১৪ মাসে ৩৬ কেজি ওজন কমিয়ে কাজে ফিরেছেন এই মডেল
১ বছর ২ মাসে ৩৫ কেজি! হুম, এই ওজনই কমিয়েছেন বাংলাদেশের র্যাম্প জগতের পরিচিত মুখ লাক্স তারকা মাশিয়াত রহমান। ২০২২ সালের ১১ জানুয়ারি মা হন তিনি। মা হওয়ার পর মার্চে তাঁর ওজন ছিল ৮৭ কেজি। তারপর ১ বছর ২ মাস সময়ে পুষ্টিবিদ ও পরিবারের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ও নিয়মমাফিক জীবন যাপন করে আবার ৫১ কেজিতে ফিরে এসেছেন তিনি।
মাশিয়াত বলেন, ‘আমার মেয়ে এশাল মিনজা করিমের জন্মের সময় রংপুরে আমার মামনির (মা) কাছে ছিলাম। আমার ওজন কমানোর জন্য তাঁর উৎসাহই ছিল সবচেয়ে বেশি।’
প্রতিদিন নিয়ম করে মেয়ের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি করতেন মাশিয়াতের মা আনমনা হক। সেই তালিকায় শাকসবজি, ডিম, দুধের পরিমাণ বেশি থাকলেও ভাত থাকত কম। এ ছাড়া প্রতিদিন থাকত বড় এক বাটি লাউ আর কালিজিরাভর্তা। মাশিয়াত মেয়েকে ‘এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং’ করিয়েছেন। মেয়ে এশালের যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেটি মাথায় রেখে প্রতিদিন খাবার বানাতেন মাশিয়াতের মা। মায়ের কাছে আগে–পরে মিলিয়ে আট মাসের মতো ছিলেন তিনি। এরপর ঢাকায় চলে আসেন মাশিয়াত। মার্চ মাস থেকে নিজের ওজন কমানো নিয়ে সচেতন হতে শুরু করেন তিনি। জুলাই মাসের ৩০ তারিখে পুষ্টিবিদের ব্যবস্থাপত্রে মাশিয়াতের ওজন দেখা যায় ৮১ কেজি। মানে, এরই মধ্যে ৬ কেজি ওজন কমে গেছে। ঢাকায় আসার পর স্বামী এহসানুল করিমের পরামর্শে পুষ্টিবিদ সাজিয়া মাহমুদের কাছে যান মাশিয়াত। সম্পর্কে তিনি এহসানুলের কাজিন। মাশিয়াত রহমান বলেন, ‘আপু আমার দৈনন্দিন জীবনযাপন, শারীরিক গড়ন সবকিছু জেনে ডায়েট চার্ট করে দিতেন। নিয়মিত ওজনের আপডেট নিতেন। কখনো কোনো কোনো খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে–কমিয়ে ডায়েটে ভারসাম্য এনে দিতেন।’
এভাবে তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী চলতে থাকেন মাশিয়াত। ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখে তাঁর ওজন আরও ১০ কেজি কমে ৭১ কেজিতে আসে। এভাবে চলতি বছর এপ্রিলে তাঁর ওজন হয় ৫২ কেজি আর এখন মাশিয়াতের ওজন ৫১ কেজি। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার আগে মাশিয়াতের স্বাভাবিক ওজন ছিল ৫৩ কেজি। সেই হিসাবে এখন তাঁর ওজন আরও কিছুটা কম। তবে পুষ্টিবিদের পরামর্শে হয়তো আর ওজন না কমিয়ে বর্তমান ওজন ধরে রাখার জন্যই কাজ করবেন মাশিয়াত।
ওজন কমানোর এই সময়ে মাশিয়াত আরও মেনে চলতেন লো কার্ব ডায়েট, অর্থাৎ ভাত খেতেন, তবে এক কাপের বেশি নয়। সকাল, দুপুর আর রাতে এক কাপ ভাতের সঙ্গে বেশি বেশি করে খেতেন সবজি আর মাছ। যেদিন মাংস রান্না হতো, তালিকায় সেদিন মাংসও থাকত। ‘তবে ঝোল থাকলে সরিয়ে নিতাম।’ এর মধ্যে ক্ষুধা লাগলে খেতেন টক দই আর ফল। এ ছাড়া নিয়মিত ওয়ার্কআউট করেছেন। মাশিয়াত জানান, ‘এত ছোট মেয়েকে রেখে জিমে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে মেয়ে আরেকটু ছোট থাকতে টানা তিন–চার ঘণ্টা ঘুমাত। সে সময় বাসার সামনের রাস্তায় হাঁটতাম। কখনো আবার হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতাম ধানমন্ডি লেকে।’ তবে ধীরেসুস্থে হাঁটা নয়, হাঁটতে হবে খুব জোরে ঘাম ঝরিয়ে। তাহলেই কমবে ওজন। এশাল যখন একটু বড় হলো, হাঁটাচলা শিখল, তখন আর আলাদা করে বাইরে হাঁটার সুযোগ পেতেন না। তখন ওয়ার্কআউটের জন্য বেছে নিলেন দড়িলাফ। প্রথম দিকে ৪৫ বার, এরপর ১০০ বার, এভাবে দড়িলাফের সংখ্যা ৫০০–তে নিয়ে আসেন মাশিয়াত।
