মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে? ব্যবহার করুন রোজমেরি তেল, দেখুন জাদু

চুলের যত্নে যুগে যুগে নানা চিকিৎসা ও অপচিকিৎসা চলেছে। টাক এক ঘণ্টায় ঢেকে যাক, চটকদার এমন বিজ্ঞাপনও চোখে পড়ে হরহামেশা। এসব চিকিৎসা ও অপচিকিৎসায় কাজ হোক না হোক, চুলের যত্নে রোজমেরি তেল দারুণ এক দাওয়াই। দারুণ ভেষজ গুণসম্পন্ন এই তেল ব্যবহারে টাক মাথায় চুল গজায়, মাথায় থাকা চুলও থাকে ঝলমলে ও স্বাস্থ্যবান।

সৌন্দর্যসচেতন মানুষের সাজঘরে জায়গা করে নিচ্ছে রোজমেরি তেলমডেল: জাহারা মিতু ছবি: সুমন ইউসুফ

স্বাস্থ্যকর নানা সুবিধার কারণে রোজমেরি তেলের সুনাম বহু বছর ধরেই। তবে সম্প্রতি ভূমধ্যসাগর পাড়ের সুগন্ধি গুল্মটি আবার জনপ্রিয়তা পেয়েছে প্রাকৃতিকভাবে চুল বৃদ্ধির করার ‘ওষুধ’ হিসেবে। এ কারণে যাঁরা ‘বিউটি ইন্ডাস্ট্রি’তে কাজ করছেন, তাঁরা তো বটেই, সৌন্দর্যসচেতন মানুষের সাজঘরে জায়গা করে নিচ্ছে এই ভেষজ তেল।

রোজমেরিগাছ থেকে নিষ্কাশন করা এই তেল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, প্রদাহরোধী যৌগ ও প্রয়োজনীয় নানা পুষ্টিতে ভরপুর। এসব উপাদান ফলিকলের উদ্দীপনা বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

যাঁরা চুল নিয়ে নানা সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা চুলের যত্নে নিয়মিত রুটিনের মধ্যেই যোগ করতে পারেন রোজমেরি তেল। এটা হতে পারে আপনার চুল গজানো থেকে শুরু করে চুল পড়া, ফাটা রোধসহ স্বাস্থ্যকর ঝলমলে চুল পাওয়ার ভালো সমাধান।

চুল গজাতে কেন রোজমেরি তেল ব্যবহার করবেন

টাক মাথায় চুল গজাতে রোজমেরি তেল কীভাবে ব্যবহার করবেন, তা জানার আগে জেনে নেওয়া ভালো চুল গজাতে কেন রোজমেরি তেল ব্যবহার করবেন।

১. মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়: রোজমেরি তেল মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন, ফলিকলে অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদানের সরবরাহ বাড়ায়, যা চুলের বৃদ্ধি বাড়িয়ে চুলকে করে তোলে স্বাস্থ্যবান ও শক্তিশালী।

রোজমেরিগাছ থেকে নিষ্কাশন করা এই তেল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, প্রদাহরোধী যৌগ ও প্রয়োজনীয় নানা পুষ্টিতে ভরপুর
ছবি: পেক্সেলস

২. ডিএইচটি হরমোন কমায়: ডাইহাইড্রোটেস্টোস্টেরন বা ডিএইচটি হরমোন চুল পড়ার জন্য দায়ী। পুরুষের শরীরে এ হরমোনের আধিক্য ও নারীর শরীরে এর ভারসাম্যহীনতার কারণে চুল পড়ে গিয়ে টাক তৈরি হতে পারে। কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, রোজমেরি তেল শরীরে ডিএইচটি হরমোনের উৎপাদন ব্যাহত করে। ফলে চুল পড়া কমে গিয়ে উল্টো এর পুনরুৎপাদন বাড়ে।

৩. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহরোধী উপাদান: রোজমেরি তেলে প্রদাহরোধী উপাদান থাকে। এটি মাথার ত্বকে চুলকানি ও খুশকি হওয়া থেকে রক্ষা করে। এই চুলকানি ও খুশকি চুল পড়ার জন্য দায়ী। অনেক সময় মাথার ত্বকে ফ্রি র‍্যাডিক্যাল বেড়ে গিয়ে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয়। ফলে ত্বকের কোষের ক্ষতি হয়ে চুল পড়া বেড়ে যায়। রোজমেরি তেলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় তা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়।

৪. চুল শক্তিশালী করে: রোজমেরি তেল চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল ভেঙে যাওয়া ও এর আগার ফাটল রোধ করে। ফলে চুল হয় আরও স্বাস্থ্যবান ও উজ্জ্বল।

যেভাবে ব্যবহার করবেন

চুলের যত্নে আপনার নিয়মিত রুটিনের মধ্যেই নানাভাবে রোজমেরি তেল ব্যবহার করতে পারেন।

১. মাথার ত্বকে মালিশ: রোজমেরি তেল ব্যবহারের সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে মাথার ত্বকে মালিশ। যেকোনো মালিশ মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এর সঙ্গে যদি রোজমেরি তেল যুক্ত হয়, তবে ত্বক এই তেলের পুষ্টি উপাদান শোষণ করে চুল গজাতে সাহায্য করে।

যেভাবে মালিশ করবেন

  • প্রথমে অন্য বাহক তেল, যেমন নারকেল, জোজোবা অথবা জলপাইয়ের তেলের সঙ্গে পাঁচ থেকে ছয় ফোঁটা রোজমেরি তেল মেশান (বাহক তেল না মেশালে অনেক সময় অতিরিক্ত রোজমেরি তেল ত্বকের ক্ষতি করতে পারে)।

  • এবার এই মিশ্রণ মাথার ত্বক, বিশেষ করে যেখানে চুল বেশি পড়ে গেছে, সেখানে প্রয়োগ করুন।

  • এরপর আস্তে ধীরে এই তেল ৫ থেকে ১০ মিনিট ধরে বৃত্তাকারভাবে মালিশ করুন। এমনভাবে মালিশ করুন, যাতে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ার পাশাপাশি এই তেল ত্বকের ভেতরেও প্রবেশ করে।

  • এভাবে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। ভালো ফল পেতে সারা রাতও রেখে দিতে পারেন।

  • এরপর হালকা যেকোনো শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

  • এভাবে কয়েক সপ্তাহ মালিশ করুন। প্রতি সপ্তাহে কয়েক দিন। এভাবে লাগাতার। মনে রাখবেন, ধারাবাহিকতা সবচেয়ে জরুরি বিষয়। তাই ভালো ফল পেতে ধারাবাহিকতা ধরে রাখুন।

আরও পড়ুন
অন্য বাহক তেলের সাথে পাঁচ থেকে ছয় ফোঁটা রোজমেরি তেল মিশিয়ে মাথার ত্বকে মালিশ করুন
মডেল: প্রেরণা ছবি: প্রথম আলো

২. তেল দিয়ে চুল ধোয়া: রোজমেরি তেল দিয়ে চুল ধোয়া আপনার নিয়মিত রুটিনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি খাপ খেয়ে যাবে। এটি আপনার চুলকে সতেজও করবে।

কীভাবে করবেন

  • এক কাপ গরম পানিতে ৫ থেকে ১০ ফোঁটা রোজমেরি তেল ঢালুন।

  • যতক্ষণ পর্যন্ত তেল পরিপূর্ণ দ্রবীভূত না হয়, ততক্ষণ নাড়তে থাকুন।

  • চুলে শ্যাম্পু করার পর এই দ্রবণ মাথার ত্বকে, বিশেষ করে যেখানে টাক পড়ছে, সেখানে ঢালুন।

  • কয়েক মিনিট ধরে মাথার ত্বক মালিশ করুন।

  • এভাবে কয়েক মিনিট রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

  • শ্যাম্পু করার পর সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন এভাবে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে।

৩. শ্যাম্পু অথবা কন্ডিশনারের সঙ্গে: শ্যাম্পু করার পর আবার চুল ধোয়ার সময় না থাকলে শ্যাম্পু বা কন্ডিশনারের সঙ্গেও রোজমেরি তেল ব্যবহার করতে পারেন।

কীভাবে করবেন

  • আপনার শ্যাম্পু বা কন্ডিশনারের বোতলের মধ্যে ৫ থেকে ১০ ফোঁটা রোজমেরি তেল ঢালুন।

  • বোতল ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন।

  • যেভাবে নিয়মিত শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার ব্যবহার করেন, সেভাবে ব্যবহার করুন। নিশ্চিত করুন, যেন দ্রবণটি মাথার ত্বক পর্যন্ত পৌঁছায়।

  • এভাবে কোনো অতিরিক্ত সময় না দিয়েও নিয়মিত রোজমেরি তেল ব্যবহার করতে পারেন।

৪. ক্যাস্টর তেলের সঙ্গে মিশিয়ে: ক্যাস্টর অয়েল বা ক্যাস্টর তেল চুল মজবুত ও ঘন করার জন্য সুপরিচিত। তাই বেশি ভালো ফলাফল পেতে ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গেও রোজমেরি তেল ব্যবহার করা যায়।

কীভাবে করবেন

  • ২ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েলের সঙ্গে ৫ থেকে ১০ ফোঁটা রোজমেরি তেল মেশান।

  • মিশ্রণটি এবার মাথার ত্বকে, বিশেষ করে যেখানে টাক পড়ছে, সেখানে মালিশ করুন।

  • এভাবে আধা ঘণ্টা বা সারা রাত রেখে দিন।

  • এবার চুল ধুয়ে ফেলুন।

  • এভাবে সপ্তাহে এক থেকে দুবার মালিশ করুন।

রোজমেরি তেলের এসব জাদু কিন্তু ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। তাই আপনার টাক মাথা এক ঘণ্টায় অর্থাৎ রাতারাতি ঢেকে যাবে, এমন প্রত্যাশা করবেন না। ভালো ফল পেতে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরুন এবং পেয়ে যান ঝলমলে স্বাস্থ্যবান ও উজ্জ্বল চুল।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও পড়ুন