চুলের বৃদ্ধিতে শজনে এত কার্যকর, জানতেন?
শরীরের বিভিন্ন রোগবালাইয়ের চিকিৎসায় শজনের ব্যবহার প্রাচীন চিকিৎসাপদ্ধতিতেও দেখা যায়। তবে ইদানীং শজনে ও শজনেপাতার পুষ্টিগুণ নিয়ে সচেতন সারা বিশ্ব। চুলের বৃদ্ধি ও সৌন্দর্যেও এর ব্যবহার পাচ্ছে জনপ্রিয়তা। জেনে নিন বিস্তারিত।
শজনে চুলের জন্য কেন ভালো
শজনেতে আছে ভিটামিন এ, সি, বি৬ এবং বায়োটিন। এসব ভিটামিন চুলের ফলিকলে পুষ্টি জোগায়, চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল পাতলা হয়ে যাওয়া রোধ করে। শজনেতে আছে বেশ কিছু অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান। যেমন কুয়েরসেটিন, ক্রোনোজেনিক অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন ইত্যাদি। এসব উপাদান চুলকে সুরক্ষা দেয়, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও ফ্রি র্যাডিকেলের কারণে ঝরে যাওয়ার হাত থেকে চুলকে রক্ষা করে। কেরাটিন একধরনের প্রোটিন, যা চুলের ভিত্তি তৈরি করে। শজনেতে কেরাটিনও আছে প্রচুর। তাই শজনে খেলে পাবেন সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল। শজনেতে আরও পাবেন জিংক, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেশিয়াম। জিংক চুলের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, হরমোন নিয়ন্ত্রণে রাখে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, চুলের ফলিকলের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। আয়রন মাথায় রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ফলে হেয়ার ফলিকলগুলোয় বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান পৌঁছে যায়।
চুলের বৃদ্ধিতে শজনে কীভাবে কাজে লাগাবেন
চুলের বৃদ্ধির জন্য বিভিন্নভাবে শজনে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন খাবারের মাধ্যমে, সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে কিংবা চুলের পরিচর্যায় ব্যবহার করে। আমাদের দেশে শজনে সহজলভ্য। ফলে শজনে ও শজনেপাতা দিয়ে অনেক মজাদার পদ রেঁধে খাওয়া যায়। তবে চাইলে শজনেপাতার গুঁড়াও ব্যবহার করতে পারেন।
শজনেপাতার গুঁড়া যেভাবে খাবেন
শজনেপাতার গুঁড়া কলা, আম, জাম কিংবা পালংশাকের সঙ্গে মিশিয়ে স্মুদি বানিয়ে খাওয়া যায়। পুষ্টি উপাদানে ভরপুর এই পানীয় শুধু চুলের জন্যই নয়, সামগ্রিকভাবে আপনার স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। এক চা–চামচ শজনেপাতার গুঁড়া গরম পানিতে মিশিয়ে চা তৈরি করুন। চাইলে পরিমাণমতো মধু বা লেবু মিশিয়ে নিতে পারেন। দিনে এক থেকে দুইবার এই চা খেতে পারেন। তরকারি, স্যুপ কিংবা সালাদের সঙ্গেও শজনেপাতার গুঁড়া খাওয়া যায়।
সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার নিয়ম
শজনেপাতা গুঁড়া ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট হিসেবেও খাওয়া চলে। এ ধরনের সাপ্লিমেন্ট প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম থেকে ১ হাজার মিলিগ্রাম খেলে চুল ও শরীরের জন্য উপকারী। সাপ্লিমেন্টের বোতলের গায়ে উল্লেখিত ডোজ অনুযায়ী খেতে হবে।
শজনেবীজের তেল
মরিঙ্গা অয়েল তৈরি করা হয় শজনের বীজ থেকে। সৌন্দর্যচর্চায় এই তেলের ব্যবহার বেশ পুরোনো। মরিঙ্গা অয়েলে আছে প্রচুর ভিটামিন, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি মাথার তালু ভালো রাখে, চুলের স্বাস্থ্যকর বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। মরিঙ্গা অয়েল চুলে বিভিন্নভাবে প্রয়োগ করা যায়।
সামান্য মরিঙ্গা অয়েল গরম করে, আলতোভাবে মাথার তালুতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট মালিশ করুন। এটি চুলের ফলিকলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। এই তেল মাথায় সারা রাত লাগিয়ে রাখুন, সকালে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
মরিঙ্গা অয়েলের সঙ্গে নারকেল তেল মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক তৈরি করে চুলে লাগাতে পারেন। বিশেষ করে মাথার তালুতে এবং চুলের ডগায় মাস্কটি ভালোভাবে লাগাতে হবে। মাস্কটি মাথায় ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। চুল মজবুত ও উজ্বল করতে এবং চুলের ডগা ফেটে যাওয়া রোধ করতে এই মাস্ক বিশেষভাবে কার্যকর।
শজনেপাতার নির্যাস
এটিও চুলের জন্য উপকারী। চুলের বৃদ্ধিতে বাজারের হেয়ার সেরামগুলোতেও শজনেপাতার নির্যাস ব্যবহার করা হয়। শজনেপাতার নির্যাসে ভিটামিন ও খনিজের পরিমাণ অনেক, যা আমাদের শরীর খুব সহজেই শোষণ করতে পারে। মাত্র কয়েক ফোঁটা শজনেপাতার নির্যাস খাবারে যোগ করলে কিংবা চুলে মাখলে চুলের ফলিকলের বৃদ্ধি উদ্দীপ্ত হয়।
শজনের সঙ্গে অ্যালোভেরা
শজনে ও অ্যালোভেরা একসঙ্গে ব্যবহার করলে চুলের ওপর শজনের প্রভাব আরও বাড়ে। অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বক সুস্থ রাখে, খুশকি দূর করে, সঙ্গে শজনে চুলে জোগায় পুষ্টি। অ্যালোভেরা ও শজনেপাতার গুঁড়া মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক তৈরি করুন। মাথার তালু ও চুলে লাগিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চুলের বৃদ্ধির জন্য শজনেপাতা ব্যবহারের পাশাপাশি নিয়মিত সুষম খাবার ও পানি খাওয়া এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকার কোনো বিকল্প নেই।
সূত্র: ওয়েবএমডি