৫০ পেরিয়েছেন? এবার এসব বিষয়ে নজর দিন

বয়স বাড়ার অর্থ জীবনের অন্য একপর্যায়ে পদার্পণ। সেই সময়টা আনন্দে কাটান। মডেল: ওগতাই বাবুছবি: কবির হোসেন

অসুস্থ কন্যার প্রিয় বিড়ালছানাটা ভয়ে কাঁটা হয়ে ঘরের বাইরের গ্রিলের ওপরের অংশে আটকে আছে। অফিসফেরত বাবা নিজের বয়স ভুলে দিব্যি গ্রিল বেয়ে ওপরে উঠে তাকে নামিয়ে আনলেন। মানুষটির বয়স কত, জানেন? ৬৫। বাস্তব জীবনের এক অতুলনীয় ভালোবাসার দৃষ্টান্ত দিয়েই শুরু করলাম। সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পরে ঘরকুনো হয়ে বসে থাকেননি, বেসরকারি একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যাচ্ছেন।

৫০ বছর অবশ্যই একটি মাইলফলক। জীবনপথের একটা বড় অংশ পেরিয়ে আসা। বয়স বাড়ছে, যুগ বদলাচ্ছে, প্রজন্মান্তরে নিজেকে বেখাপ্পা মনে হচ্ছে? জীবনজুড়ে যে প্রজন্মের জন্য খাটাখাটুনি করলেন, তাদের মাঝে আপনিই তো হতে পারেন চিরতরুণ। জীবনের কর্তব্যকর্মের অনেকটাই হয়তো পালন করা সারা। তবে গড়পড়তা বাঙালি আবার পরিবার-পরিজনের খেয়াল রাখতে রাখতে নিজের যত্ন নিতে বেমালুম ভুলে যান। সেটি শরীরে আর কতই–বা সইবে বলুন!

সুস্থতার সঙ্গে আপস নয়

সুস্থ থাকুন। জীবনের সব কর্তব্যকর্ম নিশ্চয়ই সমাপ্ত নয়? কর্মস্থলেও এখনো আপনার প্রয়োজন ফুরায়নি। নিজের জীবনের সাধ-আহ্লাদও থাকতে পারে বাকি। সুস্থতার জন্য নিয়মমাফিক জীবনযাপন আবশ্যক। সময়মতো খাওয়া, সময়মতো বিশ্রাম আর নিয়মমাফিক শরীরচর্চা করা চাই।

সময়মতো বিশ্রাম আর নিয়মমাফিক শরীরচর্চা করা চাই
ফাইল ছবি

বয়স বাড়ে মনে। তাই মন থেকে বুড়িয়ে যাবেন না। বয়স বাড়ার অর্থ জীবনের অন্য একপর্যায়ে পদার্পণ। একে নেতিবাচকভাবে নেবেন না। শরীরটা ‘ফিট’ থাকলে সবই পারবেন। মনও রাখুন প্রফুল্ল। জীবনকে আপনি দিয়েছেন বিস্তর। এবার নিজের জন্য বাঁচুন। ছবি আঁকা, বই পড়া, লেখালেখি (হতে পারে সেটা প্রতিদিনের ডায়েরি লেখা), আবৃত্তি, বাগান করার মতো যেকোনো মননশীল কাজে সময় দিন।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন

খাদ্যাভ্যাস হোক সুষম। শাকসবজি, মৌসুমি ফলমূল এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। চিনি ছাড়া চা-কফি (তবে অতিরিক্ত নয়) এবং দুধ খেতে পারেন। চিনিমিশ্রিত পানীয় আপনার জন্য বর্জনীয়। পাতে বাড়তি লবণ নেবেন না। লাল মাংস এড়িয়ে চলুন। ডিমের সাদা অংশ রোজ খেলেও কুসুম রোজ নয়। কিডনির সমস্যা বা ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্য খাদ্যতালিকা ভিন্ন।

