁচি করা গোল আনারকলি ধাঁচের হওয়ায় কিশোরীদের কাছে জনপ্রিয়তায়ও এগিয়ে। এর বাইরে সাধারণ কামিজ, লম্বা কিংবা ছোট টপ, কুর্তি, যার যেমন পছন্দ, নতুন নকশার যেন অভাব নেই।
সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে ওড়না জড়িয়ে নিলে কিশোরীকে দেখায় বড়দের মতো। অন্যদিকে ফ্রক ও টপ পরলে দেখায় ছোটদের মতো। তবে এ সময়ে যেহেতু সবাই বড় হতে চায়, পোশাকেও তাই সেদিকেই ঝোঁক বেশি। তার ওপর ঈদের একটা পোশাক অন্তত একটু হলেও হওয়া চাই জমকালো। ফ্রক কিংবা টপে জমকালো ভাবটা খুব না এলেও থ্রি–পিসে বেশ পছন্দসই কাজের দেখা মেলে। জর্জেট ও মসলিন থ্রি–পিসের কাপড়ে হাত, গলা কিংবা পুরো জমিনে গোটাপাত্তি, জরি-চুমকি ছাড়াও সুতার ওপর পাথরের কাজের পোশাক হতে পারে কিশোরীর ঈদের দিনের ওই জমকালো পোশাক।
নকশা যেমন
গরম আর বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে এবার হালকা কাপড় ও রং ব্যবহার হয়েছে বেশি। ‘টুয়েলভ ক্লোদিং’–এর সহকারী ব্যবস্থাপক সজল মিত্র বলেন, সুতি কাপড়কে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবার। তবে মিক্সড জর্জেট, লিনেন, জ্যাকার্ড কাপড়ের পোশাকও মিলবে। বিশেষ করে কিশোরীদের ফ্যাশনে। তবে গরমের ভাবনায় সেগুলোকে আরামদায়ক রাখার চেষ্টা করা হয়েছে।
ঈদ ফ্যাশনে কিশোরীদের পছন্দের তালিকায় ওপরের দিকে আছে কো-অর্ড সেট—এমনটাই জানালেন ক্লাব হাউসের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ ইয়াসমিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘সুতি, লিনেন, জর্জেট কাপড়ের টুপিস সেটগুলো বেশ পছন্দ করছে কিশোরীরা। আরও আছে ফিউশনধর্মী টপ, মিনি স্কার্ট, জাম্পস্যুট, টপ–বটম সেট (ক্রপ টপ, প্যান্ট ও কোটির সমন্বয়)। এগুলোর নকশাও বেশ নজরকাড়া। কুর্তি, কামিজ ও টপে ফ্রিল, লেয়ার, ফ্লেয়ার, ক্রপড ইত্যাদি নানা নকশার ছড়াছড়ি।
প্যান্টের ক্ষেত্রে আধুনিক বিদেশি ঢংটাই বেশি চলছে এবার। সাধারণ পায়জামা-প্যান্ট ছাপিয়ে এখন চলছে পকেট-জিনস, যাতে পকেটের কোনো অভাব নেই। ফ্লেয়ার প্যান্ট, ঢিলে জিনসের প্যান্ট, জ্যাকার্ড প্যান্ট, কুর্তি-টপের সঙ্গে পরার জন্য কাবলি পায়জামা। সুতি ও সিল্কের স্কার্টে প্রিন্টগুলো বেশ নতুন ধরনের। কিশোরীদের পোশাকে ঝলমলে রং ছাড়াও মিলবে নানা রকম ফাংকি হাতের নকশা। যেমন ঝালর, বেলবটম, টিউলিপ স্লিভ, বেলুন স্লিভ ফ্লাটার, কিমোনো স্লিভ, ড্রপ শোল্ডার ইত্যাদি। দেশি পোশাকের পাশাপাশি কিশোরীরা যে ভিনদেশি আধুনিক ফ্যাশনের দিকে অনেকটাই ঝুঁকছে, ঈদের বাজারে তা স্পষ্ট।
বড়ও না, ছোটও না—বোনকে যেন ঠিক ওর বয়সেরই লাগে, সেইমতো সবুজ রঙের গোটাপাত্তির কাজ করা থ্রি–পিসের কাপড় কিনে বাড়ি ফিরলাম। দেখে সে পছন্দও করেছে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, এখনো তার পোশাক নিয়ে চলছে নিরীক্ষা। দরজির কাছে কীভাবে কোন নকশায় সেটা তৈরি করতে হবে, সেসব বোঝাবুঝি ঠিক কবে শেষ হবে, সেটাও বুঝতে পারছি না। মাঝেমধ্যে রাগ হচ্ছে, পরক্ষণেই আবার দমে যাচ্ছি—এই বয়সের ঈদগুলো যে আমিও পার করে এসেছি!