পরচুলার ক্রেতা বাড়ছে দিন দিন

পরচুলার ব্যবহারে পুরো সাজেই চলে আসে ভিন্নতামডেল: অভিনেত্রী বিদ্যা সিনহা মিম, ছবি: প্রথম আলো

মাথাভর্তি চুল থাকলে যেকোনো স্টাইলেই সাজা যায়। চুল না থাকলেও আছে সমাধান। পরচুলা ছাড়াও আসল চুলের ওপরে আটকে দিতে পারেন নকল খোঁপা বা বেণি। নকল চুলের মান যত ভালো হবে, তত বেশি আসলের মতো লাগবে। বাজার ঘুরলেই টের পাবেন পরচুলার কত রূপ। দেশি ও বিদেশি দুই রকমই আছে। দেশীয় আলগা চুলের মধ্যে মূলত চিকন প্লাস্টিকের ব্যবহার থাকে বেশি। এ কারণে চকচক করে বেশি। আমদানি করা পরচুলাগুলোর অধিকাংশ সিনথেটিক তন্তু দিয়ে বানানো হয় বলে চকচকে এবং অনুজ্জ্বল ম্যাট, এই দুই ধাঁচেরই পাওয়া যায়।

অনেকে রঙিন পরচুলাও কেনেন
কৃতজ্ঞতা: দিপাস কালেকশন, , ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ঢাকার নিউমার্কেট লাগোয়া নূর ম্যানশনের নিচতলায় গেলে দেখতে পাবেন সাজানো সারি সারি দোকানে পরচুলার পসরা। চুলের গুণগত মান, দৈর্ঘ্য আর উজ্জ্বলতার ভিত্তিতে দাম। নূর ম্যানশনের ল্যাকমি স্টোরের স্বত্বাধিকারী ওয়াসিম আকরাম জানান, চকচকে পরচুলাগুলো দেখলেই মনে হয় নকল। অন্যদিকে ম্যাট, অনুজ্জ্বল চুলগুলো দেখতে হুবহু আসল চুলের মতো, দামও তাই খানিকটা বেশি। বেশির ভাগ পরচুলা আসে চীন থেকে। এ ছাড়া কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকেও প্রাকৃতিক পরচুলাসহ নানা ধরনের আলগা খোঁপা, বেণি আনা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ঢাকার চকবাজারের আমদানিকারকদের কাছে থেকে এসব পরচুলা সংগ্রহ করেন বলে জানান ওয়াসিম আকরাম।

ম্যাট, অনুজ্জ্বল চুলগুলো দেখতে হুবহু আসল চুলের মতোই লাগে
ছবি: প্রথম আলো

পরচুলার ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে নৃত্যরং কালেকশনের স্বত্বাধিকারী মো. রাফসান বলেন, দেশি পরচুলা মূলত চুলের কাটের নমুনা হিসেবে ডামি পুতুলে ব্যবহৃত হয়। আমদানি করা ভালো মানের আলগা চুলের ক্ষেত্রে নকশা হয় দুই ধরনের। সিঁথিসহ পুরো মাথার চুল এবং ক্লিপ দিয়ে আটকানো যায় এমন অর্ধেক মাথার চুল। সিঁথিসহ পুরো মাথার পরচুলাগুলো দিয়ে সুবিধামতো চুলের স্টাইল করা যায়, ধোয়া যায়, আঁচড়ানো এবং হেয়ার আয়রনের মতো যন্ত্রপাতিও ব্যবহার করা যায়। তবে সিঁথি ছাড়া ক্লিপে আটকানো চুলে বিভিন্ন চুলের স্টাইল করা গেলেও পানি লাগানো যাবে না।

দামের তারতম্য

ভালো মানের পরচুলার দাম বেশি
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ঢাকার নিউমার্কেট, নূর ম্যানশন, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরের আশপাশে দোকান ঘুরে আলগা চুলের দামের ক্ষেত্রে বেশ তারতম্য লক্ষ করা গেছে। দেশীয় অপ্রাকৃতিক পরচুলার মূল্য ৩০০ টাকা শুরু করে ১ হাজার টাকা। প্রাকৃতিক চুল দিয়ে বানানো পরচুলা দুই হাজার টাকা থেকে শুরু। চুলের দৈর্ঘ্য যত বৃদ্ধি পায়, দামও তত বাড়তে থাকে। বাইরের আমদানি করা পুরো মাথার চুল ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকা। ক্লিপে আটকানো অর্ধেক আলগা চুল ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যেই মিলবে। সব পরচুলা খোলা অবস্থায় পাওয়া যায়, যাতে ব্যবহারকারীরা পছন্দমতো স্টাইল করে নিতে পারেন। আবার তৈরি করা বেণি, খোঁপা, ম্যাগি পরচুলা, কোঁকড়া পরচুলাও রয়েছে। দাম পড়বে ১০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে। বাহারি চুলের সাজের জন্য বিভিন্ন আকৃতির ডোনাট স্পঞ্জও মিলবে ৪০-৩০০ টাকায়।

এদিকে মোহাম্মদপুরের দিপাস কালেকশনের স্বত্বাধিকারী শাকিরা শাহরীন বলেন, ‘দিন দিন পরচুলার ক্রেতা বাড়ছে। নারীরা বেশি কিনলেও পুরুষেরাও আলগা চুলের দিকে হাত বাড়াচ্ছেন। যাঁরা বিনোদনজগতের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরাই আমার পরচুলার মূল খদ্দের। সব সময় বিক্রি হলেও বিয়ের মৌসুমে পরচুলার চাহিদা থাকে সর্বাধিক।’

কোঁকড়া পরচুলাও কিনতে পাওয়া যায়
কৃতজ্ঞতা: দিপাস কালেকশন, ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আলগা চুলের নানা রকম ডিজাইন আনছেন বিক্রেতারা। তা ছাড়া কোনো ক্রেতা তাঁর মনের মতো পরচুলার নকশা দিলে সেটিও সংগ্রহ করে দেওয়া যাবে, তবে সময় একটু বেশি লাগবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।