মুঠোফোন হারানোর এক ঘণ্টার মধ্যে যে ৫টি কাজ করতে হবে

মুঠোফোন হারিয়ে গেলে কোনো অপরাধে ব্যবহার হবে কি না, তা নিয়েও তৈরি হয় শঙ্কা।
ছবি: সংগৃহীত

মুঠোফোন এখন আমাদের জীবনের অংশ। বেখেয়ালে কিংবা সামাজিক অনিরাপত্তার কারণে অনেকেই আমরা মুঠোফোন হারিয়ে ফেলি। এতে দুশ্চিন্তা ভর করাই স্বাভাবিক। ছবি থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই যে থাকে এই যন্ত্রে। হুট করে মুঠোফোন হারিয়ে গেলে মুঠোফোন নম্বর থেকে শুরু করে বিভিন্ন তথ্য খুঁজে পেতে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (কমিউনিটি ও বিট পুলিশিং) আফরিদা রুবাই বললেন, ‘মুঠোফোন হারানোর পর দ্রুত থানায় যোগাযোগ করলে আইনি সহায়তা পাওয়া সহজ হয়। মুঠোফোন এখন আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের অন্যতম যন্ত্র। আমরা অনেক পিন কোড মুঠোফোনে সংরক্ষণ করি, বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করি, যা আমাদের ব্যাংকিং, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ই–মেইলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করে। এসব অ্যাপ থেকে তথ্য চুরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা সাইবার অপরাধীদের জন্য সুযোগ তৈরি করে। মুঠোফোন হারানোর পরপরই থানায় রিপোর্ট করা উচিত, যাতে আইনি সহায়তা দ্রুত পাওয়া যায় এবং হারানো মুঠোফোনের মাধ্যমে কোনো অপরাধ সংঘটিত না হয়।’

মুঠোফোন এখন আর শুধু ফোন করার যন্ত্র নয়, এটি আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের অন্যতম যন্ত্র।
ছবি: কবির হোসেন

সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, ‘ আমরা বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে দেখেছি, চুরি বা ছিনতাই হওয়া মুঠোফোনগুলো অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়। মুঠোফোন হারালে খুব দ্রুত অপারেটরের মাধ্যমে মুঠোফোনটি ব্লক করে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চোরাই বা কুড়িয়ে পাওয়া মুঠোফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এতে আপনি নিজেও আইনি সমস্যায় পড়তে পারেন।’

মুঠোফোন উদ্ধারে জিডির তথ্য গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
প্রতীকী ছবি

আপনার হারিয়ে যাওয়া মুঠোফোনটি যাতে কোনো অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত না হয়, সে জন্য মুঠোফোন হারানোর এক ঘণ্টার মধ্যে যে ৫টি কাজ করতে হবে, তা জেনে নিন।

১. থানায় জিডি করুন

যে এলাকায় মুঠোফোন হারিয়েছেন বা খুইয়েছেন, সেখানকার কোনো থানায় গিয়ে জিডি করে আপনার ফোন হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবগত করুন। এতে ভবিষ্যতে যেকোনো আইনি ঝামেলায় পড়লে সুরক্ষিত থাকবেন। আবার অনেক সময় মুঠোফোন উদ্ধারে জিডির তথ্য গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

২. সিম ব্লক করুন

মুঠোফোন হারিয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব সিম ব্লক করতে আপনার মুঠোফোন অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনে কল সেন্টারে দ্রুত ফোন করুন। নয়তো আপনার এলাকার কোনো সেলস সেন্টার বা কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে গিয়ে সিম ব্লক করে ফেলুন। আপনার সিম চালু থাকলে তা অপব্যবহার হতে পারে। ফোনের কল লিস্ট ধরে প্রতারণার ঝুঁকি থাকে।

অনেকেই নিজের নামে নিবন্ধন করা সিম ব্যবহার করেন না। তখন সিম ব্লক করতে বেগ পোহাতে হয়। এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই নিজের নামে সিম ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। সিম অন্যের নামে নিবন্ধিত হলে যার নামে নিবন্ধন করা, তার মাধ্যমে সিমটি ব্লক করতে হবে।