কেবল রোগ হলেই চিকিৎসকের কাছে যাবেন? তা নয়। কোনো উপসর্গ না থাকলেও প্রতিবছরই কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়। ৪০ পেরোলেই করা উচিত আর ৫০–এর পর তো মাস্ট। অনেকে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসে ভোগেন, কারও বাড়ে কোলেস্টেরল। এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগে চিকিৎসার পাশাপাশি ফলোআপও জরুরি (নির্দিষ্ট সময় অন্তর চিকিৎসকের পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা)। কোনো কিছুর উপসর্গও থাকতে পারে শরীরে, তাই চেকআপে থাকুন। ডায়াবেটিস হলে বেশি বেশি খাবার বা পানি খেতে পারেন, প্রস্রাবও হতে পারে বেশি, ক্ষত নিরাময়েও সময় লাগতে পারে বেশি। প্রস্রাবের চাপে হয়তো রাতে ঘুম ভাঙছে বারবার—প্রোস্টেটগ্রন্থির সমস্যা কিংবা ডায়াবেটিস দায়ী হতে পারে। উপসর্গ বিব্রতকর হলেও চিকিৎসকের কাছে যান, চিকিৎসা নিন, নিজের ভেতর লুকিয়ে রাখলে দিনে দিনে বাড়বে বই কমবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করবেন না। দীর্ঘ মেয়াদে ভিটামিনজাতীয় ওষুধ কিংবা গ্যাসের ওষুধ সেবন করবেন না।

সবার মাঝে বাঁচুন

ঘরেও করতে পারেন শরীরচর্চা। মডেল: ওগতাই বাবু
ছবি: কবির হোসেন

বয়স বাড়ছে বলে শরীরচর্চা বাদ দেওয়া যাবে না। শরীরচর্চা করতেই হবে। সেটা ঘরে, ছাদে বা প্রকৃতিতে, যেখানেই হোক। অন্যান্য ব্যায়ামের পাশাপাশি ভারসাম্য বাড়ানোর ব্যায়ামও জরুরি, এতে ভবিষ্যতে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমবে। রোদে সময় কাটান, রোজ অন্তত আধঘণ্টা। এতে শরীরে ভিটামিন ডির অভাব হবে না। বসা-দাঁড়ানো-শোয়ার মতো দৈনন্দিন কাজে সঠিক দেহভঙ্গি আবশ্যক, আপাত–আরামবোধ হলেও এঁকেবেঁকে, কুঁজো হয়ে কিছু করা যাবে না। হাঁটুব্যথা, কোমরব্যথা, কাঁধের জড়তা (ফ্রোজেন শোল্ডার) প্রভৃতির জন্য নিয়মমাফিক নির্দিষ্ট ব্যায়াম করুন। দীর্ঘমেয়াদি ব্যথায় উষ্ণতার (কুসুম গরম পানি) সাহায্য নিতে পারেন, তবে অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয়।

আপনজনদের সঙ্গে সময় কাটান। নতুন প্রজন্মের থেকে আপনাকে আলাদা করে দিচ্ছে প্রযুক্তি? ওদের স্বতন্ত্র জীবনধারায় প্রবেশ না করেও কিন্তু কিছুটা সময় ওদের সঙ্গে কাটান যায়। মজার ঘটনা কিংবা সাফল্যের জীবন ইতিহাস, নিজের জীবনটাকেই বইয়ের পাতার মতো ওদের সামনে মেলে ধরুন না! শরীরচর্চা রোজ তরুণ কিংবা সমবয়সীদের সঙ্গেও করতে পারেন। মাঝেমধ্যে ঘুরতে যান, ধারেকাছে কিংবা দূরে কোথাও, জায়গাটা মুখ্য নয়, বেড়ানোটাই বড়। পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর না হয়েও প্রযুক্তির সহায়তায় পুরোনো বন্ধুদের খুঁজতে পারেন।

পরিবারের বাকি সদস্যদের উচিত ৫০ প্লাস বয়সীদের নির্দিষ্ট সময় দেওয়া। এতে তিনি প্রফুল্ল থাকবেন।