২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মেয়েদের লম্বা চুলের চল কি হারিয়ে যাচ্ছে?

লম্বা চুলের জন্য চাই বিশেষ যত্ন
ছবি : নকশা

ঘরে–বাইরে নানা কাজ, ব্যস্ততা, ছোটাছুটির কারণে এখন চুলের বাড়তি যত্ন নেওয়ার সুযোগ মেলে খুবই কম। নিয়মিত তেল মাখা থেকে শুরু করে এটা-ওটা প্রয়োগ, চুল পরিষ্কার করা, নানা রকম তেলের মালিশ করা ইত্যাদি খুবই সময়সাপেক্ষ। শুধু কি যত্ন, কোনভাবে চুল রাখলে কাকে কেমন মানাবে, তা নিয়েও যেন ভাবনার অন্ত নেই! খোলা রাখব, না খোঁপা করব? না বেণি? পনিটেইল কয়টা করলে ভালো হয়? তাই অনেকে চুল লম্বা করতে চাইলেও পারেন না। তাই কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে লম্বা চুলকে ছেঁটে ছোট করে ফেলছেন নারীরা।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সামিনা সুলতানার ছিল মাথাভরা একরাশ ঘন কালো চুল। পরপর দুটো সন্তান জন্ম দেওয়ার পর হঠাৎ দেখা গেল মাথায় শোভা পাচ্ছে শর্ট বব কাট চুল। তিনি বলেন, দুটো শিশুকে নিয়ে এতটাই হিমশিম খাই যে খাওয়া, গোসল, ঘুমেরই সময় পাই না ঠিকমতো।

গোসলের পর বড় চুল শুকাতে অনেক সময় লাগে। চুল খোলা রেখে দৈনন্দিন কাজকর্ম করা যায় না। তাই ভেজা চুলই খোঁপা করে রাখতে হয় অনেকটা সময়। গরমের দিনে চুলের কারণে মাথার ত্বক ও ঘাড় ভিজে ঠান্ডা লেগে যায়। এতে দুধের শিশুটারও ঠান্ডা লেগেই থাকে। তাই সব দিক মিলিয়ে চুলটা ছোট করে ফেললাম।’

ছোট চুল সহজে শুকিয়ে যায়, আঁচড়াতেও সময় লাগে কম
ছবি: প্রথম আলো

সামিনা সুলতানার মতো অনেক মা-ই চুল কেটে ছোট করে রাখেন। শুধু মায়েরা নন, আজকাল সব ধরনের নারীর মধ্যেই লম্বা চুলের ধারা কমে এসেছে। বর্তমান সময়ে নারীদের মধ্যে ছোট চুল রাখার চলই চোখে পড়ছে বেশি। এই রোদ এই বৃষ্টি, তার ওপর ধুলাবালু। এখন আবহাওয়াটাই এমন যে লম্বা চুলে ঝামেলা পোহাতে হয় বেশি। এ থেকে মুক্তি পেতে নারীরা চুল ছোট রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এতে আরাম ও ফ্যাশন দুটোই মেলে। তবে চুলের ফ্যাশনের সঙ্গে আরামের বিষয়টিই প্রাধান্য পায় বেশি। বিশেষত আবহাওয়ার ধরন ও নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকটাই হয়ে ওঠে মুখ্য।

দীর্ঘ চুলের আরেক অধিকারী জয়ন্তিকা রায় কাজ করেন একটি গণমাধ্যমে। কাজের প্রয়োজনে তাঁকে কর্মস্থলের বাইরে অনেক ছোটাছুটি করতে হয়, এখানে-ওখানে যেতে হয়, রোদে ও বৃষ্টিতে বাইরে থাকতে হয় অনেকটা সময়। তিনিও সম্প্রতি ব্যাংগস স্টাইলে চুল কেটে ফেলেছেন। তাঁর ঘাড়ের ওপর দোল খাচ্ছে সুন্দর একগোছা চুল।

জানতে চাইলাম, কোমর অবধি ছড়ানো চুলগুলো কাটতে তার মন খারাপ হয়েছে কি না। বললেন, ‘মোটেই না। বরং এখন আমি অনেক হালকা বোধ করছি। চুলগুলো বেঁধে রাখতে হচ্ছে না, সারা দিন দুলছে বলে মনটাও ফুরফুরে থাকছে। আর চেহারায় একটা আলাদা লুকও এসেছে। চুল কাটার পর থেকে মনে হচ্ছে, এ যেন এক নতুন আমি।’

কোমড় পর্যন্ত নয়, বরং কাঁধ অবধি এখন চুলের দৈর্ঘ্য বেশি চোখে পরে।
ছবি : কবির হোসেন

আরামের পাশাপাশি ছোট চুল নিমেষেই এনে দিতে পারে ফ্যাশনেবল লুক। এই ছোট চুলেরও আছে রকমফের। হুটহাট কোনো রকম করে চুল কেটে ফেললেই হবে না। আপনার চুলের ধরন কী রকম, তার ওপর নির্ভর করে চুলের কাট ও স্টাইল। অর্থাৎ চুল সোজা না কোঁকড়ানো, হালকা না ঢেউখেলানো, সেটা মাথায় রাখতে হবে। তা ছাড়া ব্যক্তিত্বের ধরন, আপনি কোন পেশার সঙ্গে জড়িত, এসব বিষয়ের ওপরও নির্ভর করে চুলের দৈর্ঘ্য ও ছাঁট। চুলের বিভিন্ন ধরনের কাটের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় ব্যাংগস, বব, পিক্সি ইত্যাদি।

আপনার চুলের ধরন কী রকম, তার ওপর নির্ভর করে চুলের কাট ও স্টাইল
ছবি : কবির হোসেন

যেহেতু ছোট চুলে ঝামেলা কম এবং বড় চুল ঠিকমতো খেয়াল না রাখলে অকালে ঝরে পড়ে, তাই কর্মজীবী নারীদের চুল ছোট রাখা সুবিধাজনক। ছোট চুল সহজে শুকিয়ে যায়, আঁচড়াতেও সময় লাগে কম। ছোট চুলের পেছনে খরচও কম। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালে চুল ছোট রাখলে গরম কম লাগে।

তাই বলে কি নারীদের বড় চুল হারিয়ে যাবে?

এ প্রসঙ্গে একটি রূপসজ্জা কেন্দ্রের হেয়ারস্টাইলিস্ট রিচা পাইক বলেন, তা কেন হবে? চুল তো বড় হয়। নারীদের চুল বেশ দ্রুতই বড় হয়ে যায়। সময়, সুবিধা ও প্রয়োজন বুঝে এর দৈর্ঘ্য, কাটছাঁট, সাজ সবকিছুরই বদল করা যায়। নারীর চুল তো নারীর ভেতরের আনন্দের বহিঃপ্রকাশের একটা মাধ্যম। ছোট চুল থাকুক, বড় চুলও থাকুক।