অননুমোদিত নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ করতে আপনার ই–মেইল পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
ছবি: আনস্প্ল্যাশ

৩. ফোনের ডেটা নিয়ন্ত্রণে বাধা দিন

আপনার ফোন লক করার চেষ্টা করুন। তথ্য মুছে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। ফোনে যদি কোনো ট্র্যাকিং অ্যাপ, যেমন ফাইন্ড মাই আইফোন (আইফোনের জন্য) বা গুগলের ফাইন্ড মাই ডিভাইস (অ্যান্ড্রয়েডের জন্য) সক্রিয় করার সুযোগ থাকে, তাহলে দ্রুত তার মাধ্যমে মুঠোফোনটি দূর থেকে লক বা ডেটা মুছে ফেলার চেষ্টা করুন। এতে অন্য কেউ আপনার ব্যক্তিগত ডেটার নাগাল পাবে না।

সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে। হারানোর পর অবিলম্বে অন্য ডিভাইস বা ল্যাপটপ থেকে আপনার যত অ্যাকাউন্ট আছে, তা লগ–ইন করে পাসওয়ার্ড দ্রুত পরিবর্তন করুন। হারানো ডিভাইস থেকে স্বয়ংক্রিয় লগ–আউট করে ফেলতে হবে।

ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটকের পাসওয়ার্ড দ্রুত পরিবর্তন করুন। পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেললে ফোনের নিয়ন্ত্রণ কেউ নিতে পারবে না। মুঠোফোনের মাধ্যমে আমরা ই–মেইল ব্যবহার করি। ই–মেইল অ্যাকাউন্ট অত্যন্ত সংবেদনশীল। অনেক তথ্য থাকে আমাদের। অননুমোদিত নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ করতে আপনার ই–মেইল পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করে রাখুন।

৪. ব্যাংকিং সেবা বন্ধ করুন

মুঠোফোনের মাধ্যমে আমরা অনেক অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহার করি। মুঠোফোন হারালে অবিলম্বে আপনার অনলাইন ব্যাংকিং পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। হারিয়ে যাওয়া ডিভাইসের কথা আপনার ব্যাংকে জানিয়ে রাখুন।

আপনার অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে স্থগিত বা অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দিতে পারেন। হারানো ফোনের সঙ্গে যুক্ত যেকোনো ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড থাকলে তা ব্লক করুন।

মুঠোফোন হারালে অবিলম্বে আপনার অনলাইন ব্যাংকিং পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
ছবি: সংগৃহীত

৫. ডেটা ব্যাকআপ নেওয়ার চেষ্টা করুন 

ক্লাউডের মাধ্যমে বিভিন্ন নোট বা ডেটা ব্যাকআপ করে ফেলুন। আমরা মুঠোফোনে অনেক ছবি ও ভিডিও সংরক্ষণ করি। এসব ছবি ও ভিডিও দ্রুত কপি করে অন্য ডিভাইসে রাখুন। এ ছাড়া মুঠোফোনে অনেক তথ্য লিখতে আমরা গুগল ক্লিপ বা এভারনোট ব্যবহার করি। মুঠোফোন হারালে ক্লাউডভিত্তিক এমন সেবার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ডেটা বা নোট সংরক্ষণ করে ফেলুন। আপনার নোটের ব্যাকআপ নিশ্চিত করুন এবং সম্ভব হলে পুরোনো মুঠোফোন থেকে তা মুছে দিন।

মুঠোফোন হারালে আপনার সিম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ হচ্ছে কি না, সেদিকে খেয়াল রাখুন। বিভিন্ন আর্থিক অ্যাকাউন্টেও খেয়াল রাখুন। আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিন। ই–মেইলে নজর রাখুন। অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ করলে দ্রুত মুঠোফোন অপারেটর, ব্যাংক, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিন।