‘মানসিকতার পরিবর্তন না এলে সব অর্জন আবার বৃথা হয়ে যাবে’

‘আই হেইট পলিটিকস’ প্রজন্ম, মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকা প্রজন্ম, কেবল ‘আমি-আমি’ করা প্রজন্ম—আরও কত কী ‘অপবাদ’ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। অথচ এই কিশোর-তরুণেরাই জেগে উঠেছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলনের শুরু, এখন তা রাষ্ট্র সংস্কারের পথে এগোচ্ছে। কী সংস্কার চান তাঁরা? কোন কোন ক্ষেত্রে কী পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন?

যেন অকারণে নিপীড়নের শিকার হতে না হয়

অন্বেষা চাকমা
ছবি: সংগৃহীত

অন্বেষা চাকমা, জনস্বাস্থ্য বিভাগ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, চট্টগ্রাম

প্রথমত, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি চাই, সবাই যেন শান্তিপূর্ণভাবে এবং নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারি। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, বর্তমান সময়েও আমরা আদিবাসীরা অনেক দিক থেকে পিছিয়ে আছি। একজন আদিবাসী শিক্ষার্থী হিসেবে আমি সবার আগে চাই, সব সংখ্যালঘু ও আদিবাসীর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। যখনই দেশে অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তখনই আমাদের ওপর শুরু হয় হামলা, অবিচার। যদি পার্বত্য অঞ্চলের কথা বলি, নিজেদের জায়গাতেই আমরা নিরাপদ বোধ করি না। দ্বিতীয়ত, ভাষা নিয়ে যেন আর বিদ্রূপের শিকার হতে না হয়। ভাষা নিয়ে আমাদের অনেক সময় উপহাস করা হয়; যা একটি স্বাধীন দেশে কখনোই কাম্য নয়। কোনো আদিবাসী বা সংখ্যালঘুকে যেন অকারণে নিপীড়নের শিকার হতে না হয়, দেশে সবার জন্য সমান আইন হয়। এটাই আমার চাওয়া।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হোক

আহমেদ ফাহিম
ছবি: সংগৃহীত

আহমেদ ফাহিম, অর্থনীতি ও কম্পিউটারবিজ্ঞান বিভাগ, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়

স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার এখনই সোনালি সময়। একজন ছাত্র হিসেবে চাই—সবার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হোক। ছাত্ররাজনীতিকে কেন্দ্র করে গেস্টরুম কালচারের মতো অবর্ণনীয় অনাচার, সহিংসতা, সংঘাত নির্মূলের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে অবশ্যই মুক্তবুদ্ধির চর্চা থাকবে; তবে তা কোনোভাবেই কোনো রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা চরিতার্থ করার জন্য নয়। নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। যেখানে পাঠ্যপুস্তক ও কারিকুলাম হবে আধুনিক, প্রায়োগিক ও প্রযুক্তিনির্ভর। শিক্ষকদের এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণ ও প্রয়োজনীয় ভর্তুকি প্রদান করা উচিত। গণমানুষের কণ্ঠরোধকারী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন–২০১৮ হয় আমূল পরিবর্তন অথবা বাতিল করতে হবে। সংসদ সদস্য হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক পাস হতে হবে। সুষ্ঠু গণতন্ত্র নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সংসদ সদস্য ও সরকারপ্রধান প্রার্থীরা টানা দুইবারের বেশি নির্বাচন করতে পারবেন না। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, গণমাধ্যম ও পুলিশ প্রশাসনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন

মানসিকতার পরিবর্তনের জন্য দরকার যথাযথ শিক্ষা

অথৈ দাস
ছবি: সংগৃহীত

অথৈ দাস, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি

এই কয়েক দিনে আমার কাছে মনে হয়েছে, পরিবর্তনের আগে সংস্কার জরুরি। আমরা দেখছি, একটি মহল হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে, ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চাইছে। এ জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে। আমি এটা মন থেকে বিশ্বাস করি, আসল বিভেদ থাকে মানুষের মনে। তাই সবার আগে দরকার মানসিকতার পরিবর্তন। যেকোনো কিছুতেই আমরা দুটি পক্ষ তৈরি করতে চাই। এই চর্চাটা বন্ধ করতে হবে। নইলে যতই পরিবর্তন আনি, মানসিকতার পরিবর্তন না এলে সব অর্জন আবার বৃথা হয়ে যাবে। আমার দম বন্ধ লাগে, যখন দেখি চোখের সামনে দুই ধর্মের দুই বন্ধু তর্ক করছে। একজন আরেকজনকে বলছে, ‘দোস্ত, তুই স্বাধীন হয়েছিস, কিন্তু আমি হই নাই।’ এই ধ্যানধারণা এখন বড্ড সেকেলে হয়ে গেছে। এগুলো আমাদের বন্ধ করতে হবে। আর এ জন্য দরকার যথাযথ শিক্ষা। সেটা এ দেশের মানুষ শুরু করুক। কথা বলুক।