চাঁদরাতে এলাকার বন্ধু আর আম্মার বাটা মসলার গন্ধ মিস করছিলাম

কিছু কিছু ঈদ মনে দাগ কেটে থাকে আজীবন। এমন অন্য রকম ঈদের অভিজ্ঞতাই লিখেছেন পাঠকেরা। এখানে পড়ুন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের তায়েব খান–এর লেখা।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়প্রথম আলোর ফাইল ছবি

ঈদের পরেই পরীক্ষা, টিউশনেরও চাপ ছিল। তাই ২০২৩ সালের ঈদে বাড়িতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। মা ফোন করে জানতে চাইছিল, ‘কবে বাড়ি আসবে?’ উত্তরে শুধু বলেছিলাম, ‘আসতে পারছি না।’

চাঁদরাতে এলাকার বন্ধুদের সান্নিধ্য আর আম্মার বাটা মসলার গন্ধ মিস করছিলাম খুব। কিন্তু কিছু তো করার নেই। নুডলস আর সেমাই কিনে মেসে ফিরেছি। আমার রুমের সঙ্গে ছোট একটা ব্যালকনি ছিল। ব্যালকনিতে রাখা চেয়ারটায় বসে পড়লাম। নিজের অজান্তেই চোখে পানি এসে গেল। ভাবছিলাম, ঈদের আনন্দটা ফিকে হয়ে গেল কেন?

ঈদের দিন এল, সকালে গোসল সেরে চলে গেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলে। আমার এক বন্ধু আছে, মেকানিক্যালের রেজা, যাকে আমি ‘গরিবের বন্ধু’ বলে ডাকি। গরিবের বন্ধু বলার কারণ—যখনই আমার বাইকে ঘোরার শখ জাগে, তখন ও কারও না কারও থেকে বাইক ধার করে এনে আমাকে ঘুরায়। রেজা আর আমি হলের ডাইনিংয়ে চলে গেলাম। ঈদে আমাদের মতো যারা বাসায় যেতে পারেনি, তাদের জন্য সেখানে খাবারের আয়োজন ছিল। ডাইনিংয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউনুস মামা আমাদের সেমাই আর রুটি দিলেন। কিন্তু সেমাই খাওয়ার জন্য কোনো চামচ নেই। অগত্যা, হাত দিয়েই খাওয়ার কাজ সেরে কেন্দ্রীয় মসজিদে নামাজ পড়তে চললাম।

নামাজ শেষে অদ্ভুত একটা জিনিস খেয়াল করলাম, কেউ কারও সঙ্গে কোলাকুলি করল না। সবাই সবার মতো চলে গেল। কী আর করা, আমি আর রেজা শুধু কোলাকুলি করলাম। পথে ডিপার্টমেন্টের এক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। বাসায় যেতে বললেন। দাওয়াত কবুল করলাম, কিন্তু গেলাম না। চা–বাগানে ঘুরতে চলে গেলাম। ঘোরাঘুরি করলাম আর গাইতে থাকলাম, ‘দ্য গ্রাস ওয়াজ গ্রিনার, দ্য লাইট ওয়াজ ব্রাইটার।’

দুপুরের খাবারও হলেই খেলাম। এরপর এসে বসলাম ক্যাম্পাসের গাজী কালুর টিলায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে সূর্যাস্ত দেখলাম। বিষণ্ন হৃদয়ে প্রকৃতির সবকিছুই অনেক সুন্দর লাগে। বিশ্বাস করুন, ওইটা আমার দেখা সুন্দরতম সূর্যাস্ত ছিল। মাঝে বাসা থেকে ফোন এল কয়েকবার। কথা হলো, আবার কয়েকবার ফোন কেটে দিলাম। সন্ধ্যার পরে গোলচত্বরে ফিরলাম। রেজা হলে চলে গেল, আর আমি মেসে। এভাবেই কেটেছিল একটা বিশেষ খুশির দিন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের তায়েব খান
ছবি: সংগৃহীত