মেকআপ ছাড়াই সুন্দর দেখানোর ৮ উপায়

নিত্যদিনের জীবনযাপনে বা বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানে নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য আমাদের কত–না চেষ্টা। আর এই চেষ্টার বড় একটা অংশজুড়ে থাকে হরেক রকম মেকআপসামগ্রী, নানা রকম রাসায়নিক। এসবের প্রয়োগে উল্টো ত্বকেরই বারোটা বেজে যায়। অথচ ত্বকের ধরন যেমনই হোক না কেন, সৌন্দর্যবর্ধক পণ্য ছাড়াই যত্ন নেওয়া যায়। কারণ, সৌন্দর্যের মূল রহস্য হলো সুস্থতা। চলুন জেনে নেওয়া যাক, সুস্থতার সঙ্গে সুন্দর থাকার ১০টি বুদ্ধি।

স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার কোন বিকল্প নেই
ছবি: পেক্সেলস

১. পুষ্টিকর খাবার

সব ধরনের ত্বক ও শারীরিক গঠনের মানুষের জন্যই অতিরিক্ত তেল, ভাজা–পোড়া, চিনি, লবণ, চর্বি ও অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট ক্ষতিকর। শরীরের স্থূলতা ও মুটিয়ে যাওয়ার পেছনে মূলত এসব খাবারই দায়ী। ব্রণসহ ত্বকের নানা রকম উটকো ঝামেলা তৈরি করে এসব খাবার। এ ছাড়া অতিরিক্ত চিনি ও লবণ রক্তে শর্করা বৃদ্ধি করে, বাড়ায় রক্তচাপ। এতে শরীরে ও চেহারায় ছাপ পড়ে, বলিরেখা বাড়ে। ত্বকের নিচে জমে বাড়তি মাংস ও চর্বি।

স্বাস্থ্যকর ত্বক ও চুলের জন্য সুষম খাদ্য অপরিহার্য। ত্বকের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ভিটামিন দরকার। তবে তার জন্য নিত্যনতুন খাদ্য সম্পূরক গ্রহণ বা হরেক রকম রসনাবিলাসের প্রয়োজন নেই। খাদ্যতালিকায় স্বল্পমূল্যের তাজা ফল ও শাকসবজি রাখুন, যা আপনার ত্বককে পুষ্ট ও সজীব রাখবে। দেহকে ডিটক্সিফাই করতে গ্রিন টি, আদা-চা, লেবু চায়ের মতো প্রাকৃতিক পানীয় রাখতে পারেন। খাবারের পর দই হজমে সাহায্য করে, ভালো রাখে অন্ত্রের স্বাস্থ্য। ফলে ত্বক হয় পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যবান।

২. পর্যাপ্ত পানি খান

পানি হলো সব ধরনের সুস্থতার পূর্বশর্ত। ত্বকসহ পুরো শরীরের কোষগুলো সতেজ রাখার পাশাপাশি দেহের যাবতীয় বর্জ্য পদার্থ অপসারণের কাজও করে পানি। এসব বর্জ্য পদার্থের বড় অংশ হলো অ্যামোনিয়া, যা শরীরে জমে থাকলে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ সৃষ্টি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগায়। ফলে ত্বকে ব্রণ, ফুসকুড়ি, ছোপ ছোপ দাগ, মলিনতাসহ দেহে স্থূলতাও দেখা দেয়। কাজেই নিয়মিত ত্বকের বর্জ্য পদার্থ অপসারণের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা দরকার।

৩. ঘাম ঝরান

দেহের বর্জ্য পদার্থগুলোর একটা বড় অংশ ঘাম হয়ে বেরিয়ে যায়। ত্বকের নিচে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদানগুলো বের হয় লোমকূপের মাধ্যমে ঘাম হিসেবে। তাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দৈনন্দিন কার্যক্রমের মাধ্যমে শরীর থেকে ঘাম ঝরাতে হবে।
শরীরচর্চা দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, বজায় রাখে হরমোনের ভারসাম্য। শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। সম্ভব হলে প্রতিদিন দৌড়ান। নিদেন হাঁটুন। ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। এ জন্য রোজ জিমে যাওয়া, বাড়িতে ট্রেডমিল রাখা, বিরাট আয়োজন বা অনেক পয়সাকড়ি খরচ করার প্রয়োজন নেই। রোজ ঘুম থেকে উঠে এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১০ মিনিট করে যোগব্যায়াম করতে পারেন।
মাঝেমধ্যে দড়ি লাফ ও খালি হাতের শরীরচর্চা করতে পারেন। পাঁচ থেকে ছয় তলায় ওঠা-নামা করতে লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।

