‘আপাতে, আপাতে’ ভাইরাল গানটি যাঁরা গেয়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে কতটা জানেন

‘আপাতে, আপাতে’ গানটি এখন ভাইরাল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ঢুকলে এই গান যেন আপনাকে শুনতেই হবে! ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও টিকটকের রিলসগুলোই মূলত এই গানের ফেরিওয়ালা। এর সঙ্গে বিভিন্ন কায়দার নেচে দেখাচ্ছেন অনেকে। ছোট থেকে বড় অনেকের কণ্ঠে ভেসে বেড়াচ্ছে গানটি। স্বীকার করতেই হয়, একবার শুনলেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে এই ‘আপাতে’। যাঁরা এখনো জানেন না, গানটি গেয়েছেন জনপ্রিয় দক্ষিণ কোরীয় পপ তারকা রোজে ও মার্কিন পপ তারকা ব্রুনো মার্স।

রোজে ও ব্রুনো মার্সের গাওয়া ‘আপাতে, আপাতে’ গান এখন ঘুরছে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও টিকটকের রিলসগুলোতেছবি: ভিডিও থেকে

ব্রুনো মার্স

যাঁকে আমরা ব্রুনো মার্স নামে চিনি, তাঁর আসল নাম পিটার জিন হার্নান্দেজ। জন্ম ১৯৮৫ সালের ৮ অক্টোবর। শৈশব কেটেছে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ের হনুলুলুতে। চার বছর বয়স থেকে গান করেন মার্স। শুরুটা পারিবারিক ব্যান্ড ‘দ্য লাভ নোটস’ দিয়ে। ইতালীয়-মার্কিন রেসলার ব্রুনো সামারতিনোর সঙ্গে চেহারায় মিল থাকায় তাঁর নাম হয়ে গেছে ‘ব্রুনো’। কেউবা তাঁকে ডাকেন ‘কিং অব রক অ্যান্ড রোল’। ছোটবেলায় প্রিয় গায়ক এলভিস প্রিসলির মতো সাজপোশাকে গান শোনাতেন মার্স।

ব্রুনো মার্সকে কেউ কেউ ডাকেন ‘কিং অব রক অ্যান্ড রোল’ নামে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

ব্রুনো ১৯৯০ সালে প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম গান ‘ব্লু সোয়েড সুজ/হাউন্ড ডগ’। ২০ বছর পর, ২০১০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘ইটস বেটার ইফ ইউ ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড’ নামের অ্যালবামটি। যেখানে ‘জাস্ট দ্য ওয়ে ইউ আর’, ’গ্রেনেড’ ও ‘দ্য লেজি সং’ গানগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলে। তাতেই তারকা বনে যান ব্রুনো। সে বছর সেরা পুরুষ পপ ভোকালের জন্য পান প্রথম গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড। নিজের গাওয়া প্রায় সব গানের গীতিকার তিনি নিজে বলে লেখক খ্যাতিটাও আছে ৪০ বছর বয়সী এই গায়কের।

প্রেমিকা জেসিকা কাবানের সঙ্গে ব্রুনোর প্রথম দেখা হয় ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের এক হোটেলের রেস্তোরাঁয়। এক যুগের বেশি সময় ধরে প্রেম করে যাচ্ছেন এই যুগল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে নিজের কাজ নিয়ে সরব ব্রুনো মার্স ব্যক্তিগত জীবন গোপন রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

সেলিব্রিটি ওয়েলথ ট্র্যাকারের তথ্যানুসারে, ব্রুনো মার্সের মোট সম্পদ ১৭৫ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের, বাংলাদেশি টাকায় ২১ হাজার কোটি টাকার বেশি। লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউড হিলস এলাকায় বিলাসবহুল একটা বাড়িতে থাকেন মার্স। পুরো বাড়ির আয়তন ৮ হাজার ৯৪ বর্গমিটার, এর দাম সাড়ে ছয় মিলিয়ন ডলার।

রোলস-রয়েস ফ্যান্টম, ল্যাম্বরগিনি হুরাকান ইভিও, ক্যাডিলাক এসকালেড, ১৯৮৭ ক্যাডিলাক অ্যালান্টে ও ক্যাডিলাক সিটিএস কুপ—এই পাঁচ বিলাসবহুল গাড়ি ছাড়া ব্রুনোর সংগ্রহে একটা ব্যক্তিগত জেট প্লেনও আছে।

