রোগী দেখতে গিয়ে এসব ভুল করবেন না
কেউ অসুস্থ হলে তাঁর ভালোমন্দের খোঁজ রাখা, তাঁকে দেখতে যাওয়াটা সামাজিক রীতি। তবে এই দেখতে যাওয়া কিংবা খোঁজখবর রাখাটা যেন রোগীর কাছে বিরক্তিকর না হয়ে ওঠে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আত্মীয় বা বন্ধু হিসেবে রোগীকে সাহস জোগাতে গিয়ে অজান্তেও যাতে আপনার কারণে কোনো অসুবিধার সৃষ্টি না হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মতলেবুর রহমান বলেন, ‘অসুস্থ অবস্থায় শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়েন মানুষ। এ অবস্থায় সহজেই নানা ধরনের জীবাণু দিয়ে সংক্রমিত হতে পারেন তিনি। বাইরে থেকে আসা মানুষের হাতের স্পর্শ কিংবা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমেই নতুন কোনো জীবাণুর সংক্রমণ হয়ে যেতে পারে। তাই রোগী হাসপাতালে কিংবা বাসা যেখানেই থাকুন, কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন।’
রোগীর কক্ষে
রোগীর কক্ষে যাওয়ার সময় যথাসম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক-পরিচ্ছদে থাকুন। যে পোশাকে বাজারঘাট ঘুরেছেন, সেই পোশাকে রোগীর কক্ষে না যাওয়াই ভালো।
যেকোনো রোগীর কক্ষে প্রবেশের আগেই মাস্ক পরে নিন। জুতা খুলে রাখুন বাইরেই, হাসপাতালে শু কভার বা ফুট কভার পরতে পারেন।
রোগীকে জড়িয়ে ধরা, রোগীর সঙ্গে হাত মেলানো, রোগীর গায়ে হাত বোলানো এবং রোগীর বিছানায় বসা থেকে বিরত থাকুন। স্পর্শ করতে চাইলে স্পর্শের আগে এবং পরে নিয়মমাফিক সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করে নিন।
রোগীর থেকে যতটা সম্ভব দূরে বসুন।
রোগীর ঘরে কান্নাকাটি করবেন না।
অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে অস্ত্রোপচারের জায়গা দেখতে চাইবেন না, স্পর্শ তো করবেনই না। অতিরিক্ত মানুষের ভিড়ে অস্ত্রোপচারের রোগীর জন্য ভীষণ ক্ষতিকর।
রোগীর জন্য উপহার
ফুল পবিত্রতার প্রতীক হলেও রোগীর জন্য ফুল না নেওয়াই ভালো। ফুল কিন্তু জীবাণু এবং অ্যালার্জিজনিত সমস্যারও উৎস হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কখনোই রোগীর জন্য বাইরে তৈরি খাবার নেবেন না। ফলমূল বা অন্যান্য খাবার নেওয়ার আগে জেনে নিন হাসপাতালে খাবার নেওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কি না, কিংবা রোগীকে কোনো নির্দিষ্ট খাবার খেতে বারণ করেছে কি না। হাসপাতালে এমন কোনো রসালো ফল নেওয়া উচিত নয়, যা খেতে গিয়ে বা কাটতে গিয়ে রোগীর পারিপার্শ্বিকে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
নিতান্তই কোনো উপহার নিতে চাইলে রোগীর বয়স ও শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে বই, খেলনা কিংবা অন্যান্য ছোটখাটো উপহার বেছে নিন।
শব্দচয়নে সতর্কতা
রোগীর সামনে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করবেন না। ‘সাবধান থাকোনি বলে এ রকম হয়েছে’ কিংবা ‘অমুক জায়গায় গেলে আরও ভালো চিকিৎসা হতো’—রোগীর সামনে এ-জাতীয় কথা বলবেন না। অনেকে অভিযোগ করেন, ‘আমাকে কেন আরও আগে জানাওনি?’ অথচ রোগীকে কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে হাসপাতালে আনা হয়েছে, তিনি সেটা জানেনই না। এমন ‘মান-অভিমান’জাতীয় কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। রোগীর পরিবারের মানুষেরা এবং অন্য যাঁরা দিনরাত তাঁর পাশে থাকছেন, তাঁরাও কিন্তু পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকেন না। তাঁদের দোষারোপ করে কোনো কথা বলবেন না।
বিশেষ খেয়াল যাঁদের প্রতি
যেসব রোগীর শারীরিক বা মানসিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল, তাঁদের দেখতে গেলে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করুন। বিশেষত যাঁদের অস্ত্রোপচার হয়েছে, যাঁদের কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি চলছে, কিংবা যাঁদের এমন কোনো রোগ হয়েছে, যাতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়, অবশ্যই তাঁদের ক্ষেত্রে এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। অসুস্থ ব্যক্তি যদি হন বয়োজ্যেষ্ঠ বা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু কিংবা লিভার বা কিডনির রোগী, তাঁদের ক্ষেত্রেও যত্নের সঙ্গে এসব নিয়ম মেনে চলুন।
নিবিড় পরিচর্যার রোগী
নিবিড় পরিচর্যায় কিংবা বিশেষ পর্যবেক্ষণে (আইসিইউ, সিসিইউ, এইচডিইউ কিংবা অস্ত্রোপচার-পরবর্তী পর্যবেক্ষণ কক্ষে) থাকা রোগীকে দেখার জন্য চিকিৎসককে বারবার অনুরোধ করবেন না। এমন রোগীকে দেখতে হাসপাতালের নির্ধারিত সময়ে, নির্দিষ্ট পোশাকে, নিয়ম মেনে কেবল কাছের আত্মীয়রা যাবেন।