যেভাবে সুপারফিট নাজিফা তুষি
ইনস্টাগ্রামে নাজিফা তুষির ছবি দেখে মুগ্ধ হওয়াটা স্বাভাবিক। রূপে–গুণে প্রতিনিয়ত ভক্তদের চমকে দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। এক দশক ধরে বাংলাদেশের বিনোদন দুনিয়ায় কাজ করছেন। তবে এই তুষিই সবার সেরা। তাঁর চেহারার গড়ন, ত্বকের সৌন্দর্য, চুলের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য, ফিটনেস—সবকিছুর রহস্য জানতে চান ভক্তরা। সাক্ষাৎকারে তুষি জানালেন তাঁর প্রতিদিনের রূপ-রুটিন।
কোল্ড ড্রিংকস, দুধ–চা খান না
আপনি যদি প্রশ্ন করেন, নাজিফা তুষির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কী? উত্তর আসবে দুটি—খাওয়া আর ঘুম। নাজিফা বলেন, ‘এই দুটো ঠিক না থাকলে আমার মাথা কাজ করে না। মানুষ যা খায়, তার সবকিছুতেই সেটার প্রতিফলন থাকে। তাই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের একদম প্রথম কথাটিই হলো স্বাস্থ্যকর খাবার।’
* তুষি সকালে উঠেই খান রাতে ভিজিয়ে রাখা ত্রিফলা (আমলকী, হরীতকী, বহেড়া) বা চিরতাজাতীয় খাবার।
* বাজার করতে খুবই ভালোবাসেন তুষি। যেখানে যেটা ভালো পাওয়া যায়, সেখান থেকে সেটা কেনেন। তাজা খান। কেননা, নিজেকে সতেজ রাখার জন্য তাজা খাবার খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
* কোল্ড ড্রিংকস, দুধ–চা, চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার তুষি খান না। খান ঘরে রান্না করা খাবার। পারতপক্ষে বাইরের খাবার খান না তিনি।
* দিনে আড়াই লিটার পানি খান তুষি।
* ভাত, শাকসবজি, ফল খান। শর্করাজাতীয় খাবার কম খান। আমিষ আর ভিটামিন বেশি পাওয়া যাবে, এমন খাবার বেশি খান।
* রাতে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমান।
ফুলের তেল মাখেন
ত্বকের যত্নে কোন তিনটা ব্যাপার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, জানতে চাইলে তুষি বলেন, ‘প্রথমত, ত্বক পরিষ্কার রাখা। দ্বিতীয়ত, আর্দ্রতা ধরে রাখা। তৃতীয়ত, রোদে গেলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা।’ বড় পর্দার ‘গুলতি’ আলাদাভাবে ত্বকের যত্ন নেন না। কেননা, ত্বকের যত্নকে তিনি রীতিমতো জীবনযাপনের অংশ বানিয়ে নিয়েছেন।
১. যেকোনো অভিনয়শিল্পীর মতো তুষিও মেকআপ করলে ঠিকমতো সেটা তোলেন। প্রথমে তেলজাতীয় কিছু দিয়ে মেকআপ তোলেন। তারপর স্ক্র্যাব করে মুখ ধুয়ে নেন, যাতে ত্বকের গভীর থেকে মেকআপে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে আসে।
২. ত্বকের জন্য ভিটামিন সি ও ময়েশ্চারাইজার খুবই জরুরি। ত্বকে বিভিন্ন ধরনের তেল ব্যবহার করেন তুষি। নিমের তেল, মিল্ক অয়েল, গোলাপের তেলসহ বিভিন্ন ফুলের তেলও ব্যবহার করেন। রাতে ঘুমানোর আগে মুখে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে উঠে মুখ ধুয়ে ফেলেন। ফলে সারা রাত মুখ আর্দ্র থাকে, আবার প্রয়োজনীয় ভিটামিনও পায়।