রোজে

দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় গায়িকা রোজের পুরো নাম রোজান চে-ইয়ং পার্ক। ১৯৯৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে দক্ষিণ কোরীয় অভিবাসী এক ব্যবসায়ী পরিবারে তাঁর জন্ম। শৈশব কেটেছে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে। ২৭ বছর বয়সী এই গায়িকার নাম ফুটতে শুরু করে তাঁর ব্যান্ডের সূত্র ধরে।

‘ব্ল্যাকপিংক’ ব্যান্ডের সদস্যরা
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

দক্ষিণ কোরিয়ার ওয়াইজি এন্টারটেইনমেন্ট ২০১০ সালে মেয়েদের নিয়ে একটা ব্যান্ড গঠনের পরিকল্পনা করে। এর ছয় বছর পর, ২০১৬ সালে প্রথম গান নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে ‘ব্ল্যাকপিংক’। দলের সদস্য চারজন—লিসা, জিনি, জিসু ও রোজে। আজকাল তাঁরা দলের বাইরে কখনো একা, আবার কখনো–বা অন্য শিল্পীদের সঙ্গে নতুন গানে কাজ করছেন। কোরিয়ান ভাষার সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন মার্কিন ইংরেজি গানের ঢং। ‘আপাতে’ গানটিও ঠিক তেমনই ধাঁচের।

পোষা কুকুরের হ্যাংকের সঙ্গে রোজে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

সুরেলা কণ্ঠের সঙ্গে রোজে নাচেনও বেশ ভালো। ২০২১ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘আর’। অ্যালবামটির অন্যতম গান ‘অন দ্য গ্রাউন্ড’ দিয়ে প্রথমবারের মতো পরিচিতি পান যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে।

আরও পড়ুন
সিউলের অভিজাত এলাকা ইয়ংসানের এক বিলাসবহুল পেন্টহাউসে থাকেন রোজে
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

নানা সময়ে নানা জনের সঙ্গে রোজের প্রেমের গুঞ্জন শোনা গেলেও প্রেম করছেন কি না, এমন প্রশ্নে সব সময় ‘না’-ই বলেছেন রোজ। প্রিয় কুকুর হ্যাংককে নিয়ে সিউলের অভিজাত এলাকা ইয়ংসানের এক বিলাসবহুল পেন্টহাউসে থাকেন তিনি। মার্সিডিজ বেঞ্জ এস-ক্লাস, আইকনিক রেঞ্জ রোভার ভোগ, কমান্ডিং ক্যাডিলাক এসকালেড, স্লিক মার্সিডিজ-বেঞ্জ ভি ক্লাস ও ক্রাইসলার ৩০০ এস-সহ বেশ কয়েকটি গাড়িতে প্রায়ই চড়তে দেখা যায় রোজেকে। সেলিব্রিটি নেট ওর্থের সর্বশেষ ২০২৩ সালের তথ্যানুযায়ী, রোজের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় ২৪৫ কোটি টাকার বেশি।

২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর ইনস্টাগ্রামে রোজের সঙ্গে একটি সাদাকালো ছবি দেন ব্রুনো মার্স। সেখানে দেখা যায়, হাতের ওপর হাত রেখে ‘আপাতে’ খেলা খেলছেন তাঁরা। রোজের উদ্দেশে গানের কথাগুলোকেই মজা করে লেখেন ব্রুনো। সেটা যে নতুন গানের ইঙ্গিত ছিল, ভক্তরা ঠিকই তা টের পেয়েছিলেন।

ইউটিউবে আসার পরপরই ভাইরাল হয়ে যায় ‘আপাতে’ গানের ভিডিও
ছবি: সংগৃহীত

এর পরদিন রোজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয় ‘আপাতে’ গানের ভিডিও। সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে যায় ভাইরাল। ভিডিওতে দেখা যায়, মাথা নেড়ে, হাত-পা ছুড়ে একসঙ্গে নেচেগেয়ে বেড়াচ্ছেন রোজে ও ব্রুনো মার্স। ভিনদেশি কোনো গায়কের সঙ্গে এই প্রথম গাইলেন রোজে।

‘আপাতে’ গানটির সিংহভাগই ইংরেজিতে, শুধু একটাই কোরিয়ান শব্দ—‘আপাতে’, যার অর্থ ‘অ্যাপার্টমেন্ট’। গানটি প্রকাশ হওয়ার পর বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারে ‘আপাতে’ শব্দের অর্থ বুঝিয়েছেন রোজে। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি জনপ্রিয় খেলার নাম। ঘরে বসে কাছের মানুষদের নিয়ে খেলা যায় এটি। তবে মনে করিয়ে দিই, গানটি শুনতে চাইলে ‘আপাতে’ নয়, ইউটিউবে গিয়ে লিখতে হবে ‘এপিটি’।

আরও পড়ুন