‘মেছতা বা অবাঞ্ছিত লোমের মতো সমস্যায় চিকিৎসা নেওয়ার পরেও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গুরুত্বপূর্ণ’

বয়স, শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ও পরিবেশগত নানা বিষয় সৌন্দর্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। নানা রকম প্রভাবে সৌন্দর্যহানি হতে পারে। ত্বকে দাগছোপ, মসৃণতা হারিয়ে যাওয়াসহ নানা কিছু ঘটে। ত্বক ও শারীরিক গড়নকে সুন্দর করে তোলার আধুনিকতম চিকিৎসাব্যবস্থা অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজি। এ বিষয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ডা. ঝুমু খান’স লেজার মেডিকেলের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও অ্যাস্থেটিক ডার্মাটোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ডা. ঝুমু খান

প্রথম আলো:

দীর্ঘদিন ধরে অ্যাস্থেটিক ডার্মাটোলজি সেক্টরে কাজ করছেন। এই সেক্টরে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা জানতে চাই

আমি যখন অ্যাস্থেটিক ডার্মাটোলজি সেক্টরে কাজ শুরু করি, বাংলাদেশে সেই সময়ে এ ধরনের একটি মানসম্মত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ছিল ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। পশ্চিমা বিশ্ব এই বিষয়ে বেশ এগিয়ে থাকলেও উপমহাদেশে সেই সময়ে অ্যাস্থেটিক ডার্মাটোলজির মাত্র সূচনা হচ্ছে। ধীরে ধীরে আমার প্রতিষ্ঠানটির পরিসর বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি এখানকার চিকিৎসাব্যবস্থাতেও পরিবর্তন আনার চেষ্টা চালিয়ে গেছি সব সময়। বৈশ্বিক মানদণ্ডে যেসব প্রযুক্তি সেরা, সেগুলোর ব্যবস্থা করেছি। পরে দেশের আরও অনেকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে আমার প্রতিষ্ঠানে ত্বকের নানান সমস্যা নিয়েই কেবল কাজ করা হতো। সময়ের সঙ্গে মানুষের চাহিদা বেড়েছে। নানান ধরনের সমস্যার চিকিৎসা যুক্ত হয়েছে। সেগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি বডি শেপিংয়ের কথা। আগে লাইপোসাকশনের মাধ্যমে চর্বি কমানো হতো; কিন্তু মানুষ চায় ব্যথামুক্ত পদ্ধতি, যাতে ফলাফলও পাওয়া যায় দ্রুত। ২০০৯ সালে আল্ট্রা-কনট্যুর প্রযুক্তি যুক্ত করা হয় আমার প্রতিষ্ঠানে। এটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

প্রথম আলো:

ত্বকের দাগছোপ, বিশেষত মেছতার সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। এই সমস্যা কি সারানো সম্ভব?

মেছতার সঙ্গে একজন মানুষের জীবনধারা গভীরভাবে সম্পর্কিত। স্বাস্থ্যকর জীবনধারার কোনো বিকল্প নেই। তবে মেছতার কার্যকর চিকিৎসাও রয়েছে। অবশ্য মেছতা ঠিক কোন অবস্থায় আছে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক অবস্থায় থাকলে চিকিৎসায় তা সেরে যায়, তা না হলে পুরোপুরি সারিয়ে তোলা মুশকিল। তবে চিকিৎসা নেওয়ার পরেও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা জরুরি। নইলে আবারও সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রথম আলো:

অবাঞ্ছিত লোম সরাতে অনেকে থ্রেডিং বা ওয়াক্সিং–পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। এতে কি পরে কোনো সমস্যা হতে পারে? এ ধরনের সমস্যায় কি অ্যাস্থেটিক ডার্মাটোলজি কার্যকর?

অবাঞ্ছিত লোমের সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। দেহে পুরুষালি লোমের উপস্থিতির কারণে একজন নারী হীনম্মন্যতায় ভুগতে পারেন। তাঁর আত্মবিশ্বাসের অভাব হতে পারে। একজন নারীর যদি পুরুষের মতো গোঁফ-দাড়ি গজায়, তিনি ভীষণ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। সামাজিকভাবেও নিগৃহীত হতে পারেন। সাধারণত হরমোনের তারতম্যের জন্য এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। ভুল জীবনধারাও এমন সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই এমন সমস্যা দেখা দিলে হরমোন–বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। পাশাপাশি অ্যাস্থেটিক ডার্মাটোলজি বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে রোগীর এই অতিরিক্ত লোমের চিকিৎসা করা প্রয়োজন। থ্রেডিং বা ওয়াক্সিং–পদ্ধতি প্রয়োগ করলে এই সমস্যার সমাধান হয় না; বরং তাতে লোম আরও ঘন হয়ে যায়।

প্রথম আলো:

ত্বকের নানান ধরনের সমস্যার সঙ্গেই জীবনধারার ব্যাপারটি জড়িত। এ সম্পর্কে জানতে চাই।

ত্বকের সুস্থতা এবং সৌন্দর্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নানান বিষয়েই জীবনধারা দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সময়মতো ঘুমানো, সময়মতো খাওয়া এবং শরীরচর্চা—সবই গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রতিদিন জীবনটাকে আমরা যত চ্যালেঞ্জিং হিসেবে গ্রহণ করছি, সাফল্যের বিশাল বিশাল লক্ষ্য নির্ধারণ করছি, ততই আমরা অস্বাস্থ্যকর জীবনধারার দিকে ঝুঁকে পড়ছি। তাতে ‘সাফল্য’ হয়তো ধরা দিচ্ছে; কিন্তু নানান সংকটের মুখোমুখি হচ্ছি আমরা। তাই জীবনের আর সব দিকে যেমন পরিবর্তনই আসুক না কেন, স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলোকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। এমনকি চিকিৎসার মাধ্যমে নানান সমস্যার সমাধান হলেও অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের কারণে সেগুলো ফিরে আসার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই খাবারদাবার, ঘুম এবং মানসিক প্রশান্তির ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে সব সময়।