৩. এই অভিনয়শিল্পী লোশন খুবই কম ব্যবহার করেন। কেননা, তাতে লোমকূপের মুখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া রাসায়নিকে বিশ্বাস করেন না তুষি। রূপচর্চায় ভরসা রাখেন প্রাকৃতিক উপাদানে।
৪. সকালে উঠে ত্বকের ওপর ধীরে ধীরে বরফ বুলিয়ে নেন তিনি।
৫. দিনে দুইবার সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন।
৬. গোসলের আগে মাঝেমধ্যে মুখ ও সারা শরীরে মুলতানি মাটি, দুধ, মধু, কাঁচা হলুদ, কমলার খোসার পেস্ট—এসব প্রাকৃতিক উপাদান মিশিয়ে ব্যবহার করেন। স্ক্রাব করার জন্য ব্যবহার করেন চালের গুঁড়া, বাদামের গুঁড়া, কফি ইত্যাদি।
৭. রঙিন যেসব ফল খান, সেগুলোর অনেক কিছুই মুখে লাগান। যেমন আম, কলা, পাকা পেঁপে ইত্যাদি। এতে ভিটামিন পায় ত্বক।
রাসায়নিক আর মেশিনের স্পর্শ থেকে দূরে রাখেন চুল
চুলের যত্ন কীভাবে করেন, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তুষি চুলের যত্নে কী কী করেন না। চুলে রং করান না তুষি। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া আয়রন, ব্লো ডাই করান না। পারতপক্ষে চুল মেশিনের স্পর্শমুক্ত রাখেন। চুলের যত্নে কী করেন তুষি? দুই দিন পরপর অর্গানিক শ্যাম্পু ব্যবহার করেন। হুটহাট চুলে কাটও করান না। তেল, পেঁয়াজ, অ্যালোভেরা, টক দই, ডিম—সপ্তাহে এর যেকোনো একটা কিছু ঘুরিয়েফিরিয়ে ব্যবহার করেন। তেল মালিশ করেন। তাতে রক্তসঞ্চালন ভালো হয় এবং চুলের স্বাস্থ্য ঠিক থাকে।
মাসল মেমোরি দীর্ঘদিনের
পরিপাকক্রিয়া থেকে শুরু করে রাতের ঘুম—শরীরের সব কার্যক্রম সঠিকভাবে চলার জন্য শারীরিক পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। বহু বছর ধরেই জিম করেন তুষি। ওয়েট লিফটিং, কার্ডিও, অ্যারোবিকস, পিলাটিস বা জুম্বা এবং যোগব্যায়ামও করেন। তুষি বলেন, ‘শুরুর প্রায় পাঁচ বছর নিজের শরীরের ধরন না বুঝেই সবাই যা করেন, সে রকম ব্যায়াম করেছি। এরপর আমার যেটা দরকার, পেশির ধরন বুঝে যে পেশির জন্য যে ব্যায়াম, সেগুলো করি। এখন আমার মাসল মেমোরি দীর্ঘদিনের, তাই কিছুদিন ব্যায়াম না করলেও হুট করে শরীরের কাঠামো বা ফিটনেস নষ্ট হয়ে যায় না।’
শরীরের ফিটনেসের জন্যই শুধু নয়, বরং ত্বকের উজ্জ্বলতা আর সারা দিন শক্তি নিয়ে কাজ করার জন্যও ব্যায়াম করেন তুষি। ব্যায়ামের পর শরীরের লোমকূপ দিয়ে ঘাম, আর ঘামের ভেতর দিয়ে বিষাক্ত উপাদান বের হয়ে যায়। গোসল করার পর যে সতেজ ফুরফুরে ভাবটা আসে, তাতে সারা দিনের সবকিছু খুব সহজেই সামাল দেওয়া যায়। এই সবকিছুর পাশাপাশি তুষি সব সময় ইতিবাচক চিন্তা করেন। দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপনের চেষ্টা করেন। প্রতিদিন ভোরের রোদ গায়ে মাখেন, প্রকৃতি, পোষা প্রাণী আর গাছের সঙ্গে সময় কাটান।