নিয়ন্ত্রিত খাবারের পাশাপাশি ওয়ার্কআউট—দুটোরই যখন ভারসাম্য থাকে, তখনই আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত ওজনে ফিরে যেতে পারবেন, মনে করেন এই মডেল। মাশিয়াতের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য ৬ মে তাঁর লালমাটিয়ার বাসায় যখন গেলাম, তখন সারা ঘরে দৌড়ে বেড়াচ্ছিল ছোট্ট এশাল। কথা বলতে বলতেই মাশিয়াতকে দেখা গেল, মেয়ের জন্য কখনো পানি আনছেন, কখনো তাকে নিয়ে যাচ্ছেন বাথরুমে। জানালেন, সাহায্যকারী থাকলেও মেয়ের সব কাজ তিনি নিজ হাতে করেন। মা হওয়ার পর এই সক্রিয় থাকা শরীরের জন্যও খুব জরুরি। এতে অলসতা পেয়ে বসে না। আর শরীরে ফিটনেস বজায় থাকে।
ডায়েট করে ওজন কমানোর পর অনেকেরই চেহারার স্বাভাবিক লাবণ্য হারিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রেও মাশিয়াত ব্যতিক্রম। ৩৬ কেজি ওজন কমলেও চোখেমুখে নেই সে ছাপ। কারণটা নিজেই উদ্ঘাটন করেছেন তিনি। তা হলো মানসিক প্রশান্তি। মা হওয়ার আগে বা পরের সময়টুকু তাঁর স্বামী আর মা সর্বক্ষণ তাঁকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করতেন। এ ছাড়া মা হওয়ার আগেই ‘পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন’ বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। ফলে মা হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই যে বিষণ্নতা নতুন মায়ের হয়ে থাকে, মাশিয়াতের তা একেবারেই হয়নি। কখনো যদিও–বা অল্পস্বল্প মন খারাপ লাগত, নিজেই নিজেকে বোঝাতেন যে এখন তাঁর কী করতে হবে। মানসিকভাবে ভালো থাকা তাঁর চেহারার স্বাভাবিক লাবণ্য হারাতে দেয়নি বলে মনে করেন তিনি।
ওজন কমিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি পোস্ট করা শুরু করলেন, দেশের বড় ফ্যাশন হাউসগুলো থেকে ফোন আসা শুরু হলো। আড়ং, ক্লাব হাউসের মতো বড় বড় ব্র্যান্ড তাঁর সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করে। ফিরে আসে কাজের সুযোগ। মাশিয়াত বলেন, ‘কাজে ফিরে আসার জন্য যে ওজন কমিয়েছি, তেমন নয়। মামণি সব সময় বলেছেন, “তুমি যদি শুধু সংসারও করো, তাহলেও সুন্দরভাবে করো। মা হয়েছ বলেই কেন অতিরিক্ত ওজন নিয়ে নিজেকে বুড়িয়ে ফেলবে!” আসলে মায়ের উৎসাহেই আমার এই ওজন কমানোর যাত্রা শুরু।’
শেষ করার আগে আরেকটি বিষয় মনে করিয়ে দিলেন মাশিয়াত। পরিবারের মানুষদের সহযোগিতা না থাকলে মা হওয়ার পর একটা মেয়ের আগের ফিটনেসে ফিরে আসা কঠিন। মাশিয়াত বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে আমার ছোট বোন লুবাবা ও বাসায় কাজের সহকারী সায়েরা খালার কথা তো বলতেই হয়। তেল ছাড়া রান্না, সময়মতো খাবার দেওয়ার কাজগুলো তাঁরাই করেছেন। তাই ওজন কমানোর জন্য নিজের চেষ্টার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতাও খুব প্রয়োজন।’