ঋতুচক্রে ত্বকের রূপবদল
পিরিয়ডের সময় দেহে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের প্রভাবে ত্বকে অ্যাকনে তৈরি হয়। ত্বক থেকে তেলে নিঃসরণের পরিমাণও বেড়ে যায় এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে তৈরি হয় প্রপিওনিব্যাকটেরিয়াম অ্যাকনে। মেনস্ট্রুয়াল অ্যাকনে সাধারণত ব্লেমিশেস নিয়ে ত্বকে হাজির হয়। আর্কাইভ অব ডারমাটোলজির একটি গবেষণা বলছে, ১০০ জনে ৬৩ জন অ্যাকনে প্রবণতাসম্পন্ন নারী এ ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন।
গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ আসিফুজ্জামান পিরিয়ডকালীন ত্বকের সমস্যা বিষয়ে বলেন, মাসের এ বিশেষ সময়টাতে ত্বকে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেওয়ায় রোগীরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। অ্যাকনে সমস্যা এর অন্যতম। যাঁদের ত্বক অ্যাকনেপ্রবণ, পিরিয়ডের দিনগুলোতে তাঁদের ত্বকে অ্যাকনের পরিমাণ বেড়ে যায়। আবার যাঁদের ত্বকে মাসের অন্য সময়ে অ্যাকনে থাকে না, তাঁদের ত্বকেও এ সময় অ্যাকনে দেখা দেয়। ফাঙ্গাল ইনফেকশনে রোগীরা ভুগে থাকেন। বিশেষ করে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকে। এই সময়ে ফাঙ্গাল ইনফেকশনে আক্রান্তের পরিমাণ বেড়ে যায়।
আসিফুজ্জামান বলেন, এর বাইরে ফলিকুলেটিস নামের পিরিয়ডকালীন সমস্যা চুলের গোড়ায় সংক্রমণেও রোগী আক্রান্ত হয়ে থাকেন। পিরিয়ডকালীন ত্বকের সমস্যার সঙ্গে বিভিন্ন হরমোন যুক্ত থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো প্রকার ওষুধ সেবন না করাই ভালো। ত্বকের সমস্যায় দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং বিস্তারিত জানিয়ে সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। সমস্যা তীব্র না হলে অল্পতেই সারিয়ে তোলা সম্ভব। এর সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে।
মেয়েদের দেহে পিরিয়ডের জন্য সাধারণত ২৮ দিনের একটি চক্র হিসাব করা হয়ে থাকে। প্রথম দিন থেকে ত্বক প্রভাবিত হয় বিভিন্ন হরমোনে। এ চক্রের প্রথম অর্ধেকে সব থেকে বেশি প্রভাবিত করে ইস্ট্রোজেন হরমোন।
ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে প্রথম থেকে পঞ্চম দিন পিরিয়ড-পূর্ব সময়ে তৈরি হওয়া অ্যাকনে পরিষ্কার হতে শুরু করে। একই সঙ্গে তৈলাক্ত ভাব কমতে থাকে। এ সময়ে ত্বকে শুষ্কতা দেখা দিতে পারে। এ সময় সঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার করে নেওয়ার পর তেলহীন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। এ ছাড়া অন্য বিকল্প হতে পারে মাইসেলার অয়েল; এটি ব্যবহার করলে ত্বকের শুষ্কতা কমে আসে। মাইসেলার ওয়াটার ব্যবহার করার কারণে ত্বকের মৃত কোষসহ যেকোনো ময়লা পরিষ্কার করা সম্ভব হয় সহজে।
পিরিয়ডকালীন ত্বকের সুস্থতা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ত্বকের চাহিদা বুঝে উন্নত মানের প্রোডাক্ট সঠিকভাবে ব্যবহার করা আবশ্যক।
পিরিয়ড চলাকালে ত্বক যদি ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসে, তাহলে ত্বক আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
নিউইয়র্ক সিটির ডারমাটোলজিস্ট ফ্রান্সিসকা ফুসকো তাই জোর দিয়েছেন এ সময়ে ত্বক যথাযথভাবে পরিষ্কার রাখার বিষয়টিতে। তাঁর পরামর্শ হলো:
• হাত দিয়ে মুখের ত্বক ছুঁয়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা, ত্বকে হাতের স্পর্শের ফলে ময়লা এবং ব্যাকটেরিয়া ত্বকে পৌঁছে যেতে পারে।
• মুখের ত্বকের খুব কাছাকাছি বারবার পৌঁছে যায় মুঠোফোনের সংস্পর্শে। তাই মুঠোফোন পরিষ্কার করতে হবে বাইরে থেকে ঘরে ফিরেই। এর ফলে মুঠোফোনের স্ক্রিন থেকে কোনো জীবাণু মুখের ত্বকে পৌঁছাতে পারবে না।
• জিম করতে গেলে ফ্লোর ম্যাটে যদি কোনো কিছু অনুশীলন করার দরকার হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে নিজের কাছে একটি পরিষ্কার কাপড় রাখুন। সেটি বিছিয়ে নিন। এতে আপনি ও আপনার ত্বক থাকবে সুরক্ষিত।
• ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, নিকোটিন এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবকিছুই ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
পিরিয়ডকালে ত্বকের সমস্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরি। ত্বকের ধরন এবং পিরিয়ড চলাকালে হরমোনের প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে তারপর সমস্যার সমাধান নিয়ে ভাবতে হবে। মনে রাখতে হবে, এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ আবশ্যক।