এই সময় ত্বক ও চুলের যত্ন নেবেন যেভাবে
গরমের হালকা আঁচ চলে এসেছে আবহাওয়ায়। পর্যাপ্ত ঘুম, আরামদায়ক পোশাক, ত্বক এবং চুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এ সময়। ব্যস্ততার মধ্যেও যত্ন নিতে হবে নিজের।
বাতাসে গরমের হালকা আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। আবার রাতের বুকে খানিকটা হিম বুঝি আজও জমা আছে। আবহাওয়ার এই বৈপরীত্যের মধ্যে সুস্থ থাকতে নিজের যত্ন নিতে হবে। ব্যস্ততার মধ্যেও নিজেকে একটু সময় দিন। হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা জানালেন, পর্যাপ্ত ঘুম, আরামদায়ক পোশাক, ত্বক ও চুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এ সময়। ত্বকের ধরন বুঝে বেছে নিতে হবে ময়েশ্চারাইজার।
দিনে ও রাতে দুই ভাগে মোট ছয়টি ধাপে ত্বকের যত্ন নিতে পারেন এ সময়। সকালের প্রথম ধাপ ত্বক পরিষ্কার করা। এরপর ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পালা। বসন্তের রোদের পরশ ভালো লাগলেও কিন্তু নিয়মমাফিক সানস্ক্রিনসামগ্রী ব্যবহার করতেই হবে। এটি ত্বকের যত্নের তৃতীয় ধাপ। রাতের যত্নের প্রথম ধাপও ত্বক পরিষ্কার করা। দ্বিতীয় ধাপে আছে টোনার। বাড়ির সাধারণ উপকরণই টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। শুষ্ক ত্বকের টোনার হতে পারে তরল দুধ। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য আবার শসার রস দারুণ টোনার। তৃতীয় ধাপ অবশ্য প্রয়োজনমাফিক। এটি হলো সিরাম ব্যবহার। সিরাম প্রয়োগের পর জেড রোলার বা গুয়াশা ব্যবহার করা ভালো। চতুর্থ ধাপে আছে ময়েশ্চারাইজার। পঞ্চম ধাপে লিপবাম। এমনটাই বলছিলেন লুসেরো বাই ইশরাত-এর স্বত্বাধিকারী ইশরাতুল শোভা।
বাড়িতেই তৈরি করতে পারেন ক্লিনজার ও সিরাম
ত্বকের অবস্থা বুঝে ক্লিনজার ও সিরাম বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা। চাইলে কিন্তু বাড়িতেও এমন ক্লিনজার ও সিরাম তৈরি করতে পারেন, যেগুলো সব ধরনের ত্বকেই প্রয়োগ করা যায়, জানালেন রাহিমা সুলতানা।
ক্লিনজার তৈরির জন্য চালনিতে চেলে নিন মসুর ডালের বেসন। যতটা বেসন নেবেন, ততটাই নিন শসার রস। একই পরিমাণ ডাবের পানি নিন। সব উপকরণ মিশিয়ে কিউব আকারে ডিপফ্রিজে রেখে দিন। এক সপ্তাহ ব্যবহার করতে পারবেন। একটি কিউব বের করে মুখে ঘষলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। হাতে সময় থাকলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলার আগে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
সিরামের জন্য সিকি কাপ তিসি আর সিকি কাপ চাল একসঙ্গে নিয়ে অন্তত দুই কাপ পানিতে সেদ্ধ করতে হবে। পুরু পেস্টের মতো হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে মার্কিন কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিন। পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে এলে দুটি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের নির্যাস যোগ করুন। এই সিরাম কাচের কৌটায় ফ্রিজে রেখে সাত দিন দিতে পারেন।
ত্বক বুঝে ফেসপ্যাক
