রূপচর্চায় থাকুক প্রকৃতির ছোঁয়া
ত্বক ও চুলের যত্নে কতশত উপায়। তবু ঘুরেফিরে সেই দেশীয় পন্থাতেই ফিরতে হয়। কখনো নিম দিয়ে ব্রণ দূর করার চেষ্টা, তো কখনো ত্বকের রোদে পোড়াভাব দূর করতে ঘৃতকুমারীর রস, কখনোবা চুল ঝলমলে করতে নারকেল তেল। প্রকৃতি থেকে পাওয়া এসব অকৃত্রিম উপাদানগুলোর জাদুকরি ক্ষমতা অস্বীকার করার উপায় নেই। তালিকায় আরও আছে হলুদ, চন্দন, মুলতানি মাটি, বাদাম, আমলকী, পেঁয়াজ, আদা, আলু, বিটরুট। কত কী! এগুলোর সবই আমাদের দেশের মাটিতে জন্মে বিধায় দামেও সহজলভ্য। নিয়মিত রূপচর্চায় ব্যবহৃত ফেসওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার, তেল, বডিওয়াশ ইত্যাদির কোনটিতে কী কী প্রাকৃতিক উপাদান থাকা চাই, সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা।
অকৃত্রিম ফেসওয়াশ
ত্বকের ময়লা দূর করবে কিন্তু ত্বক শুষ্ক করবে না, আবার ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতাও বজায় রাখবে। একটি ভালো ফেসওয়াশের এই তিনটি গুণ থাকতে হবে। ত্বকের যত্নের প্রথম ধাপ হচ্ছে সঠিক উপায়ে ত্বকের ময়লা দূর করা। এ ক্ষেত্রে যদি প্রাকৃতিক উপাদানে ভরপুর একটি ফেসওয়াশ পাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই। নিম, ঘৃতকুমারী, হলুদ, মধু, চালের গুঁড়া ইত্যাদি নানা অকৃত্রিম উপাদান আছে, এমন ফেসওয়াশ আজকাল হাতের কাছেই পাওয়া যায়। রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা বলেন, প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর সবই কমবেশি অম্লীয় হওয়ায় ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করা ঠিক নয়। তবে ফেসওয়াশে এগুলোর উপস্থিতি নানা উপাদানের সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় থাকায় অম্লীয়ভাব প্রশমিত হয়ে যায়। ত্বকের সমস্যা বুঝে ফেসওয়াশে এগুলো আছে কি না, খেয়াল রাখতে পারেন। ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়ার সময় তাড়াহুড়া না করে সময় নিয়ে আলতো হাতে মালিশ করা ভালো। মালিশ করা শেষ হলে সঙ্গে সঙ্গে মুখ না ধুয়ে অন্তত এক মিনিট অপেক্ষা করার পর মুখ ধুয়ে নিন। এতে অকৃত্রিম উপাদানগুলোর উপকারিতার পুরোটাই মিলবে।
ময়েশ্চারাইজারে থাকুক নারকেল
নারকেলের গুণের শেষ নেই। রুক্ষ চুলে আর্দ্রতা ফিরিয়ে দেয় নারকেল তেল। শুষ্ক ত্বকের আর্দ্রতা ফিরিয়ে দিতে পারে নারকেলের দুধ। তাই শুষ্ক ত্বকের ক্রিম, লোশন ইত্যাদিতে কোকোনাট মিল্ক বা নারকেল দুধ থাকে। কারণ, এতে প্রচুর ভিটামিন সি এবং ই রয়েছে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ত্বককে কোমল এবং পুনরুজ্জীবিত করে। রাহিমা সুলতানা বলেন, তৈলাক্ত ত্বকে এটি ব্যবহার না করাই ভালো। বিশেষ করে মুখের ত্বকে। তবে শরীরের ত্বকে, যেমন হাত-পায়ে নারকেলের দুধসমৃদ্ধ লোশন যে কেউ ব্যবহার করতে পারবেন।
চুলের জন্য যা কিছু প্রাকৃতিক
চুল পড়া বন্ধ করতে পেঁয়াজ ভীষণ কার্যকরী। এই ভেবে অনেকেই আজকাল পেঁয়াজের রস তৈরি করে সরাসরি চুলে লাগান। এটা করা যাবে না, বলেন রাহিমা সুলতানা। পেঁয়াজের রস সরাসরি না লাগিয়ে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। বাজারে আজকাল যে পেঁয়াজের তেল পাওয়া যায়, সেগুলোতে নারকেল তেলের সঙ্গেই পেঁয়াজের রস মেশানো থাকে। চুল পড়া কমাতে এই তেল সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করলেই হবে। সুস্থ এবং সুন্দর চুলের জন্য নারকেল তেলের সঙ্গে মেথি, কারিপাতা, নিমপাতা, আমলকী ইত্যাদির মিশ্রণও উপকারী।
গোসলের জন্য
সাবানে ক্ষারের পরিমাণ কিছুটা বেশিই হয়। প্রতিদিন ব্যবহারে ত্বকের লাবণ্য নষ্ট হতে পারে। প্রাকৃতিক উপকরণে তৈরি কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করতে পারেন অথবা বডিওয়াশ। নানা ফুলের নির্যাস থেকে সুগন্ধি যুক্ত করে তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের বডিওয়াশ। ঘৃতকুমারীর রস আছে, এমন বডিওয়াশ নিয়মিত ব্যবহারে শরীরের ত্বক শুষ্ক হবে না। নিয়মিত ব্যবহারে শরীর দুর্গন্ধমুক্ত থাকবে।