একসঙ্গে জন্ম ও বেড়ে ওঠা, একসঙ্গেই স্বর্ণপদক

দুই বোন (বাঁ থেকে) আফিয়া আলম ও লামিয়া আলম
ছবি: সংগৃহীত

আফিয়া আলম ও লামিয়া আলম যমজ বোন। তাঁদের বয়সের পার্থক্য মাত্র ৬০ সেকেন্ড। দুজনের বেড়ে ওঠা, স্কুল-কলেজ, দুষ্টুমি-খুনসুটি—সবকিছুতেই এক বোন আরেক বোনের সঙ্গী, যাকে বলে মানিকজোড়। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। দুজনই ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে ভর্তি হয়েছেন। প্রতি সেমিস্টারে ভালো ফল করেছেন। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তনে আচার্য স্বর্ণপদকটাও (চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল) একসঙ্গে ঝুলিতে পুরেছেন তাঁরা।

যে কারণে স্বর্ণপদক

ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে পড়াশোনা করেছেন আফিয়া। স্নাতকে সর্বোচ্চ সিজিপিএ ‘চারে চার’ পেয়ে স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত হন। অন্যদিকে লামিয়ার পড়াশোনার বিষয় ছিল ফার্মেসি। বিভাগের সর্বোচ্চ সিজিপিএ ৩ দশমিক ৯৯ পাওয়ায় আচার্য স্বর্ণপদকের যোগ্য হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর হাত থেকে ৪ মে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন দুই বোন। স্মরণীয় সেই মুহূর্ত প্রসঙ্গে আফিয়া আলম বলেন, ‘এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। অভিভাবকদের সামনে স্বর্ণপদক নেওয়া আসলেই গর্বের বিষয়। এটা সামনের দিনে আরও ভালো করার জন্য আমাকে প্রেরণা দেবে।’

আরও পড়ুন
মায়ের সঙ্গে দুই বোন
ছবি: সংগৃহীত

মা ছিল অনুপ্রেরণা

বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারাবাহিকভাবে ভালো করা আফিয়া-লামিয়া স্কুল-কলেজের পড়ালেখায় ছিলেন সাদামাটা। তাঁদের ভাষায়, ‘দুজনই বেশ ফাঁকিবাজ ছিলাম, কখনো কখনো তো ফেলও করেছি। খুনসুটিতে মেতেছি, ক্লাসের মধ্যে মারামারি করেছি।’ হঠাৎ কী এমন হলো যে দুই বোন আটঘাট বেঁধে পড়ালেখায় মনোযোগী হয়ে উঠলেন? লামিয়া আলম বলেন, ‘স্নাতকে ভর্তি হওয়ার পর একটা ইন্সপিরেশন (অনুপ্রেরণা) কাজ করত। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। মা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছে। মাকে দেখে মনে হতো, ভালো করতে হবে, ভালো কিছু হতে হবে। সেখান থেকে দুজনের কষ্ট করা। পড়ালেখার পিছে লেগে থাকা।’

 

কারও সঙ্গেই প্রতিযোগিতা নয়

বন্ধুবৎসল সম্পর্ক, পারস্পরিক উদার ও সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব—মানবিক এই গুণগুলোই ছিল সফলতার মন্ত্র। এ বিষয়ে লামিয়া আলম বলেন, ‘অনেক পরিবারে ভাই-বোনের একজনকে অন্যজনের প্রতিদ্বন্দ্বী বানানো হয়। মা-বাবারা সন্তানদের মধ্যে তুলনা করেন। আমরা দুই–বোন কখনো কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবিনি। বরং সব সময় মনে করতাম, এক বোন অন্য বোনকে সঙ্গে নিয়ে যদি ওপরে উঠতে না পারি, সেটা হবে আমাদের ব্যর্থতা। আমরা একজন অন্যজনের রুটিন শেয়ার করতাম, কখন-কীভাবে পড়ব—একসঙ্গে বসে ঠিক করতাম, কেউ একজন না পড়তে বসলে অন্যজন তাঁকে উৎসাহিত করতাম। ভালো করার ক্ষেত্রে এসব কাজে দিয়েছে।’

স্বর্ণপদক পেতে হলে

আচার্য স্বর্ণপদক পাওয়া যেকোনো শিক্ষার্থীর কাছে স্বপ্নের মতো। অনুজ, যাঁরা এই স্বপ্নের সারথি হতে চান, তাঁদের উদ্দেশে দুই বোন বলেন, খুব বেশি পড়াশোনা করতে হবে, সারা দিন বই-খাতা নিয়ে থাকতে হবে—ব্যাপারটা কিন্তু এমন না। বিশ্ববিদ্যালয়জীবন যতটা সম্ভব উপভোগ করা যায়, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো যায়, ভালো স্মৃতি তৈরি করা যায়—সেটা চেষ্টা করতে হবে। একই সঙ্গে যদি গুছিয়ে, কৌশল খাটিয়ে রুটিনমাফিক পড়া যায়—তাহলে ভালো ফল করা সম্ভব।

আফিয়া আলম জানালেন, ‘ভালো ফলের জন্য ত্যাগও স্বীকার করতে হয়েছে। অনেক পছন্দের জিনিস বাদ দিতে হয়েছে। এমনও হয়েছে, পরীক্ষার কারণে আত্মীয়স্বজনের বিয়েতে যাইনি বা কোনো রকম গিয়ে চলে এসেছি।’ লামিয়া আলম জানালেন, ‘শেষ সেমিস্টারে এসে দুই বোন একসঙ্গে অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন একটা শঙ্কা তৈরি হয়, আগের মতো ভালো করতে পারব কি না। সেই সময়ও অসুস্থতাকে ছাপিয়ে ভালো করতে সক্ষম হয়েছি।’

উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যেতে চান লামিয়া। দেশে ফিরে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত হতে চান। একই কথা জানালেন আফিয়া। তিনিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চান।