চুলের সুস্থতার মূল কথা হলো পরিচ্ছন্নতা
ছবি: প্রথম আলো

৪. হাসুন প্রাণ খুলে

হাসি আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদগুলোর একটি। চিকিৎসকেরা বলেন, হাসির মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে প্রচুর পরিমাণ রক্ত সঞ্চালিত হয়, ফুসফুসে অক্সিজেনের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, দ্রুতগতিতে সংকুচিত ও প্রসারিত হয় পেটের পেশি। এ ছাড়া চোয়ালের ব্যায়ামের জন্য হাসি একটি কার্যকর স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া। মোটের ওপর বলা চলে, হাসি নিজে নিজেই একটি উৎকৃষ্ট ব্যায়াম, যার মাধ্যমে যথেষ্ট ক্যালরি পোড়ে। এতে চোয়ালের ব্যায়ামও হয়, যা চেহারার গঠন সুন্দর রাখতে ও ত্বককে সতেজ রাখতে বড় ভূমিকা পালন করে। তাই মনভরে প্রাণখুলে হাসুন।

৫. চুল পরিষ্কার রাখুন

চুলের সুস্থতার মূল কথা হলো পরিচ্ছন্নতা। চুল পরিষ্কার থাকলেই সুন্দর থাকে। নিজের চুলের ধরন বুঝে নিয়মিত শ্যাম্পু বা রিঠার মতো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে চুল পরিষ্কার রাখুন। মাঝেমধ্যে চুলে তেল দিন। ঘর্মাক্ত অবস্থায় বা গোসলের পর ভেজা চুল বেঁধে রাখবেন না। এতে চুলের ডগা ফেটে যায়, জন্ম নিতে পারে ব্যাকটেরিয়া। ফ্যানের বাতাস বা প্রাকৃতিকভাবে সাধারণ কক্ষ তাপমাত্রায় চুল শুকাবেন। হেয়ার ড্রায়ারে চুল ও মাথার ত্বক উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘুমানোর সময় আলতো করে চুল বেঁধে ঘুমাবেন। বাইরে গেলেও চুল বেঁধে রাখাই ভালো। এতে করে চুলের ভেতর ময়লা প্রবেশ করে কম।

৬. পোশাক হোক পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক

পোশাক বর্ণিল বা কারুকার্যময় হওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিষ্কার ও স্বস্তিদায়ক হওয়া। পোশাকে ময়লা থাকলে পোশাকের ভেতর বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়, যাতে ত্বকে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পোশাকের উপাদান হতে হবে আবহাওয়া ও মৌসুম উপযোগী। যেমন গরমের দিনে সুতির কাপড় পরলে ত্বকে গ্যাস ও জলীয় পদার্থের আদান–প্রদান ব্যাহত হয় না।

পোশাক হোক পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক
ছবি: প্রথম আলো

৭. গভীর ঘুম

সুস্থতা ও সৌন্দর্যের অন্যতম সহায়ক ঘুম। পর্যাপ্ত ঘুম শুধু চোখের নিচের কালো দাগ বা ত্বকের ছোপ ছোপ দাগই দূর করে না, বরং কোলাজেন উৎপাদনের মতো বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করতেও সাহায্য করে। রোজ রাতে ছয় থেকে আট ঘণ্টার ভালো ঘুম দেহের ক্লান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো সারিয়ে তোলে। ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং নতুন শক্তি দান করে।

৮. ইতিবাচক চিন্তা করুন

মুখ হলো মনের দর্পণ। মনের সুস্থতা চেহারায় ফুটে ওঠে। তাই মন ভালো রাখুন। আপনি যদি নিজের মনের ভেতরে ভালো অনুভব করেন, তাহলে আপনার চেহারায় তা প্রকাশ পাবে। বন্ধু বা স্বজনসহ পছন্দের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান, বেড়াতে যান, খেলাধুলা করুন, বই পড়ুন, নাটক, চলচ্চিত্র দেখুন, উৎসব, প্রদর্শনী, ছোট–বড় আয়োজন বা অনুষ্ঠানে যান। আপনার যদি একা থাকতে ভালো লাগে, তাহলে একা থেকেই নিজের ভালো লাগার উপাদানে জীবনটাকে ভরিয়ে তুলুন। আত্মবিশ্বাস, ইতিবাচক চিন্তা—আপনাকে সব সময় সুন্দর রাখবে।


সূত্র: পিঙ্কভিলা