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য দেড় চা-চামচ বেসন এবং আধা চা-চামচ মধু নিন। সঙ্গে কাঁচা হলুদের রসও নিন আধা চা-চামচের একটু কম। সব উপকরণ মিশিয়ে নিলেই হয়ে যাবে দারুণ প্যাক। ত্বকে দৃশ্যমান ছিদ্র (পোর) না থাকলে এই প্যাকে যোগ করতে পারেন কয়েক ফোঁটা লেবুর রস।
শুষ্ক ত্বকের জন্য একমুঠ চাল সেদ্ধ করে ব্লেন্ড করে নিন। তাতে যোগ করুন ২ চা-চামচ দুধ। সঙ্গে কাঁচা হলুদের রসও নিন আধা চা-চামচের একটু কম।
মিশ্র ত্বকের জন্যও একমুঠ চাল সেদ্ধ করে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তবে এতে যোগ করতে হবে কেবল আধা চা-চামচ মধু।
যাঁদের ব্রণ আছে, তাঁরা দুই চা-চামচ দুধের সঙ্গে এক চা-চামচ মধু মিশিয়ে নিন। কাঁচা হলুদের রসও নিন আধা চা-চামচের একটু কম।
স্ক্র্যাবিং করতে
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এক চা-চামচ চালের গুঁড়া আর দুই চা-চামচ বেসন মিশিয়ে নিয়ে প্রয়োজনমতো পানি যোগ করুন।
শুষ্ক ত্বকের জন্য চালের গুঁড়ার সঙ্গে পরিমাণমতো দুধ মিশিয়ে নিয়েই স্ক্র্যাব তৈরি করা যায়।
মিশ্র ত্বকের জন্য এক চা–চামচ গুঁড়া কফি আর আধা চা–চামচ চালের গুঁড়ার সঙ্গে প্রয়োজনমতো পানি মিশিয়ে স্ক্র্যাব তৈরি করতে হবে।
চুলের যত্নে
চুলের পুষ্টির জন্য সপ্তাহে দু-তিন দিন নারকেল তেল মালিশ করুন। ২০-৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন। খুশকি থাকলে চুলের গোড়ায় লেবুর রস ঘষে এরপর নারকেল তেল মালিশ করুন। এ ছাড়া চুলের ধরন অনুযায়ী কিছু হেয়ারপ্যাক তৈরির পদ্ধতি জেনে নিন:
রুক্ষ-শুষ্ক চুলের জন্য একটা মাঝারি আকারের কলার সঙ্গে তিন-চার চা-চামচ কাঠবাদামের তেল মিশিয়ে নিন।
নিষ্প্রাণ, জমাটবাঁধা ভাব চলে এলে একটা মাঝারি আকারের কলা, তিন চা-চামচ টক দই আর একটা ডিম মিশিয়ে নিন।
চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা এড়াতে প্যাক তৈরির জন্য মেথিগুঁড়ার সঙ্গে প্রয়োজনমতো জলপাই তেল মিশিয়ে নিন।
চুলের আগা ফেটে গেলে টক দইয়ের সঙ্গে প্রয়োজনমতো জলপাই তেল মিশিয়ে নিন।
রেশমি চুল পেতে একমুঠ চাল সেদ্ধ করে নিন। এর সঙ্গে যোগ করুন একটি অ্যালোভেরার নির্যাস এবং দুই চা-চামচ জলপাই তেল।
মাথার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়, তাহলে এক চা-চামচ মধুর সঙ্গে আধা চা-চামচের একটু কম পরিমাণ লেবুর রস যোগ করে নিন।
চুলের আরও কিছু প্যাক
চুলের যত্নে কেমন প্যাক ব্যবহার করা ভালো, এ প্রসঙ্গে আরও জানালেন রাহিমা সুলতানা।
অ্যালোভেরা মণ্ড নিন সিকি কাপ। সঙ্গে নিন সিকি কাপ টক দই আর একখানা ডিম। মেথিগুঁড়া আর আমলকীগুঁড়াও নিন এক টেবিল চামচ করে। সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ড করলেই হয়ে যাবে দারুণ এক হেয়ারপ্যাক। এই প্যাক
যেকোনো ধরনের চুলেই প্রয়োগ করা যাবে।
কোঁকড়া চুলের কোমলতা এবং উজ্জ্বলতার জন্য অন্য একটি প্যাকও লাগানো যেতে পারে। এ জন্য সমপরিমাণ তিসি এবং চাল নিন। চালের চার গুণ পরিমাণ পানি নিয়ে আলাদাভাবে সেদ্ধ করে গুঁড়া করে নিন। তিসির চার গুণ পরিমাণ পানি নিয়ে আলাদাভাবে জ্বাল দিয়ে জেল তৈরি করুন। এরপর একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। ঠান্ডা অবস্থায় এতে একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের নির্যাস যোগ করুন।